জুলাই ০৪, ২০২৩ ১৮:৩৬ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশাকরি সবাই ভালো ও সুস্থ আছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেন্ট মার্টিন প্রসঙ্গটি বেশ ডালপালা গজিয়ে গোটা দেশে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই পর্বে আমরা আলাপন অনুষ্ঠানে কথা বলেছি বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সঙ্গে।

তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন নিয়ে আমেরিকা এবং মাননীয় শেখ হাসিনার ডিপ্লমেটিক বক্তব্যকে সরাসরি অর্থে বিবেচনা করাটা একটা ভুল হতে পারে। এগুলোর প্রতীকী ব্যঞ্জনা এবং অর্থ থাকে।

তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের বঙ্গোপসাগর নিয়ে চায়না, ইন্ডিয়া, আমেরিকা এবং সম্প্রতি জাপানেরও প্রচুর আগ্রহ দেখা যায়।

নাঈমুল ইসলাম খান আরও বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই ভারতের সাথে বাংলাদেশের খুব ভালো সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে এবং সেটি যৌক্তিক।

সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব পুরোটাই তুলে ধরা হলো। এটি উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব নাঈমুল ইসলাম খান.বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে নিতে চায় আমেরিকা এবং বিএনপি দ্বীপটি ‘বিক্রির মুচলেকা’ দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়- বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। তবে আমেরিকা এই দাবি সরাসরি নাকচ করেছে। তাহলে কেন এই অভিযোগ? এর যৌক্তিকতা কী?

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

নাঈমুল ইসলাম খান: প্রথমত আমেরিকা এই বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছে এটি আপনি কোথায় পেয়েছেন? আমি পাইনি কোথায়। আমেরিকা বলেছে, তারা সেন্ট মার্টিন বিষয়ে কোনো আলাপ করে নাই। আমি এরকমটি দেখেছি। এখন ডিপ্লমেসিতে ভাষা, শব্দচয়ন এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই, কখনও আগ্রহ ছিল না এমন কথা আমি শুনিনি। সুতরাং আমি এটাকে ওপেন রাখছি। আমি জানি আমেরিকানরা পাবলিকলি কি বলেছে এবং আমি শুনেছি এবং জানি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কি বলেছেন। আমি শুধু এটুকুই বলব ডিপ্লমেসিতে এসমস্ত শব্দের সরাসরি অর্থে বিবেচনা করাটা একটা ভুল হতে পারে অধিকাংশ সময়। এগুলোর কিছু প্রতীকী ব্যঞ্জনা এবং অর্থ থাকে।

রেডিও তেহরান: জনাব নাঈমুল ইসলাম খান, তাহলে এটাকে ডিপ্লমেসির ভাষা হিসেবেই আপনি দেখছেন?

নাঈমুল ইসলাম খান: জ্বি, সেন্টমার্টিন না হয়ে যদি হয় আমাদের সমুদ্রে তেল গ্যাসের যে ক্ষেত্র আছে সেখানকার একটা ক্ষেত্র কিংবা ছয়টা ক্ষেত্র যদি আমেরিকা চায়-আর এগুলোকে কেন্দ্র করেই কিন্তু আমেরিকান একটা শক্তিশালী উপস্থিতি এখানে..

বঙ্গোপসাগর

আপনারা দেখবেন বঙ্গপসাগরে যে গভীর সমুদ্র বন্দর করার ব্যাপারে চীনের যে আগ্রহ ছিল এবং বাংলাদেশও প্রায় চীনকে দিয়ে দিচ্ছিল। বলা চলে দিয়ে দিয়েছিলই তারপর সেখান থেকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দাঁড়িয়ে বরং জাপানকে দিয়েছে। এগুলো কিন্তু খুবই ইন্টারেস্টিং। এসবের জবাব কিন্তু সরাসরি বাক্যে আমরা পাইনি। সুতরাং বঙ্গোপসাগরে ডেফিনেটলি চায়না, ইন্ডিয়া, আমেরিকা এবং সম্প্রতি জাপানেরও প্রচুর আগ্রহ দেখা যায়। আর আমি বিষয়টিকে সেভাবেই দেখি।

রেডিও তেহরান: জনাব নাঈমুল ইসলাম খান, সেন্ট মার্টিন নিয়ে রাজনীতিতে যে আলোচনা চলছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে- কী কারণে এটি এত গুরুত্বপূর্ণ?

নাঈমুল ইসলাম খান: সেন্ট মার্টিন দ্বীপটা বাংলাদেশের জন্য এমনতেই গুরুত্বপূর্ণ। এর অবস্থানের কারণে। চীনের যে প্রভাব মিয়ানমার নিয়ে, সেই মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের একদম নিকটবর্তী একটা অবস্থানে সেন্ট মার্টিন। বাংলাদেশে সমুদ্র বন্দরের যে সুবিধাটা চীন এখনও পায়নি। সেটার কারণে এখনও পর্যন্ত তারা মিয়ানমার দিয়েই বঙ্গোপসাগরের এন্ট্রিটা রেখেছে। কিন্তু চীন কখনও একা একটি পথের ওপর নির্ভরশীলতা রাখতে পারে না কিংবা রাখতে চাইবে না। সে চাইবে বাংলাদেশের সাথেও কিছু একটা হোক এ বিষয়ে। সুতরাং সেন্ট মার্টিন দ্বীপ লিটারেলি গুরুত্বপূর্ণ। এরসঙ্গে আমি এর আগের প্রশ্নের জবাবে বলেছি সেন্ট মার্টিন বলতে বাংলাদেশে কারও একটা একটা শক্তিশালী অবস্থানের কথাটাই মিন করতে হবে। সেটা একটা ভাসমান কিছুও হতে পারে। মনে করেন আমাদের এখানে গভীর বঙ্গোপসাগরে যদি একটা আমেরিকান প্লিট বা প্লিটের একটা অংশও যদি এখানে অবস্থান নেয়-সেটাও তো হতে পারে। দেখুন আমাদের কথাটা হলো-এইটা মেনে নেওয়াটা খুব  সহজ মনে করি যে বঙ্গোপসাগর এখন পশ্চিমাদের জন্য, চায়নার জন্য রাশিয়ার জন্য আমরা যে বলি ইন্দো প্যাসিফিক উদ্যোগ সেই উদ্যোগে বঙ্গোপসাগর অবশ্যই খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

শ্রোতাবন্ধুরা! আপনারা সেন্ট মার্টিন নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক ও জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খানের সাক্ষা ৎকার শুনছেন। ফিরছি শিগগিরি আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: জ্বি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগেও গ্যাস প্রসংগে বলেছেন- সস্তায় গ্যাস বিক্রি করতে চায়নি বলে ২০০১ সালে তার দল ক্ষমতায় আসতে পারেনি? এই অভিযোগ সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

নাঈমুল ইসলাম খান: দেখুন, গ্যাস বিক্রির ব্যাপারে বাংলাদেশের উপরে চাপ ছিল। এটা নিয়ে কি আপনার সন্দেহ আছে? ক্নিন্টন যখন আমেরিকার সিটিং প্রেসিডেন্ট এবং তিনি যখন বাংলাদেশ সফর করলেন তখনও আমাদের ওপরে  প্রচণ্ড চাপ ছিল যখন আমরা গ্যাস তৈরি এবং ইন্ডিয়াতে যেন রপ্তানি করি। আমেরিকানরা বলছে তোমাদের গ্যাস রপ্তানি কর। ফলে এটা বোঝা যায় আমেরিকাসহ ভারতীয়দের প্রবল আগ্রহ ছিল। এটি নিয়ে প্রকাশ্যে লেখালেখি বলাবলি হয়েছে। এটা কোনো গোপন আলোচনা নয়। ক্লিন্টন এসেও একথা বলেছেন। আবার প্রকাশ্যে এটাও আমরা দেখেছি যে শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশের জন্য রিজার্ভ যদি এই লেভেলে যায় তারপর আমরা চিন্তা করব। এটাও কিন্তু ঐ সময়ের প্রকাশিত কথা। সুতরাং এটা প্রমাণ করে যে নির্বাচনের আগে গ্যাস উত্তোলন এবং তা রপ্তানির প্রসঙ্গটি একটি আলোচ্য বিষয় হবে তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

রেডিও তেহরান: জনাব নাঈমুল ইসলাম খান, এ পর্বের শেষ যে বিষয়টি জানতে চাইব সেটি হচ্ছে,- আওয়ামী লীগের বিরোধীরা পাল্টা অভিযোগ করে থাকেন- আওয়াম লীগ ভারতকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। কী বলবেন আপনি?

নাঈমুল ইসলাম খান: জ্বি, প্রথম কথা হলো আওয়ামী লীগের ডেফিনেটলি ভারতের সাথে একটা বড় ধরনের কোলাবোরেশন আছে। তো ভারতকে যেটা বিশেষ সুবিধা বলা হচ্ছে সেটার মধ্যে অন্যতম হিসেবে যেটাকে রেফার করা হয় সেটা হচ্ছে ভারতকে নিশ্চয়তা দিয়েছে বাংলাদেশের ভূমি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহারের জন্য  অনুমোদন দেয়া হবে না। এখানে থেকে ভারতের ওপরে কোনোরকমের আক্রমণ, কোনো ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। এখন আপনিই বলুন এটা কি বিশেষ সুবিধা নাকি এটা সঙ্গত কাজ। এটা কি উচিত যে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়া হবে ভারতবিরোধীদের সেদেশে অন্তর্ঘাত সৃষ্টির জন্য। আমি তো মনে করি এটি খুবই স্বাভাবিক একটা অ্যাকশান। আর এই বিষয়টি শেখ হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করেছে। আর সেজন্য ভারত বেশ কৃতজ্ঞ বোধ করে। এরবাইরে আর কি সুযোগ সুবিধা!

রেডিও তেহরান: তো জনাব নাঈমুল ইসলাম খান, সেন্ট মার্টিন ইস্যুটি নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নাঈমুল ইসলাম খান: আপনাকেও ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৪

ট্যাগ