জুলাই ০৪, ২০২৩ ১৫:০৮ Asia/Dhaka

প্রতিদিনই আমরা নানা ধরণের আবেগ-অনুভূতির মধ্যদিয়ে সময় পার করি। আমরা কখনো খুব খুশি হই, আনন্দে লাফিয়ে উঠি, কখনো খুব রেগে যাই, কখনো বিষণ্ণ থাকি, আবার কখনো কখনো বিদ্বেষ পোষণ করি।

কখনো কখনো অপ্রত্যাশিতভাবে আমাদের সামনে আনন্দের কিংবা বেদনার ঘটনা ঘটে যায়। এগুলো অনেকটাই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের ধরণ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন পরিস্থিতিতে কী ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত তা না জানার কারণে আমরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হই। এ কারণে আমাদেরকে আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের সঠিক কৌশল রপ্ত করতে হবে। অবশ্য অনুভূতি প্রকাশের বিষয়টি সব সময় পরিকল্পিত বা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন, কোথাও সবাই মিলে হাসছে, আপনিও সেখানে মন খুলে হাসতে পারেন এবং আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। এ ধরণের অবস্থায় আপনার অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণের দরকার নেই। অবশ্য কোথাও কোথাও আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।

ধরুন, আপনি সারা দিন কাজ করে ব্যক্তিগত গাড়িতে বাসায় ফিরছেন, রাস্তায় যানজটে আপনি অতিষ্ঠ। এমন সময় আপনার চোখে পড়ল আপনার পেছনের গাড়ির ড্রাইভার অযথাই গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছেন। আপনি তাকে হর্ন বাজানো বন্ধ করতে বলার পরও কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থায় আপনি রেগে গিয়ে রাস্তায় উল্টাপাল্টা কিছু করে ফেলতে পারেন। কিন্তু এমন সময় আপনার আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এ সময় স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ মানেই আরও সংকটে পড়ে যাওয়া। ধরুন, বন্ধুদের সাথে আড্ডায় কোন একজন বন্ধু আপনাকে নিয়ে কৌতুক করলো। এর ফলে অপমানিতবোধ করে তাৎক্ষণিকভাবে আপনি প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেললেন। এতে করে খুব বাজে একটা অবস্থা তৈরি হলো এবং বন্ধুত্বও ভেঙে গেলো। এ অবস্থায় আপনি যদি একটু সময় নিয়ে পুরো ঘটনাটি ভাবতেন এবং নিজেকে সে মুহূর্তে সংযত রেখে অন্য সময় বন্ধুকে বুঝিয়ে বলতেন তাহলে কিন্তু সে ঠিকই বুঝত। যদি নাও বুঝত তাহলেও আপনি নিজের মতো করে সরে আসতে পারতেন। কোন ঝামেলাই হতো না। তাই এমন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে চেষ্টা করতে হবে ঘটনার প্রভাবচিত্র নিয়ে ভাবার। এতে করে হঠাৎ দেখা দেওয়া অনুভূতির ধাক্কা মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।

যারা নিজের আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তারা অনেক বেশি সফল হতে পারেন। আপনি যখন বুঝতে পারবেন আপনি রেগে আছেন তখন অন্যের সঙ্গে আচার-আচরণে সতর্ক হতে পারবেন। এ অবস্থায় রাগ প্রশমনের চেষ্টা করতে হবে। এরপর যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিন এবং রাগান্বিত অবস্থায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না। মনে রাখবেন আপনার রাগ, আনন্দ, দুঃখ-এসব অনুভূতি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার অংশ। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এসব অনুভূতি থাকা জরুরি। এসব অনুভূতি আপনার মধ্যে থাকবে, কিন্তু এই অনুভূতির প্রভাবে আপনার পদক্ষেপ কী হবে সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে এই পদক্ষেপের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কোনো অনুভূতিকে সরাসরি খারাপ বা ভালো হিসেবে অভিহিত করা যায় না বরং এই অনুভূতির প্রভাবে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন, আপনার আচরণে কী প্রভাব পড়ছে তা বিবেচনায় নিতে হবে। ধরুন, আপনি একজনের ওপর কোনো কারণে রেগে আছেন, এর অর্থ এই নয় যে, আপনাকে তার সঙ্গে ঝগড়া করতে হবে। আপনার রেগে আছেন ভালো কথা, এটা আপনার স্বাভাবিক অনুভূতি। এই অনুভূতিটা ততক্ষণই কেবল ভালো যতক্ষণ না আপনি এর প্রভাবে ঐ ব্যক্তিকে গালিগালাজ বা মারধর না করলেন। 

কাজেই অনুভূতি থাকা দোষের নয়, এই অনুভূতিকে নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখা বিপজ্জনক। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে এই ক্রোধ, ঈর্ষা, দুঃখ-এসব নানা অনুভূতিকে নিজের আওতায় রাখা সম্ভব। এ জন্য প্রথমেই আপনার চিন্তা-বিশ্বাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আমাদের আবেগ-অনুভূতির মূলে রয়েছে আমাদের চিন্তা ও বিশ্বাস। আপনার চিন্তা ও বিশ্বাস যখন আপনাকে এই ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি কিছু একটা হারাতে বসেছেন তখনি আপনি দুঃখবোধ করেন। আপনি যখন অনুভব করেন নিজের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তখন আপনি ক্ষেপে যান। যখন অনুভব করেন একটা ভালো কিছু ঘটতে যাচ্ছে তখন আপনি খুশি হন, আনন্দ পান। আপনি একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন- এসব অনুভূতির সঙ্গে আপনার চিন্তা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনলে আপনার কাছে এখন যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হয়তো গুরুত্বহীন হয়ে উঠবে। কাজেই আপনার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন জরুরি।

আপনি হয়তো সব সময় অন্যের সামনে নিজেকে ছোট মনে করেন অর্থাৎ হীনমন্যতায় ভোগে। কারণ আপনি মনে করেন, আপনি ছাড়া সবাই উত্তম। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, আপনি জিম বা ব্যায়ামাগারে গিয়ে যখন দেখেন আপনার মতো উচ্চতা ও ওজনের একজন মানুষ আপনার চেয়েও তিন গুণ ওজন উঠাতে পারছে তখন আপনি বিস্মিত না হয়ে পারেন না। আপনি তখন ভাবতে থাকেন, আপনি একজন অযোগ্য ব্যক্তি এবং আপনাকে দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু আপনি যদি আপনার দৃষ্টিটা ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যান তাহলে দেখবেন আপনার অনুভূতিতে পরিবর্তন চলে এসেছে। আপনার মতো ওজন ও উচ্চতার আরেকজনকে যখন আপনি দেখবেন যে, আপনি যতটুকু ওজন উত্তোলন করতে পারেন ঐ ব্যক্তি সেটুকুও পারছেনা তখনি আপনার মধ্যে সেই দুঃখবোধ আর থাকবে না। এর অর্থ হলো, আপনি নিজের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর আরো বেশি আস্থা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এ অবস্থায় আপনি যে কাজ করছিলেন সেটাতে মনোযোগ দিন। এর ফলে আপনি আপনার হারানো শক্তি আবারও ফিরে পাবেন। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ