স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্ক মজবুত করতে পরস্পরের কথার প্রতি মনোযোগ জরুরি
সুখের নীড় -৩১ (পরিবার, মোবাইল ও ভার্চুয়াল জগত)
মহানবীর (সা.) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম যাইনুল আবেদিন (আ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী ও দয়ালু মহান আল্লাহর কাছে তারাই সবচেয়ে প্রিয়।
আল্লাহর কাছে তারাই সবচেয়ে বেশি প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ যারা উদার আচার-আচরণের অধিকারী। মহান আল্লাহ তাদের প্রতি বেশি সন্তুষ্ট যারা নিজ নিজ পরিবারের জন্য আল্লাহর নেয়ামত ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশি প্রশস্ততার অধিকারী।-
অনেক পরিবারের স্বামী বা স্ত্রীকে দেখা যায় যে টেলিফোন ও টেলিভিশন অথবা কোনো কাজ নিয়ে তারা সব সময়ই এত ব্যস্ত যে পরস্পরের কথার দিকে তাদের কোনো মনোযোগ নেই। বার বার একই কথা বলার পরও তারা সেদিকে লক্ষ্য না করে নিজের কাজ করে যেতেই থাকেন। এ ধরনের অভ্যাস পরস্পরের প্রতি সম্মান কমিয়ে দেয়। আর পরস্পরের প্রতি সম্মান কমে আসার ফলে বিচ্ছিন্নতা বা তালাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই স্বামী ও স্ত্রী যদি তাদের সম্পর্ক মজবুত করতে চান তাহলে পরস্পরের কথা শোনার প্রতি তাদের বেশি মনোযোগী ও অভ্যস্ত হতে হবে। পরিবারের অনেক সমস্যা সমাধানের চাবি রয়েছে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক কথা শোনার অভ্যাসের মধ্যে।
মহানবী (সা) বলেছেন, স্বামী যখন স্ত্রীর দিকে তাকান ও স্ত্রীও যদি স্বামীর দিকে তাকান তাহলে মহান আল্লাহ তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। -বর্তমান যুগে ইন্টারনেট-সৃষ্ট সংকটকে তুলে ধরা যায় নিচের কয়েকটি পঙক্তির মাধ্যমে:
ভার্চুয়াল জগত
তারা মাঝে মধ্যে নিজে নিজে হাসছেন!
কখনও কাঁদছেন, অশ্রুজলে ভাসছেন!
কখনও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছেন!
হাতে তাদের একটি যন্ত্র
এ যন্ত্রে আসছে নানা বার্তা
নানা চিত্র, সংবাদ, ছায়াছবি
আছে অযাচিত উপদেশ, গুজব, ওয়াজ-নসিহত
স্ত্রী বা স্বামীকে অপ্রস্তুত করা, তর্ক-বিতর্ক, ভিডিও-গেমাসক্তি!
চরিত্র ও আত্মহনন!
কায়দা করে খ্যাতি অর্জন ও অর্থ উপার্জনের মন্ত্র
আরও আছে প্রচার-প্রচারণা, বিজ্ঞাপনসহ সবই!
সবই পেয়েছেন তারা!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শক্তি!
দুধের স্বাদ ঘোলেই যেন বেশি ঝরঝরা!
কিন্তু তাদের মাঝে নেই সেই আগের আত্মীয়তা
যা আগে ছিল স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে
পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক যোগাযোগে।
ছিল হাস্যোজ্জ্বল দৃষ্টি-বিনিময় শত কাজে
বেড়ে গেছে ব্যস্ততা সোশাল মিডিয়ার নানা গ্রুপের জনসংযোগে!
ছিল না এমন ধ্বংসাত্মক ব্যস্ততা!
সব বিষয়ে জ্ঞান চর্চার কসরত!
ছিল শরীর চর্চা, হাটা-চলার ও বই পড়ার আয়োজন
ছিল পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে খোশালাপ
ও খোলামেলা আন্তরিক কথোপকথন।
আজ কাছের জনেরা অবহেলিত
ঘরের বাইরের এজেন্ডা শত শত
সময়ের বড়ই অভাব, বদলে যাচ্ছে স্বভাব
এখন সব কিছু নিয়েছে কেড়ে অনাহূত মেহমান
প্রাইভেসি ও গোপনীয়তা অনেক বিপন্ন!
জীবন ও বাস্তব জগত এখন অনেক বিচ্ছিন্ন!
মোবাইল ও ভার্চুয়াল জগতই যেন সর্বশক্তিমান!
ইন্টারনেট অনেক কিছুকে সহজ করে দিয়েছে। কমিয়ে দিয়েছে কেনাকাটাসহ, লেনদেন ও যোগাযোগের ব্যয়। নানা ধরনের জ্ঞান, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও তথ্য সহজেই পাওয়া যাচ্ছে এই মাধ্যমে। জিপিএস বা ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও সন্তানদের ওপর নজরদারি করাও সম্ভব। খুব দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান ও জনমত যাচাইও সহজ হয়ে গেছে ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে। তবে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ইন্টারনেট জগতে তথ্যের যে অবিরাম বোমা-বর্ষণ চলছে তা থেকে সত্য ও মিথ্যা যাচাই করার মত প্রস্তুতি বা দক্ষতা অনেকেরই নেই। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে ঘটানো হচ্ছে অনেক অপরাধ। তাই পরিবারগুলোকে ও বিশেষ করে যুব ও তরুণ সমাজকে এসব বিষয়ে হতে হবে অনেক সতর্ক।
পরিবারগুলোর সংকটের একটি বড় কারণ যৌন অতৃপ্তি। স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের বা তাদের কোনো একজনের যৌন বিষয়ে কোনো সমস্যা, রোগ বা সমন্বয় কিংবা সমঝোতার অভাব থাকলে সংসারে অশান্তি দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে কোনো সমাধান বা সমঝোতা অর্জনে যদি তারা ব্যর্থ হন তাহলে পরিবার ভেঙ্গে যাতে পারে। অনেক সময় কেবল অযৌক্তিক বা মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা ও মনোযোগহীনতা যৌন বিষয়ে সমস্যা ও অতৃপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় চিকিৎসকের সহায়তা নিয়ে এ জাতীয় সমস্যার সমাধান করা যায়। স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পরিক সব চাহিদার প্রতি পরস্পরের লক্ষ্য রাখা উচিত। ইসলাম এ বিষয়ের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। জৈবিক তৃপ্তি অর্জন পরিবারের সদস্যদের মানসিক, নৈতিক ও শারীরিক প্রশান্তির মাধ্যম। অন্যদিকে যৌন অতৃপ্তির ফলে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং মন হয়ে ওঠে খিটমিটে। আর এই ধারা অব্যাহত থাকলে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনও দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। স্বামী-স্ত্রীর সুস্থ যৌন-সম্পর্ক তাদের আয়ু বৃদ্ধি ও পারস্পরিক ভালোবাসা জোরদারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। -বাজনা
মহানবী (সা) থেকে বর্ণিত হয়েছে: সর্বোত্তম স্ত্রী তারাই যারা স্বামীর সাহচর্যে থাকার সময় তথা স্বামীর মনোরঞ্জনের সময় বিন্দুমাত্রও লজ্জার অবকাশ রাখেন না। মোটকথা পারিবারিক সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করার জন্য সুস্থ যৌন-সম্পর্ক ও যৌন তৃপ্তি অর্জন জরুরি।
আজকের আলোচনা শেষ করবো আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীর ক'টি অমর ও অমূল্য বাণী শুনিয়ে। তিনি বলেছেন: আদব-কায়দা ও শিষ্টতা অর্জন মানুষের জন্য সোনা, রূপা ও অর্থ সম্পদ অর্জনের চেয়েও বেশি জরুরি। বর্তমান যুগে অপ্রিয় বা তিক্ত ঘটনা ঘটা বিস্ময়ের বিষয় নয়, বরং নিরাপত্তা ও সুস্থতা থাকাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিস্ময় তথা বিস্ময়েরও বিস্ময়! দামি পোশাক-পরিচ্ছদ বা অলঙ্কার প্রকৃত সৌন্দর্য নয় প্রকৃত সৌন্দর্য হল জ্ঞানী হওয়া ও আদব বা শিষ্টতার অধিকারী হওয়া। যার বাবা মারা গেছে সে প্রকৃত ইয়াতিম নয়, বরং প্রকৃত ইয়াতিম হল সে যে জ্ঞান ও আদব-কায়দাকে কাজে লাগাতে পারে না! #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।