জুন ১১, ২০২৩ ১৯:৪৬ Asia/Dhaka
  • প্রাচীন ইরানি গল্প: উট সক্রিয় হয় ভেজা কার্পেটে

প্রিয় পাঠক ও শ্রোতাবন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। ইরানের কালজয়ী গল্পের পসরা গল্প ও প্রবাদের গল্পের আজকের আসরে আমরা শুনবো চমৎকার একটি প্রাচীন প্রবাদ: উট সক্রিয় হয় ভেজা কার্পেটে। প্রবাদের পেছনের গল্পটি এরকম:

এক লোকের একটা উট ছিল। ওই উট দিয়ে সে মানুষের মালামাল টেনে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালাতো। উটের জন্য বোঝা টানা বিশেষ করে যখন বেশি ওজনের বোঝা হতো তখন কষ্ট হয়ে যেত। সকাল থেকে রাত অবধি বোঝা টানতে টানেতে বেচারা উট ক্লান্ত হয়ে যেত। সে কারণে উটের মালিকও চাইতো না বেশি বেশি বোঝা টানাতে। কিন্তু এও ভাবতো যে তার তো একটার বেশি উট নেই। আর ওই উট দিয়ে বোঝা টেনেই তাকে সংসার চালাতে হয়। এভাবে একদিন একলোক তার বাগানের ফল পেড়ে বাজারে বিক্রি করার জন্য উটের পিঠে ফলের বোঝা তুলে দিলো। তো বাজারে নিয়ে গেল এবং ধীরে ধীরে ফলের বোঝা উটের পিঠ থেকে নামানো হলো। উট বেচারা প্রশান্তির নি:শ্বাস ছাড়লো। অপেক্ষা করতে লাগলো মজুরি নেওয়ার জন্য। এই সুযোগে উট নষ্ট ফল আর পাতাগুলো খাওয়ার চেষ্টা করলো। অপর একটি উট সেখানে এলো এবং পরস্পরে কুশল বিনিময় করলো।

যে উটটি ফলের বোঝা বয়ে এনে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল সে দীর্ঘ হাই তুলে বললো: কী আর বলবো, সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাটা দিন বোঝা টানি। আমার মনিবের যদি দুটো উট থাকতো তাহলে আমার একার পিঠে এতো বোঝা চাপাতো না। বোঝা টানতে টানতে আমার কোমরই বরবাদ হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই তুমিও আমার মতোই কষ্টে আছো। অপর উট বললো: হ্যাঁ, আমার অবস্থাও তোমার মতোই। আমার মনিবের ও একটাই উট। তবে আমি আমার পিঠে বেশি বোঝা চাপাতে দেই না। ফলের বোঝা বহনকারী উট জানতে চাইলো: কীভাবে? আমাকেও শেখাও। অপর উট বললো: যে করেই হোক আমি আমার পিঠের বোঝা হালকা করার চেষ্টা করি। এমন ভাব করি যেন আমি দুর্বল, আর নিতে পারি না।

উটটি আরও বললো: যেমন ধরো, গতকালই আমার মনিব আমার পিঠে ব্যাপক লবেণের বোঝা চাপিয়ে দিলো। তো যখনই আমি খাল পার হচ্ছিলাম পানিতে নামবার পর দুর্বল হয়ে পড়ার ভান করলাম এবং পানিতেই বসে পড়লাম। পানিতে লবণ ভিজে বোঝা হালকা হয়ে গেল। তুমিও এই বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারো। ফলের বোঝা বহনকারী উট বললো: বাহ! আমি তো বেশিরভাগই লবণের বোঝা টানি এবং খাল পাড়ি দিয়েই যাই। ভালোই হলো জেনে। এবার আমিও তোমার বুদ্ধিটা কাজে লাগাবো। এরপর দুই উটই তাদের মনিবের সঙ্গে পথে পাড়ি জমালো এবং যে যার পথে চলে গেল।

পরেরদিন মনিব উটের পিঠে লবণের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দিলো। আজ আর উট খুব একটা বিরক্তি প্রকাশ করছে না। উল্টো মনে মনে বললো-চাপাও যত খুশি! সামনে তো খাল পড়বে। চিন্তার কি! পানিতে বসে যাবো, ব্যস। বোঝা হালকা হয়ে যাবে আর আমি নাচতে নাচতে পথ চলতে চলতে গিয়ে বাজারে উঠবো। এভাবে উট যখন হাটতে হাটতে সেই উট খাল পার হতে গেল তখনই খালের মাঝখানে বসে পড়লো। মনিব যতই চেষ্টা করলো ওঠাতে পারলো না। স্বাভাবিকভাবেই পানির স্রোতে লবণ গলে বোঝা হালকা হয়ে গেল এবং আনন্দের সঙ্গে উট সামনের দিকে যেতে লাগলো। মনিব অবশ্য বিরক্তই হলো। সে ভাবতেই পারে নি তার উটটা এমন কাণ্ড করে বসবে। উটকে পেটানোর কথা ভাবলো মনে মনে। কেননা লবণের মালিক নিশ্চয়ই তার কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইবে। ভীষণ মন খারাপ মনিবের। পরদিন ভগ্নমনেই উটের পিঠে বোঝা তুললো এবং বাজারের দিকে রওনা হলো।

উট তো মনের সুখে বোঝা নিয়ে রওনা হলো। ঠিক ঠিক খাল পার হবার সময় আগের দিনের মতোই পানিতে বসে গেল। কিন্তু গতকালের মতো আজ আর বোঝা হালকা তো হলোই না বরং দ্বিগুণ বেড়ে গেল। কারণ হলো আজ উটের পিঠে লবণের পরিবর্তে কার্পেটের বোঝা চাপানো হয়েছিল। কার্পেট ভিজে আরো ভারী হয়ে গেল। সুতরাং পানি থেকে উঠে দাঁড়াতেই উটের কষ্ট হচ্ছিলো। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়াবার পর হাটতে পারছিল না। উট একবার ভাবলো ঝাঁকুনি দিয়ে বোঝা কিছুটা ফেলে দেবে। কিন্তু কাজ হলো না। রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা ছিল কার্পেট। সুতরাং কাজ হলো না। ঝাঁকুনি দিয়েও পিঠের বোঝা হালকা করতে পারলো না। অবাক হয়ে গেল উট।

উট যেহেতু বোঝার ভারে হাঁটতে পারছিল না, মনিব তাই উটকে লাঠি দিয়ে মেরে মেরে বাজারের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য হলো। মনিব মনে মনে ভাবলো উট আর কখনও খালের পানিতে গিয়ে বসে পড়বে না। কেননা আজ পানিতে বসে পড়ার কারণে বোঝার ব্যাপক ভার যেমন সইতে হলো তাকে তেমনি পিটুনিও খেতে হলো। আর এই শিক্ষাও হলো যে সকল মাল নিয়ে পানিতে বসলে ওজন হালকা হয় না। এই ঘটনার পর থেকে যখনই মানুষ খারাপ কাজের ফলও খারাপই হয়-এই কথা বলতে চায় কিংবা এমন খারাপ কাজ করে বসে যার পরিণতি যে কত খারাপ ভাবতেও পারে না, তখন বলে: উট সক্রিয় হয় ভেজা কার্পেটে।

পার্সটুডে/এনএম/১১/৬৬

মূল ফার্সি গল্পের রূপান্তর: নাসির মাহমুদ