এপ্রিল ০৫, ২০২৩ ২০:৩৭ Asia/Dhaka

একজন বিখ্যাত মনীষী বলেছেন, 'আর' নামক ইংরেজি বর্ণমালা-যুক্ত তিনটি শব্দ রিডিং, রাইটিং ও অ্যারাথমেটিক তথা পড়া, লেখা ও গণিত জানা মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

একজন বিখ্যাত মনীষী বলেছেন, 'আর' নামক ইংরেজি বর্ণমালা-যুক্ত তিনটি শব্দ রিডিং, রাইটিং ও অ্যারাথমেটিক তথা পড়া, লেখা ও গণিত জানা মানুষের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ছাত্রদের এই থ্রি আর শেখানোর পাশাপাশি যদি চতুর্থ আর তথা রিলিজিয়ন বা ধর্ম শেখানো না হয় তবে তারা হবে বদমাশ বা রাস্কেল।ইসলামের দৃষ্টিতে পরিবার হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোসহ সব ধরনের মহৎ গুণ অর্জন ও চর্চার প্রাথমিক কেন্দ্র। খোদাভীরুতা ও মানবীয় সব গুণ অর্জন করতে হলে পরিবার থেকেই এর বিকাশ ঘটাতে হবে। মানুষ সৃষ্টির সূচনা হতেই পরিবার হচ্ছে দয়া, স্নেহ, পারস্পরিক সম্মান, সুসঙ্গ, সহমর্মিতা, সহানুভূতি, প্রশান্তি ও আস্থার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এসব মহতী গুণ পৃথিবী বা মর্ত্যকে করতে পারে বেহেশতের সমতুল্য। একজন বিজ্ঞ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বিশ্বের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য কি কাজ করা উচিত? ওই বিজ্ঞ ব্যক্তি উত্তর দিয়েছিলেন, ঘরে ফিরে যান ও পরিবারের প্রতি অনুরাগী হন।

সফল ও শক্তিশালী পরিবার গঠনে ধর্ম-বিশ্বাস ও ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক রক্ষায় ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মানুগ আচরণের ইতিবাচক ভূমিকার কথা বেশিরভাগ গবেষণায় সঠিক বলে প্রমাণিত।  ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারের প্রতি অঙ্গীকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় অঙ্গীকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। অধ্যাপক অ্যালেন বার্গিন মনে করেন ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, চারিত্রিক পবিত্রতা ও বিয়ের স্থায়িত্বকে জোরদার করে এবং অপরাধ ও মাদকাসক্তি হ্রাসে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবারের সদস্যদের মানসিক সুস্থতা, প্রফুল্লতা, আত্ম-সম্মান, পারিবারিক সংহতি এবং এমনকি জনস্বাস্থ্যের অবস্থাও উন্নত করে।বর্তমান যুগে সমাজবিজ্ঞানীরা পরিবারগুলোর ভাঙ্গন ঠেকানোর ক্ষেত্রে ধর্মের অবিরল শক্তির সহায়তা নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

পাশ্চাত্যে ছাত্রদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যারা প্রায়ই ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দেন তাদের মধ্যে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশার মাত্রা খুব কম এবং বাবা মায়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো। তারা বিশ্ব সম্পর্কে সুদৃষ্টির অধিকারী এবং এ বিষয়টি তাদের সাফল্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে যারা খুব কমই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন বা কখনও যোগ দেন না তাদের মধ্যে হতাশার মাত্রা তীব্রতম।যেসব স্বামী ও স্ত্রী   সুদৃঢ় ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকারী নন তারা জীবনকে অর্থহীন মনে করেন বলে বিপদ-আপদে দিশাহারা হয়ে পড়েন। ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে দূরে থাকা দম্পতিগুলো আত্মকেন্দ্রীকতা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন।  ইসলাম নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে  অন্য সব কিছুর ওপর স্থান দেয়। তাই এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী ব্যক্তিরা বস্তুগত কোনো বিষয়ে ব্যর্থতার জন্য কখনও হতাশ হয়ে পড়েন না। আসলে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধই দাম্পত্য জীবনে অনুরাগ ও সহমর্মিতা সৃষ্টির জন্য জরুরি পূর্বশর্ত।   

পবিত্র কুরআন পাঠ : ধর্মীয় শিক্ষার প্রধান মাধ্যম

 

ধার্মিকতার আরেকটি বড় সুফল হল তা ব্যক্তিকে করে সহনশীল। ধার্মিক ব্যক্তিরা দারিদ্র ও পারিবারিক সংকটের কারণে হতাশ হয়ে পড়েন না। খোদায়ি ওয়াদা ও ইমানের মিষ্টতা দিয়ে তারা জীবনের তিক্ততাগুলোকে মিষ্টি-মধুময় করে ফেলেন।  পরিবারের সদস্যরা যদি সবাই ধার্মিক হন তাহলে তারা পারিবারিক জীবনে ধর্মীয় বিধি-বিধান মেনে চলেন এবং তারা জানেন যে পরিবারের সদস্যদের অধিকার ও দায়িত্বগুলো কী। ফলে তাদের সবার প্রত্যাশার সীমানা একই ধরনের  এবং তারা মতভেদের শিকার হন না। আর এই ঐক্য ও সহমর্মিতা তাদের পারস্পরিক অনুরাগ এবং পারিবারিক প্রশান্তি বাড়িয়ে দেয়।খোদাভীরু ব্যক্তি গোপনে ও প্রকাশ্যে এবং  সব সময়  আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ হতে দূরে থাকেন। ইসলাম ধর্ম জীবনসঙ্গী ও সন্তানদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে বলে। তাই ধার্মিক ব্যক্তি সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হন। ইমাম হাসান (আ) বলেছেন, তোমাদের মেয়ে সন্তানদের খোদাভীরু ছেলের কাছে বিয়ে দাও। কারণ সে যদি তোমার মেয়েকে ভালবাসে তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে। আর যদি তাকে আকর্ষণীয় বা প্রিয় বলে মনে নাও করে তবুও তার ওপর জুলুম করবে না।

যারা হালাল ও হারাম বা বৈধ-অবৈধতার খোদায়ি নির্দেশনা মেনে চলেন তাদের পরিবারগুলো সুসংহত হয় বলে দেখা গেছে বহু ক্ষেত্রে।  এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা গিবত বা অপবাদের চর্চা করেন না, বরং তারা পরস্পরের প্রতি সম্মান রেখে কথা বলেন পরস্পরের অনুপস্থিতিতেও। ফলে এ ধরনের পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ বা পারিবারিক বিরোধ খুব কমই দেখা যায়। ইসলামের দৃষ্টিতে মদপান হারাম হওয়ায় এ ধরনের পরিবারে সহিংসতা ও দুর্ব্যবহার দেখা যায় না। ইসলাম ধর্ম বাবা-মাকে কষ্ট দিতে নিষেধ করে। ফলে আদর্শ মুসলিম পরিবারে বাবা-মা ও সন্তানদের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক এবং উষ্ণ। -এভাবে পরিবারের ওপর ধর্মের ইতিবাচক প্রভাবের অনেক দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, যারা ঈমান আনে ও সৎ বা ভালো কাজ করেন দয়াময় আল্লাহ মানুষের অন্তরে তাদের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন।– যেসব ব্যক্তি সততা, বিশ্বস্ততা, বিনম্রতা ও দয়াশীলতার মত নানা মহৎ গুণের অধিকারী তারা সহজেই অন্যদের প্রিয় হন। আর এসব বিষয় পরিবারকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  

এবার বিয়ের সুফল বা গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা বলব। জরিপে দেখা গেছে বিবাহিত ব্যক্তিরা জীবনে নানা ধরনের রোগের মোকাবেলায় অবিবাহিতদের তুলনায় অনেক বেশি সুস্থ থাকেন। তারা  শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি সুস্থ থাকেন। অন্যদিকে যারা কখনও বিয়ে করেন না তাদের মধ্যে বিবাহিতদের তুলনায় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি দেখা যায়। বিবাহিত ব্যক্তিদের শরীর চর্বি বা মেদ জমা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কলেস্টরেল অবিবাহিতদের তুলনায় বেশ কম হয়। যারা দাম্পত্য জীবনে সফল তাদের মধ্যে টেনশান, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ কম হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যারা বিয়ে করেন তাদের মধ্যে অকাল মৃত্যু আশঙ্কা ১৫ শতাংশ কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে বিয়ে হতাশা ও টেনশানের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ