মে ২২, ২০২৩ ১৩:৩৭ Asia/Dhaka

সাধারণত শিশুদের আত্মসংযম সম্পর্কে কোনো ধারণাই থাকে না। এ কারণে শিশুরা যখন কোনো আকর্ষণীয় জিনিস দেখে তখনই সে তা পেতে চায়, ঐ জিনিসটি তক্ষুনি নেওয়ার জন্য বায়না ধরে। আর রেগে গেলে শিশুরা কখনো কখনো চিৎকার-চ্যাঁচামেচি শুরু করে দেয়।

এটা ঠিক যে, এগুলো শিশুসুলভ আচরণ, তবে তাদের মধ্যেও আস্তে আস্তে আত্মসংযমের অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব। এ লক্ষ্যে তাদেরকে বোঝাতে হবে, নানা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। গবেষকরা এসব বিষয়ে অনেক কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা এক সমীক্ষায় গবেষকরা চার বছর বয়সী এক দল ছেলে-মেয়েকে একটা করে চকলেট দিয়েছিলেন আর তাদেরকে বলেছিলেন, তারা চাইলে সেই চকলেট তখনই খেতে পারে কিংবা একটু অপেক্ষা করে পরেও খেতে পারে। কিন্তু তারা যদি অপেক্ষা করে, তবে ধৈর্য ধরার পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে আরেকটা চকলেট দেওয়া হবে। যে সব ছেলে-মেয়েরা চার বছর বয়সে আত্মসংযম দেখিয়েছিল, তারা হাই স্কুল থেকে পাশ করার পর সেই ছেলে-মেয়েদের তুলনায় মানসিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক দিয়ে আরও ভালো ফল করেছিল। অর্থাৎ যারা আত্মসংযম দেখায়নি তাদের চেয়ে আত্মসংযম প্রদর্শনকারীরা ভালো ফল করেছে।

শিশুদেরকে প্রথম থেকেই কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা করতে, আমোদপ্রমোদের ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরতে এবং প্রলোভন থেকে দূরে থাকতে শেখাতে হবে। এজন্য বাবা-মাকে আত্মসংযমী হতে হবে। সন্তানদের সামনে নিজেকে আত্মসংযমী হিসেবে তুলে ধরতে হবে। আপনাকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। আপনি যখন সন্তানদের নিয়ে যানজটে আটকা পড়েন তখন তাদের সামনে অধৈর্য হবেন না। আপনার সন্তানরা যদি আপনাকে যানজটে আটকে পড়ার সময় অধৈর্য হয়ে পড়তে দেখে, দোকানে বা অন্য কোথাও লাইন ভেঙে এগিয়ে যেতে দেখে অথবা অন্যদের কথার মাঝখানে কথা বলতে দেখে তাহলে তারাও তা শিখবে। মোট কথা সন্তানদের আত্মসংযম শেখানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল, নিজেদের সেটা করে দেখানো। সন্তানের বয়স অনুযায়ী, কোনো কিছু তৎক্ষণাৎ পাওয়ার অথবা অন্যায় চাহিদা পূরণের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করার উপকারিতা এবং এ ধরণের ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ না করার পরিণাম সম্পর্কে বোঝাতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার সন্তান যদি কারো কাছ থেকে খারাপ ব্যবহার পেয়ে রেগে যায়, তাকে একটু থেমে চিন্তা করতে সাহায্য করুন।

যেকোনো বিষয়ে সাথে সাথে প্রতিক্রিয়া দেখানো বা প্রতিশোধ নেওয়ার ফল কি ভালো হবে না খারাপ হবে- তা চিন্তা করতে শেখান। এই মুহূর্তে মাথায় যে চিন্তাটা এসেছে বা যে পন্থা অবলম্বনের কথা সে ভাবছে তার চেয়েও ভালো কোনো উপায় আছে কিনা তা ভাবার জন্য সন্তানদেরকে উৎসাহিত করতে হবে। অনেকে রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য অবস্থান পরিবর্তন অথবা এক থেকে দশ পর্যন্ত গণনা করার কথা বলেন। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় এ ধরণের পন্থাও অবলম্বন করা যেতে পারে। আত্মসংযম শেখাতে উৎসাহ প্রদানও একটি কার্যকর পন্থা। কাজেই এসব ক্ষেত্রে আপনার সন্তানকে উৎসাহ দিন। আপনার সন্তান যখন আত্মসংযম দেখায়, তখন তার প্রশংসা করুন। সন্তানকে বলুন, নিজের ইচ্ছাকে প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা মন চায় তাই করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নিজের খেয়াল-খুশি মতো যারা চলে তারা নিজের ক্ষতি করার পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করে।

আপনার সন্তানকে নিয়ে একটা খেলা খেলতে পারেন। খেলাটার নাম দিতে পারেন, “তুমি কি করবে?” অথবা “ভালো সিদ্ধান্ত, খারাপ সিদ্ধান্ত” কিংবা এইরকম কিছু-একটা। কয়েকটা সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করুন এবং সেই পরিস্থিতিগুলোতে কোন কোন প্রতিক্রিয়া দেখানো যেতে পারে, তা অভিনয় করুন। আর এরপর সেই প্রতিক্রিয়াগুলোকে ‘ভালো’ অথবা ‘খারাপ’ হিসেবে চিহ্নিত করুন। বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করুন: খেলাটাকে উপভোগ্য এবং শিক্ষণীয় করে তোলার জন্য চাইলে আপনি পুতুল, ছবি অথবা অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এই খেলার জন্য আপনার লক্ষ্য হলো, সন্তানকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে সহযোগিতা করা। সংযমী হলে একজন মানুষ কী কী উপকারিতা পেতে পারে সেটা অভিভাবকদের জানতে হবে এবং সেই তথ্য সন্তানদের কাছে তুলে ধরতে হবে।

আত্মসংযমকে আমরা আত্মশৃঙ্খলাও বলতে পারি এবং এ শৃঙ্খলাবোধ বা এর চর্চা আমাদের নানাভাবে আমাদেরকে সাহায্য করে। সংযমের চর্চা মানুষের বিষণ্ণতা, ভয়, খারাপ কাজের প্রতি আসক্তি এবং যে কোনো ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে সংযম মানুষকে শেখায় ধ্বংসাত্মক, অতিরঞ্জিত, বদ্ধমূল ধারণা এবং নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার এবং সারা জীবনের ভারসাম্য রক্ষার জ্ঞান দেয়। অতি আবেগকে দমন করে পরিমিতিবোধ বা সংযত আচরণ করতে সাহায্য করে। নিজের অসহায়ত্ব দূর করে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। মানসিক ও আবেগীয় নিরাসক্তিকে সুস্পষ্ট করতে এবং মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। নেতিবাচক ধারণা ও ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে অবদান রাখে। মানুষের নিজেকে শ্রদ্ধা করতে, আস্থা, অর্ন্তনিহিত শক্তি, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছা শক্তিকে বেগবান করতে সাহায্য করে। আত্মসংযম নিজের জীবনের দায়িত্ব নিতে সহায়তা করে। সর্বোপরি একজন মানুষকে দায়িত্ববান ও বিশ্বাসযোগ্য হতে সাহায্য করে আত্মসংযম।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ