এপ্রিল ২১, ২০২৩ ১৮:১৮ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরো দুই নাম মুবাশ্বির«مبشّر»  তথা সুসংবাদদাতা ও  মুনজির «مُنذر» বা সতর্ককারী। সুসংবাদে মানুষ আনন্দ পায় বা খুশি হয়।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর দেয়া সুসংবাদগুলো মুমিনদের করে আনন্দিত ও আশান্বিত। ফলে তাদের অন্তরে জাগে আত্মবিশ্বাস ও প্রশান্তি। এভাবে তারা আরও বেশি সুপথের দিকে এগিয়ে যান। আর এরই প্রভাবে তারা অর্জন করেন সৌভাগ্য ও পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মনোবল। মহান আল্লাহ মুনজির তথা ভয় প্রদর্শনকারী বা সতর্ককারী। তিনি পবিত্র কুরআনে জালিম ও কাফির-মুশরিকদের ভয় প্রদর্শন করেছেন এবং কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি  তাদেরকে সত্য ও মিথ্যা বোঝার বা সঠিক পথ ধরার ও ভুল পথ বর্জনের উৎসাহ দিয়েছেন। ভয় প্রদর্শনের প্রভাব সুসংবাদের চেয়ে অনেক বেশি। তবে মানুষের শিক্ষা ও সুপথ প্রদর্শনের জন্য এবং সৌভাগ্য ও পূর্ণতা অর্জনের জন্য এ দুইয়েরই ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। টিকে থাকা ও বেঁচে থাকার প্রতি রয়েছে মানুষের সহজাত আকর্ষণ।  তারা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া বা ধ্বংস হয়ে যাওয়াকেও অপছন্দ করে যা তাদের সহজাত বৈশিষ্ট্য। ঠিক একইভাবে তারা লাভের প্রতি আকৃষ্ট ও ক্ষতি প্রতিরোধে আগ্রহী সহজাত কারণেই। 

কিন্তু মানুষের ভয় ও আশার মধ্যে ভারসাম্য থাকা জরুরি। কারণ অতিরিক্ত আশাবাদ মানুষকে পরোয়াহীন ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অমনোযোগী করে তোলে। আবার এত বেশি নিরাশ বা ভীত হওয়াও উচিত নয় যে তাতে দায়িত্ব পালনের উৎসাহ- উদ্দীপনা পুরোপুরি মন থেকে উধাও হয়ে যায়! এ জন্যই পবিত্র কুরআনে ভয় প্রদর্শন ও সুসংবাদ পাশাপাশি এসেছে। কখনও কখনও সুসংবাদের কথা এসেছে ভয় প্রদর্শনের আগে। যেমন সুরা বাকারার ১১৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: হে রাসুল! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বিশ্বের মানুষের কাছে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে পাঠিয়েছি।–আবার কখনও মহান আল্লাহ হুঁশিয়ারি বা ভয় প্রদর্শনকে সুসংবাদের আগে এনেছেন। যেমন, সুরা আরাফের ১৮৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, (হে রাসুল আপনি বলুন!) আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ইমানদারদের জন্য। -তবে মহান আল্লাহর রহমত বা দয়া তাঁর ক্রোধের চেয়ে বেশি বলে বেশিরভাগ সময়ই সুসংবাদের কথাগুলো হুঁশিয়ারির আগে এসেছে পবিত্র কুরআনে।–

মহান আল্লাহ'র নাম মুবাশ্বির«مبشّر» তথা সুসংবাদদাতা ও মুনজির «مُنذر» বা সতর্ককারী

 

আরবি ভাষায় কখনও কখনও সুসংবাদ ছাড়াও দুঃসংবাদ বা দুঃখের খবর দেয়ার ক্ষেত্রেও বাশারাত, বাশির তথা মুবাশ্বিরের সমশ্রেণীর শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়। তবে তাতে থাকে উপহাসের সুর বা ভাব। যেমন, সুরা আলি ইমরানের ২১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং পয়গম্বরগণকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে, আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ (বা সংবাদ) দিন।- মহান আল্লাহ নবী-রাসুলগণকেও মুবাশ্বির ও মুনজির তথা সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন, সুরা বাকারার ২১৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, 

সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা পয়গম্বর পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই মতভেদ করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ ইমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।

পবিত্র কুরআনে মহানবীকেও(সা) বেশ কয়েক বার বাশির বা মুমিনদের প্রতি সুসংবাদদাতা নামে উল্লেখ করা হয়েছে। সুরা মায়েদার ১৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, হে আহলে-কিতাবগণ! তোমাদের কাছে আমার রসূল আগমন করেছেন, যিনি পয়গম্বরদের বিরতির পর তোমাদের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেন-যাতে তোমরা একথা বলতে না পার যে, আমাদের কাছে কোন সুসংবাদদাতা ও ভীতি-প্রদর্শক আগমন করে নি। অতএব, তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শক এসে গেছেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।

পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহর বাণী। মানুষের মুক্তির জন্য পাঠানো এই মহা-গ্রন্থও তাই বাশির ও নাজির তথা সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী। পবিত্র কুরআনে যেমন আনন্দ ও সুখের অনেক সুসংবাদ আছে তেমনি আছে যন্ত্রণাদায়ক ও ভয়ানক শাস্তির অনেক সতর্কবাণী। এ দুই বিষয় মানুষের মধ্যে পূর্ণতা ও সৌভাগ্যের দিকে আকর্ষণ সৃষ্টি এবং এ জন্য নানা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পবিত্র কুরআনে  উচ্চ পর্যায়ের মুসলমান তথা একনিষ্ঠ মুমিন বা বিশ্বাসী, সাধারণ মুসলমান ও সৎকর্মশীলদের প্রতি নানা সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে একই এই মহা-গ্রন্থ মুশরিক বা অংশীবাদী, নাস্তিক,  জালিম ও কাফিরদের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে। কারণ এরা পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত বাস্তবতাগুলোকে অস্বীকার করে। যেমন, সুরা আহক্বাফের ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, এর আগে মুসার কিতাব ছিল পথপ্রদর্শক ও রহমতস্বরূপ। আর এই কিতাব তথা পবিত্র কুরআন তার সত্যায়নকারী বা সমর্থক গ্রন্থ হিসেবে আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে, যাতে তা বিশ্বের যালিমদেরকে মহান আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে এবং সৎকর্মশীলদেরকে মহান আল্লাহর রহমতের সুসংবাদ দেয়। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।


 

ট্যাগ