ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪ ২১:৪৬ Asia/Dhaka

অফিসে অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর প্রতিদিন সবাইকে সালাম দিন, শুভেচ্ছা বিনিময় করুন, পরস্পরের খোঁজ-খবর নিন- এটা নিজেদের মধ্যকার হৃদ্যতা বাড়ায় যা অফিসের কর্মীদের পরস্পরের প্রতি সহমর্মী করে তোলে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন।

সবসময় খেয়াল রাখুন যেন আপনার মুখ, শরীর, পোশাক ও মোজা থেকে কোনো বিকট গন্ধ না বের হয়। কারণ এই বিষয়গুলো আপনার ব্যক্তিত্বের উপরও দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। তাছাড়া অফিসে নিজের টেবিলটা সবসময় পরিষ্কার করে রাখুন। টেবিলে আপনি যাই রাখন না কেন খুব গুছিয়ে এবং পরিষ্কার করে রাখুন। যাতে আপনার জন্য অফিসের পরিবেশে কোনো অসামঞ্জস্য দেখা না দেয়। সর্দি হলে, হাঁচি দিলে, চোখের কোনো অসুখ হলে অথবা অন্য কোনো ছোঁয়াচে রোগ হলে অফিসে না আসাই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ, এতে অফিসের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়। অন্যদেরও একই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও যদি আপনার কাজটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে বাড়িতে বসে কাজটি করুন অথবা সেই দিনগুলোতে ভালোভাবে বিশ্রাম নিন।

মানুষ নানা বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। অনেকেই আছেন যাদের অভ্যাস হলো- কথা বলতে বলতে কাজ করা। এই অভ্যাসের কারণে এ ধরণের ব্যক্তিদের নিজের তেমন ক্ষতি হয় না, কারণ তারা কথা বলতে বলতে কাজ করলে খুবই ভালো কাজ করতে পারে।  কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি যদি আপনার সহকর্মীদের সাথে কথা বলতে বলতে কাজ করেন তাহলে তারা কি সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারবে? তারা পারবে না, তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটবেই। পৃথিবীর খুব অল্পসংখ্যক মানুষই কথা ও কাজ একসাথে করতে পারেন, বরং বেশিরভাগ মানুষ শান্ত পরিবেশে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে তাদের কাজের ফলাফল ভালো হয়। তাই নিজের সুবিধার জন্য অন্যদের কাজে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। সবাইকে যার যার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ করে দিন। একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গেলে অনেক সময় সহকর্মীদের সাথে ঝগড়া ও মনোমালিন্য হয়, যা প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটায়। সব সময় সহকর্মীদের প্রতি সদয় হোন। পরস্পরের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে থাকলে অধস্তনদের প্রতি সদাচরণ করুন, ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা না করে অফিসের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সাধনকে গুরুত্ব দিন।

কর্মক্ষেত্রে বা যেকোনো যেনতেন জায়গায় বিশেষকরে চলার পথে বিশেষ করে সিড়িতে দাঁড়িয়ে কারও সঙ্গে কথা বলে অন্যদের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকুন। অফিসে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের এবং মহিলাদের প্রতিও যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে। জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি অথবা মহিলাদের দণ্ডায়মান রেখে নিজে বসে কথা বলা শিষ্টাচারের পরিপন্থী। সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের প্রবণতা এবং অন্যের কৃতিত্ব অবৈধভাবে গ্রহণ করার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। নিজের যোগ্যতা জাহির করার জন্য অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার প্রবণতা থেকে বিরত থাকুন। নিজের যোগ্যতা নিজে প্রমাণ করার জন্য বাড়াবাড়ি না করে অন্যদের তা স্বাভাবিকভাবে দেখতে দিন। সহকর্মীর সম্পর্কে নেতিবাচক সমালোচনা তথা ছিদ্রান্বেষণ থেকে বিরত থাকতে হবে। চালাকি, ধৃষ্টতা বা দম্ভের ভাব দেখানো উচিৎ নয়, তাতে সহকর্মীদের নিকট অপ্রিয়ভাজন হতে হয়। না বলার কৌশল বা আর্ট জানতে হবে এবং আবশ্যক ক্ষেত্রে কৌশলে দৃঢ়তার সাথে অসম্মতি জ্ঞাপন করার সাহস থাকতে হবে। বন্ধু বা সহকর্মীর অনুপস্থিতিতে তার বাসায় যাতায়াত বা আড্ডা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। এর ফলে অনেক ঝামেলা এড়াতে পারবেন খুব সহজেই।

কখনো স্বজনপ্রীতি দেখাবেন না। আপনার অধস্তনরা যদি মনে করে যে, আপনি ন্যায়পরায়ণ-নন কিংবা পক্ষপাতিত্ব করছেন তাহলে তারা আপনার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। অপ্রয়োজনে কোথাও আপনার মতামত প্রকাশ করবেন না । নিজের কাজের প্রচার না করে নীরবে কাজ করে যান। উচ্চস্বরে কথা বলবেন না, তা শিষ্টাচার নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কোন ভুল ধরলে তার জন্য মেজাজ দেখানো উচিৎ নয়, বরং তাতে আপনার উপকার হবে এটাই ভাবুন এবং এটাই দেখান। ধরে নিন এতেই সবার কল্যাণ নিহিত রয়েছে। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে আগে কথা বলতে যাওয়া উচিৎ নয়, তাদেরকে আগে কথা বলতে দিন। সহকর্মী অফিসারদের বিরুদ্ধে বাজে বা নোংরা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন। অতিমাত্রায় আমোদ ফুর্তি করে সস্তা জনপ্রিয়তা লাভের চেষ্টা করবেন না। তোষামোদকারীকে এড়িয়ে চলুন। অফিসের বাইরের লোকের উপস্থিতিতে অফিসের কাজকর্ম ও প্লান-প্রোগ্রাম সম্পর্কে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিকট সুযোগ সুবিধা, বদলি হওয়া বা বদলির আদেশ স্থগিত বা বাতিলের তদবির করা থেকে বিরত থাকুন।

শুধু নিজের সুযোগ সুবিধার দিকে লক্ষ্য ও আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পরিহার করুন। ভদ্রতার কোন বিকল্প নেই। অন্যের সামান্যতম সাহায্য-সহযোগিতা ও সৌজন্য প্রদর্শনের জবাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন। দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী মনে করা থেকে বিরত থাকুন। দোষত্রুটির জন্য অন্যকে অপমানজনক ভর্ৎসনা করা থেকে বিরত থাকুন। অধস্তনকে অপমানজনক কথা বললে তার নিকট থেকে স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিক সার্ভিস পাওয়া যাবে না। কথাবার্তায় আবেগতাড়িত ভাষা, রুক্ষ ব্যবহার ও ভাঁড়ামি বর্জন করুন। হঠাৎ উত্তেজিত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। উত্তেজিত হলে মানুষ অসঙ্গতিপূর্ণ ও অশালীন কথাবার্তা বলে, যা ঐ ব্যক্তির নিজের ভাবমর্যাদাই ক্ষুন্ন করে। অধস্তনদের উদ্যোগ নিরুৎসাহিত করা থেকে বিরত থেকে তাদের উদ্যোগকে আবশ্যক ক্ষেত্রে ইতিবাচক দিকে পরিচালিত করতে সহায়তা করুন। শিষ্টাচার মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুঁজি। যিনি এ পুঁজি গঠনে যতবেশি যত্নবান তিনি জীবনে ততবেশি সুনাম ও সাফল্য অর্জন করতে পারেন। যিনি শিষ্টাচার সম্পর্কে উদাসীন তিনি অধিকাংশ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারান। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ