জুলাই ১০, ২০২৩ ২১:০৩ Asia/Dhaka

মানুষ কখনো খুব খুশি হয়, আনন্দে লাফিয়ে ওঠে, কখনো উওেজিত হয়, কখনো বিষণ্ণ, কখনো ক্ষুব্ধ হয় আবার কখনো বিদ্বেষ পোষণ করে। মানুষের এই আনন্দ-বেদনা প্রকাশের যে উপায় এগুলোই হচ্ছে আবেগ। প্রচলিত মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞায়, আবেগ মানুষের মস্তিষ্কের একধরনের সংকেত পদ্ধতি।

আমাদের যদি কিছু ভালো না লাগে, তাহলে আমরা রেগে যাই, কখনো আবার আমাদের মনে ভয় কিংবা ঘৃণার সঞ্চার হয়, মন খারাপ হয়। কিছু ভালো লাগলে আমরা খুশি হই। এই সংকেতগুলো আমাদের মস্তিষ্ক আগে অনুধাবন করে। সংকেত পেয়ে আমরা আমাদের যুক্তি, অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিই কী করব। আবেগের ভালো দিক মন্দ দিক দুটোই আছে। ইতিবাচক আবেগ যেমন মানুষকে বিকশিত করতে সাহায্য করে, তেমনি নেতিবাচক আবেগ মানুষকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ আবেগে থাকা অবস্থায় মানুষ সহজেই কোনো যুক্তি মানতে চায় না। কেবল নিজেকে গুরুত্ব না দিয়ে ভালো-মন্দ বিচার-বিশ্লেষণ করে যৌক্তিকভাবে নিজের অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করাই আবেগ নিয়ন্ত্রণ।

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অনেক কিছুই হারাতে হয়। তাই আবেগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানা জরুরি। আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। কোনো কিছু নিয়ে তাৎক্ষণিক হৈ-হুল্লোড় না করে যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে কাজ করতে হবে। যে বিষয়গুলো আপনাকে আবেগপ্রবণ করে, সেগুলোর বিষয়ে সতর্ক থাকুন। প্রয়োজনে অন্য কিছুর প্রতি মনোযোগী হোন। যদি কারো মাধ্যমে মনঃক্ষুণ্ণ হোন, তাহলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে সমাধান করুন। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে সতর্কতার পাশাপাশি প্রয়োজন সচেতনতা। কোন কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে রাখতে পারছেন না, সেগুলো খেয়াল করুন। রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, অস্থিরতা ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়ের কারণ চিহ্নিত করতে পারলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। আপনি কোন কোন পরিস্থিতিতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তা চিহ্নিত করে লিখে রাখতে পারেন। নানা পরিস্থিতিতে নিজের আবেগ-অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য লিখে রেখে পরবর্তীতে ঐসব পরিস্থিতিতে নিজেকে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করুন। 


যেসব বিষয় নিয়ে ভাবলে আপনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং ক্ষোভ ও দুঃখবোধ হয়, সেসব বিষয় মনে আসলে চিন্তার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলুন। সে সময় ভালো কোনো স্মৃতির কথা মনে করুন। চিন্তাধারা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করলে কম আবেগাপ্লুত হবেন। যেসব বিষয় আপনার আবেগ-অনুভূতিকে নাড়া দেয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষোভ ও কষ্টে ভোগায় সেসব বিষয় ভুলে থাকার চেষ্টা করুন। ঐসব বিষয় মনে পড়লেই অন্য কোনো দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করুন, অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ুন। এর ফলে আপনি এ ধরণের মানসিক অবস্থা এড়াতে সক্ষম হবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে যেসব বিষয় খুব বেশি সাহায্য করবে তাহলো ইতিবাচক চিন্তা। জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। ব্যায়াম করুন,  নিজেকে সময় দিন, অন্যকে সাহায্য করুন। এভাবে কাজ করলে আবেগ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আবেগ হাতের মুঠোয় রাখতে আত্মবিশ্বাসও জরুরি। আত্মবিশ্বাস থাকলে অনেক বড় বড় সমস্যাও মোকাবেলা করা সম্ভব। তবে আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি আবেগ নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমেই আমাদেরকে ক্রোধ, ভয় বা হতাশার মতো নেতিবাচক মানসিক অবস্থার সঠিক কারণ চিহ্নিত করতে হবে। এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। এসব কারণ দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। নির্ভরযোগ্য আত্মীয়, নিকটজন, শিক্ষক, বন্ধু এদের সাথে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। এরপর নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির দেওয়া পরামর্শ মেনে চলতে হবে। ভয় বা হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ জরুরি। রাগী বা ক্রুদ্ধ মানুষকে কেউ পছন্দ করে না, এ কথা সবসময় মনে রাখতে পারলে রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে। অবশ্য আবেগ নিয়ন্ত্রণের অনুশীলনের জন্য সবচেয়ে সুন্দর সময় হচ্ছে বাল্যকাল ও কৈশোর। তবে যাদের বয়স বেড়ে গেছে তাদেরকেও এই অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। তবে যারা কম বয়সী তাদের জন্য পরামর্শ হলো, আপনারা দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবেন না। লেখাপড়ায় ভালোভাবে মনোনিবেশ করবেন। সময় পেলে পাঠ্যবই ছাড়াও ভালো ভালো বই পড়তে হবে, বেড়াতে যেতে হবে, খেলাধুলা করতে হবে। এসব বিষয় আপনাকে জ্ঞানের পরিধি বাড়াবে এবং যেকোনো পরিস্থিতিকে যুক্তি দিয়ে অনুধাবনের শক্তি বাড়াবে।  
মনে রাখতে হবে নিয়ন্ত্রিত আবেগ মানুষের জীবনকে সুন্দর ও উপভোগ্য করে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক তৈরিতেও নিয়ন্ত্রিত আবেগ জরুরি। কেবল চাকরি পাওয়ার আগে নয় বরং আপনি যখন কোনো চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের মৌখিক পরীক্ষা দেন, তখন যারা পরীক্ষক হিসেবে আপনার সামনে উপস্থিত থাকেন, আমাদের আচার-আচরণ, আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি তাদের মনেও এক ধরনের অনুভূতির জন্ম দেয়। তারা যখন কোনো প্রার্থীকে চাকরির জন্য নির্বাচন করেন, তখন তাদের সেই অনুভূতি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা পালন করে। সার্বিকভাবে বলা যায়, আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে জীবন চলার পথ অনেক বেশি সহজ হয়ে ওঠে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ