সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান
সুন্দর জীবন- পর্ব ৪০
প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এই দায়িত্ব সঠিক ও যথাযথভাবে পালন করাকেই দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যপরায়ণতা বলা হয়। তবে সঠিকভাবে দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে চাইলে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা জরুরি।
আপনি যদি আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকেন অর্থাৎ আপনার দায়িত্ব কী তা যদি আপনার জানা থাকে তাহলে আপনি তা সুচারুভাবে পালন করতে সক্ষম হবেন। মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব সেহেতু তাকে কোনো না কোনো সমাজে বসবাস করতেই হয়। আর প্রতিটি সমাজেরই কিছু রীতি-নীতি ও আইন-কানুন থাকবেই। সমাজের সদস্য হিসেবে সামাজিক রীতি-নীতি মেনে চলাও দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। আপনি যখন গাড়ি চালান তখন আপনাকে ট্রাফিক আইন মেনেই গাড়ি চালাতে হবে। আপনি যদি ট্রাফিক আইন না মেনে আপনার ইচ্ছামতো রাস্তায় গাড়ি চালাতে থাকেন তাহলে আপনি আপনার দায়িত্বকে অবহেলা করছেন। খুব সাধারণ একটা বিষয়। আপনি যখন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন তখনও একজন পথচারী হিসেবে আপনার ওপর কিছু দায়িত্ব বর্তায়। আপনি যেনতেন ভাবে রাস্তায় হাঁটলে অন্যের চলাচলে সমস্যা হতে পারে। আপনি অন্য পথচারীকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে পারেন না অথবা আপনি কলা খেয়ে কলার খোসা বা আবর্জনা রাস্তায় ফেলে দিতে পারেন না।
আমাদের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে অথবা সময় অতিবাহিত করতে কোনো না কোনো পেশা বা চাকরির সঙ্গে জড়িত থাকতে হয়। প্রতিটি পেশারই কিছু বিধি-বিধান রয়েছে। যে পেশায় বা চাকরিতে আপনি রয়েছেন তা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য জানা জরুরি। আপনাকে কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং কোন ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে তা ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। এটা করতে পারলে আপনি চাকরিতে সফল হতে পারবেন। আপনাকে অফিস টাইম অর্থাৎ অফিসে প্রবেশের এবং অফিস ত্যাগের সময় সম্পর্কেও সচেতন থাকতে হবে। একইসঙ্গে আপনার অফিসে নিজের দৈনন্দিন দায়িত্ব সম্পর্কে যদি ভালোভাবে জেনে নিতে পারেন তাহলে আপনি নিজের দায়িত্ব পালন শেষে প্রশান্তি অনুভব করবেন। কেউ কেউ হয়তো এখন বুঝতে পারছেন যে, তিনি সত্যিই দায়িত্বশীল মানুষ নন, দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা করেও সফল হচ্ছেন না। এতেও চিন্তার কিছু নেই। আপনি এই দক্ষতাও অর্জন করতে পারবেন ঐকান্তিক চেষ্টা ও অনুশীলনের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের এই পর্যায়ে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ হওয়ার জন্য প্রথমেই অজুহাত দাঁড় করানোর প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসুন। অনেক মানুষের মধ্যেই এই প্রবণতা প্রবল। কোনো কাজের প্রসঙ্গ এলেই এ ধরণের মানুষেরা তা এড়ানোর জন্য অজুহাত খুঁজতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত একটা না একটা অজুহাত দাঁড় করিয়েই ফেলে। আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের কোনো দায়িত্ব পালন না করার জন্য অন্যকে দোষী সাব্যস্ত করবেন অথবা অন্য কোনো অজুহাত দাঁড় করাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার মধ্যে এই গুণটি বিকশিত হবে না। যেকোনো দায়িত্ব বা কাজ নেওয়ার আগে নিশ্চিত হোন সত্যিই ঐ দায়িত্ব পালনের মতো সামর্থ্য ও যোগ্যতা আপনার আছে কিনা। সামর্থ্য ও সক্ষমতা না থাকলে কখনোই ঐ দায়িত্ব নেবেন না। দায়িত্ব নেওয়ার পর তা পালন না করার চেয়ে দায়িত্ব গ্রহণ না করা অনেক শ্রেয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর দায়িত্ব পালনের জন্য একটা সময়সূচী তৈরি করুন। সময়সূচী অনুযায়ী দায়িত্ব বা কাজ সম্পন্ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। আপনি যদি সময়সূচী মেনে এগোন তাহলে দেখবেন সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে আপনি পরবর্তী দায়িত্ব পালনেও উৎসাহ পাবেন।
নিজের কর্মসূচি বা সময়সূচী অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রয়োজনে অন্যের জন্য 'না' শব্দটি ব্যবহার করতে হতে পারে। আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করছেন এমন সময় আপনার সহকর্মী বা অন্য কেউ যদি কোনো অযৌক্তিক আবদার বা প্রস্তাব নিয়ে আপনার সামনে এসে দাঁড়ায় যা কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, তাহলে তাকে 'না' বলে দিন। তাকে বলুন এখন সম্ভব নয়, কাজ শেষ করে সম্ভব হলে তার কথাও রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখতে হবে আপনি যে দায়িত্ব বা কাজটি গ্রহণ করেছেন তা পালন বা সম্পন্ন করা আপনার দায়িত্ব, অন্য কেউ এজন্য দায়ী সাব্যস্ত হবে না এবং অন্য কেউ এর দায় নেবে না। সর্বোপরি কাজে বা দায়িত্বে একাগ্রতা বজায় রাখুন। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজের ও অন্যের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। প্রয়োজনে অন্যের পরামর্শ নিন।
অতীতে আপনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বা কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে কোথায় হুঁচট খেয়েছেন ও সমস্যায় পড়েছেন তা মনে করার চেষ্টা করুন। আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেদিকে মনোযোগ দিন। ভুল থেকে ভীত না হয়ে শিক্ষা নিন। ভুল মানুষের হতেই পারে। ভুল হবে এই আশঙ্কায় কাজ বা দায়িত্ব থেকে দূরে থাকলে চলবে না। নিজের সামর্থ্য ও যোগ্যতাকে শানিত রেখে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে, এরপরও ভুল হলে তা পরবর্তী কাজে ভুল এড়াতে সাহায্য করবে। এসবের পরও আপনি যদি মনে করেন সত্যিই দায়িত্বশীল হতে পারছেন না তাহলে একজন মনঃচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। এর ফলে আপনি উপকৃত হবেন।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।