ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩ ১৯:৪১ Asia/Dhaka
  • সুন্দর জীবন- পর্ব ৩২

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও লেখক ডেভিড পারনেলের মতে, সম্পর্ক স্থাপনের দক্ষতার অর্থ হচ্ছে এমন কিছু বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া যা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনকে সহজ করে তোলে। কখনো কখনো এসব বৈশিষ্ট্যকে দুই ভাগে আলাদা করা সম্ভব হয়।

একটা হলো, প্রিয়ভাজন হওয়া এবং অন্যটি হলো ভালো ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া। এই দুটি দিক ধারণ করার জন্য আরও কিছু বৈশিষ্ট্য লালন করতে হবে। এর ফলে কার্যকরী ও গঠনমূলক যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে। কর্মক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন হচ্ছে এমনি একটি নীতি। কর্মক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্কের পর্যায় উন্নত করতে সবারই কিছু রীতি-নীতি মেনে চলা জরুরি। পারস্পরিক সম্মান প্রদর্শন এমনি একটি বিষয় যা কেবল কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারের জন্যই প্রয়োজন হয় তা নয়, এটা সব ধরণের যোগাযোগের জন্য জরুরি।

 মনে রাখতে হবে, আপনি যার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন তিনি যেকোনো শ্রেণী-পেশার হতে পারেন, তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে তিনি একজন মানুষ। তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন আপনার দায়িত্ব। একইভাবে তারও দায়িত্ব হচ্ছে আপনার প্রতি সম্মান দেখানো। কোনো দিক থেকে যদি আপনার অবস্থান উপরে হয়ে থাকে তাহলেও আপনাকে অপর পক্ষের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, কারণ সে একজন মানুষ। মানুষ হিসেবে সবারই সম্মান পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আপনি যদি কারো অধীনে কাজ করেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে একজন মানুষ হিসেবে নিজের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেনতেন বিষয়ে আপনাকে যাতে অসম্মানিত হতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভদ্রতা হচ্ছে আরেকটি গুণ যা কর্মক্ষেত্রে জরুরি। এটা স্বাভাবিক যে, ভদ্রলোকদের কথা মানুষ বেশি মেনে চলে। আত্মসম্মানবোধও কর্মক্ষেত্রে জরুরি। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব বিশ্বাস, চিন্তা ও রেড লাইন রয়েছে। কখনোই নিজের উচ্চ অবস্থান ও ক্ষমতার কারণে অন্যকে তার নিজস্ব চিন্তা-বিশ্বাস ও রেড লাইনগুলো বাদ দেওয়ার জন্য বাধ্য করা যাবে না। 

প্রকৃতপক্ষে কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ইতিবাচক ফলাফল অর্জন। এমন ফলাফল অর্জন করতে হবে যা আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতি নিশ্চিত করে এবং কাজের মান বৃদ্ধি করে। একইভাবে কর্মক্ষেত্রে নিজের অবস্থান ও সম্মান বৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ। ডেভিড পারনেলের মতে, ব্যক্তি ভেদে দৃষ্টিভঙ্গি ও উপলব্ধির মধ্যে তফাৎ স্বাভাবিক বিষয়। এ কারণে আপনি যখন কারো সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবেন এবং কথা বলবেন তখন তা স্পষ্টভাবে বলবেন যাতে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ না থাকে। কারণ আপনি যদি স্পষ্ট করে না বলেন তাহলে আপনার বক্তব্যের অস্পষ্টতার কারণে অন্য পক্ষ বিষয়টি  অন্যভাবে বুঝতে পারে। এর ফলে কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ স্থাপিত হবে না এবং ফলাফলও হবে উল্টো। এ কারণে যারা যোগাযোগের নীতি-কৌশল সম্পর্কে অভিজ্ঞ তারা কথা বলার সময় সব কিছু স্পষ্ট করে বলেন, বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ রাখেন না। কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো সহনশীলতা। 

আপনি যখন অন্যদের বিষয়ে সহনশীল হতে পারবেন, ধৈর্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হবেন এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও নিজেকে শান্ত রাখতে পারবেন তখন বুঝবেন আপনি যোগাযোগ দক্ষতার আরও একটি ভিত্তিকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আপনি যাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছেন তাদের আস্থা যদি অর্জন করতে সক্ষম হন এবং তারা যদি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে নিরাপদ বোধ করেন তাহলে আপনি বুঝবেন এ ক্ষেত্রে আপনি সফল। সহনশীল হওয়ার পাশাপাশি সহানুভূতিও এ ক্ষেত্রে জরুরি। তবে কখন কোন পরিস্থিতিতে সহানুভূতি দেখাতে হবে তা আপনাকে বুঝতে হবে এবং সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে অহেতুক গম্ভীর হয়ে থাকবেন না। সব সময়ে গম্ভীর হয়ে থাকে-এমন মানুষের সঙ্গ কেউ উপভোগ করে না। সব সময়ে গম্ভীর হয়ে থাকলে অন্যরা আপনার কাছে ঘেঁষতে চাইবে না। এর ফলে সহকর্মীদের সাথে আপনার ভালো যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে উঠতে সমস্যা হবে। সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। সবাই যেন বুঝতে পারে আপনি তাদের সঙ্গ উপভোগ করছেন। তাহলে তারাও আপনার সঙ্গ উপভোগ করবেন।

সবার সাথে সৌজন্যমূলক সম্পর্ক রাখার পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখবেন যেন আপনার কারণে কারো কাজের সময় নষ্ট না হয়। এতে সহকর্মীরা বিরক্ত হবে এবং আপনাকে এড়িয়ে চলতে চাইবে। এছাড়া আপনাকে  ব্যক্তিত্বহীন মানুষ বলে মনে করবে। আপনাকে আন্তরিকতা ও অন্যের গায়ে না পড়া – এ দুইটি বিষয় ব্যালেন্স করে চলতে হবে। যদি কাউকে জরুরি কাজ করতে দেখেন – তবে তার সাথে গল্প জুড়ে দেবেন না। প্রয়োজনীয় কাজের কথা থাকলে কথা সেরে চলে আসুন।  কর্মক্ষেত্রে একজন ভালো টিম মেম্বার হওয়া জরুরি। নিজের স্বার্থের আগে টিমের স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এক একটি টিম। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি মানুষেরই সেটিকে সঠিক ভাবে চালানোর  পেছনে অবদান আছে। টিম ওয়ার্ক ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আর যেসব কর্মী নিজেকে যোগ্য টিম মেম্বার হিসেবে প্রমাণ করতে পারে, তারাই কর্মজীবনে সবচেয়ে সফল হয়।

ভালো টিম মেম্বার হতে সব সময়ে নিজের স্বার্থের আগে টিমের বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ দেখতে হবে এবং অন্যদের যথাসাধ্য সাহায্য করতে হবে। অন্যদের কাছ থেকে যেমন আপনি শিখবেন, তেমনি আপনি যা জানেন – সেটাও অন্যদের শেখান। এতে টিমের সদস্যদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং আপনার সত্যিকার দক্ষতা ও জ্ঞানকে আপনি প্রকাশ করতে পারবেন। তাদের সঙ্গে আপনার সফল যোগাযোগ স্থাপিত হবে, সম্পর্কও হবে শক্তিশালী। কর্মক্ষেত্রে দ্বিমত থাকবেই, কিন্তু একে কখনো বিবাদে পরিণত হতে দেবেন না। রাগারাগি ও গোলমাল সব সময় এড়িয়ে চলুন। কর্মক্ষেত্রে শত্রু তৈরি করবেন না। কাজের বিষয়ে দ্বিমত হলেও সেটা যেন ব্যক্তিগত পর্যায়ে না যায় – সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অন্যথায় আপনার সঙ্গে অন্যদের যোগাযোগ সফল হবে না। ঝগড়া-বিবাদ কখনোই সফল যোগাযোগের লক্ষণ নয়।

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ