পরিবারিক সংলাপের সময় কখনও দৈনিক ১৫ মিনিটেরও কম হচ্ছে!
সুখের নীড়- ৩২ (পরিবার, ইন্টারনেট ও নিরাপত্তা)
প্রত্যেক মানুষই জীবনে সুখী হতে চায়। কিন্তু সুখের ধারণা সবার কাছে সমান নয়। এমনকি একই মানুষের জীবনে ঘটে সুখের সংজ্ঞার বিবর্তন!
সুখের সামগ্রিক ধারণা তুলে ধরা যায় এভাবে কয়েকটি পঙক্তিতে:
সুখ-সোপান
সুখ কখনও শিশুর একটি চকলেট
সুখ একটি ফুটবল, খেলনা গাড়ি, পুতুল
সুখ যুবক যুবতির নতুন ঘরে ওঠা!
প্রিয়জনের হাতে দেয়া এক গুচ্ছ ফুল
সুখ কারো কাছে চাকরি আর প্রমোশনের সুযোগ
সুখ বিলাসী গাড়ি সুদৃশ্য বাড়ি আর ভোগ!
সুখ নিরন্নের মোটা ভাতের একটি প্লেট
নিশ্চিন্ত ঘুম নি:শব্দ আঁধারে!
সুখ মানে কখনও জনসেবা
গলায় ফুলের মালা ঝোলানোর লোভে!
সুখ মানে কারো কাছে ধর্মকর্ম খোদা-প্রেমের
কিংবা আযাবের ভয়ে
অথবা স্বর্গের আকর্ষণে!
মহৎতর সুখ আছে জ্ঞান-অনুসন্ধানে!
সুখ নামক সোনার হরিণ লুকিয়ে আছে
মানুষের পূর্ণতার সাধনে!
কষ্ট ছাড়াই সুখে সুখ পায় কেবা!
দুঃখ বিনা সুখ দেখেছে কে কবে!?
সবচেয়ে বড় সুখ আত্মত্যাগের উৎসবে!
পরিবারের রয়েছে তিনটি মূল স্তম্ভ: দৈহিক সত্ত্বা, মানবীয় দয়া ও স্নেহ এবং আধ্যাত্মিক দিক। দয়া ও স্নেহ পরিবারের মূল প্রাণ। এই প্রাণ না থাকা মানে পরিবারের সাফল্য ও সুখের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। পরিবারে দয়া ও স্নেহ থাকলে মানুষ বাইরের ভাসাভাসা ও ভিত্তিহীন ভালোবাসার মুখাপেক্ষী হয় না। স্বামী আর স্ত্রী আশা ও প্রফুল্লতা নিয়ে যখন সংসারের কর্মতৎপরতা শুরু করেন তখন সেখানে অনুভূত হয় বন্ধুত্ব ও দায়িত্বশীলতা। সবার জীবন হয়ে উঠুক দয়া ও প্রফুল্লতায় পরিপূর্ণ এই প্রত্যাশা রেখে শুরু করব এ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা।
নতুন নতুন তথ্য-প্রযুক্তি ও সোশাল মিডিয়া মানুষের জীবনে নানা ধরনের প্রভাব ফেলছে। এইসব প্রভাব কখনও ইতিবাচক ও কখনও নেতিবাচক। আজকাল মানুষ খুব বেশি মিডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পরিবারকে সময় দিতে পারছে আগের তুলনায় অনেক কম। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সংলাপের সময় কখনও কখনও দৈনিক ১৫ মিনিটের চেয়েও কম হয়ে পড়েছে। এইসব মিডিয়া অনেক সময় পারিবারিক গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাকেও বিপন্ন করছে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা সন্দেহ ও অবিশ্বাস। এরই পরিণামে অনেক সময় ভেঙ্গে যাচ্ছে পরিবার নামক সুখের নীড়। এ ছাড়াও এইসব মিডিয়ার এক বিশাল বা বেশিরভাগ অংশই ব্যবহৃত হচ্ছে ধর্ম-বিরোধী পশ্চিমা সংস্কৃতি ও চেতনাসহ নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক এবং এমনকি সন্ত্রাসবাদের সহায়ক মতাদর্শ প্রচারের প্লাটফর্ম হিসেবে। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়েও বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে এইসব মিডিয়া। ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বা আসক্তি অনেকের মধ্যে সৃষ্টি করছে একাকীত্ব ও হতাশা। এভাবে সমাজে গড়ে উঠছে এক নতুন শ্রেণীর ঘরকুণো গোষ্ঠী যারা সমাজ ও সামাজিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন।
ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সমাজ ও পরিবারও ইন্টারনেটের নানা দিকের নেতিবাচক ও ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে শহরের বাতাস ও পরিবেশ দূষিত হলে তা যেমন স্বাস্থ্য ও শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য এবং জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর তেমনি সাংস্কৃতিক পরিবেশ দূষিত হলে তাও কম ধ্বংসাত্মক নয়। দুষিত সংস্কৃতিতে মুসলিম যুবক ঝুঁকে পড়তে পারে যৌন অনাচারের দিকে, ঝুঁকে পড়তে পারে নানা ধরনের কু-অভ্যাস বা আসক্তি, অকর্মন্যতা, পশ্চিমা রাজনৈতিক কলুষতা ও সাংস্কৃতিক কদর্যতার দিকে। সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশের জন্য এসব অবশ্যই বেশ ধ্বংসাত্মক ও ক্ষতিকর।
মোট কথা ইন্টারনেটের ক্ষতিকর নানা দিক মোকাবেলার জন্য দরকার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ ও মতবিনিময় এবং পরোক্ষ নজরদারি। মিডিয়ার নানা বিভ্রান্তি ও অনিষ্টতার বিষয়ে সতর্ক করতে হবে তাদেরকে। ইন্টারনেট মাধ্যমগুলোর সঠিক ও যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে তরুণ ও কিশোরদেরকে দিতে হবে কার্যকর দিক-নির্দেশনা।
পাশ্চাত্যের তথাকথিত উন্নত সমাজ তাদের উন্নয়ন মডেলে পারিবারিক বন্ধন গড়ে তোলা ও তা জোরদারের বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর পথ-নির্দেশনা দিতে পারেনি। ফলে এ বিষয়ে তাদের কোনো সাফল্য নেই। তবে অনেকেই এটা বুঝতে পারছেন যে দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনকে সফল করার জন্য পথ-নির্দেশনা থাকা অপরিহার্য। তাই বিয়ে করতে যুব সমাজকে উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন জোরদারের গুরুত্বও তাদের কাছে তুলে ধরা উচিত।
পরিবারকে সুস্থ সম্পর্কের নেটওয়ার্ক ও আন্তরিকতা আর সমঝোতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা স্বামী-স্ত্রীসহ সবারই দায়িত্ব। স্বামী-স্ত্রীর উচিত একে অপরকে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ জন ও জীবনের তথা সব সুখ-দুঃখের শরিক হিসেবে অর্ধাঙ্গ বা অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে দেখা। সংসারকে সুখময় করতে নানা জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনও তাদের জন্য জরুরি।
স্ত্রী বা স্বামী যদি জীবনসঙ্গীকে সব দিকে প্রত্যাশিত বা আশানুরূপ দক্ষ হিসেবে দেখতে না পান তাহলেও তারা যেন পারিবারিক বন্ধন তথা পরিবারকে টিকিয়ে রাখার বিষয়ে দৃঢ়চিত্ত হন। আর এই দৃঢ়চিত্ততার কারণেই মহান আল্লাহ ওই পরিবারের ওপর বরকত ও রহমত নাজিল করেন। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন:
নারীদের তথা স্ত্রীর সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে দ্রুত বিচ্ছিন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নিও না, হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।–সুরা নিসা ১৯
-পবিত্র কুরআনের এই দিক নির্দেশনা মান্য করার সংস্কৃতি পরিবার ও দাম্পত্য জীবনকে করবে সুমধুর এবং ফলপ্রসূ। ফলে মতবিরোধ দেখা দিলেই তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া বা তালাকের চিন্তা করার চেয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা ও সমঝোতার চিন্তা করাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত স্বামী ও স্ত্রী উভয়েরই। এ বিষয়ে দৃঢ়তা সমস্যাগুলোকে সহজেই সমাধান করতে সক্ষম। #
পার্সটুডে/এমএএইচ/১৩
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।