জুলাই ১০, ২০২৩ ২১:১০ Asia/Dhaka

বয়ঃসন্ধিকালে বা কৈশোরে যেসব আবেগিক প্রকাশ দেখা যায় শৈশব থেকেই সেগুলোর সূত্রপাত ঘটে। তবে বয়ঃসন্ধিকালে এড্রিনাল গ্রন্থি খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ কারণে  এ সময় বিভিন্ন আবেগের বিকাশেও তীব্রতা দেখা যায়।

কৈশোরের শেষ পর্যায়ে বিপরীত লিঙ্গের ছেলে মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রবণতা বাড়ে। এ সময় ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে যৌন চেতনা দেখা দিতে শুরু করে। এ কারণে তাদের আবেগের ধরণেও পরিবর্তন আসে। আবেগমূলক বৈশিষ্ট্যর দিক থেকে এ বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অন্য স্তরের ছেলেমেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি পার্থক্য দেখায়। এ বয়সে সবরকম আবেগের বিকাশ হয়। আবেগিক আচরণের প্রকাশ কোনো কোনো সময় খুব বেশি হয়। আবার কোনো এক সময় একদম আবেগিক আচরণের প্রকাশ থাকে না। এই বয়সীরা কখনো কখনো আনন্দ খুব তীব্র ভাবে প্রকাশ করে। আবার কখনো এমন বিমর্ষ অবস্থায় থাকে যে, দেখে মনে হয়, সে কখনোই আনন্দের মধ্যে ছিল না। অনেকের মধ্যে মানসিক চাঞ্চল্য বা মানসিক ধৈর্যেরও অভাব দেখা যায়। 

অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এর বাইরে বন্ধুত্বের জন্য অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এ সময়ে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা বিকাশের কয়েকটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। প্রথমত একই লিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়। অর্থাৎ ছেলেরা, ছেলে বন্ধু পছন্দ করে ও মেয়েরা, মেয়ে বন্ধু। বিশেষ একজনকে নয়, তারা পুরো দলকেই বেশি ভালোবাসে। কৈশোরের বন্ধুত্ব অনেক গভীর ও স্থায়ী হতে দেখা যায়। কারণ বন্ধুর কাছে মনের কথা বলার মধ্যে আছে নিজের মানসিক উদ্বেগ, অস্বস্তি ও সংঘাতের হাত হতে অব্যাহতি। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি উৎসাহ ও আকর্ষণ দেখা যায়। মেয়েদের সম্পর্কে ছেলেরা ও ছেলেদের সম্পর্কে মেয়েরা সচেতন হয়ে ওঠে ও আলোচনা করে। পরে তা প্রেম ও ভালোবাসায় পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়। বয়ঃসন্ধিকাল সমগ্র জীবন থেকে একটি বিচ্ছিন্ন অংশ নয়। এই সময়ও রয়েছে রাগের মারাত্মক প্রভাব। রাগ কৈশোরের নতুন কোনো আবেগ নয়। শিশু অবস্থা থেকেই রাগের প্রকাশ। তবে বয়ঃসন্ধিকালে রাগের কারণে পার্থক্য পাওয়া যায়। 

গবেষণায় দেখা গেছে, এরা বিশেষ ব্যক্তিদের অপছন্দ করে, তাদের উপর রাগ হয়। এর মূলে অপমান, অবিচার, অকৃতকার্যতা ইত্যাদি থাকতে পারে। বিরোধিতার ভাব থেকেও রাগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া, ভয়ের অনুভূতিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বয়ঃসন্ধিকালের ভয়ে সংশয় মেশানো থাকে। এই সংশয় বা ভয় আচরণের অসামঞ্জস্যতার জন্য হতে পারে। আবার দ্রুত শারীরিক পরিবর্তন ও যৌন চাহিদার চাপেও হতে পারে। সংশয়ের সঙ্গে আবার অপরাধী মনোভাবও দেখা যায়। এ বয়সের ছেলেমেয়ের মধ্যে আশংকা এবং অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রকাশ খুব বেশি। এই আবেগিক সংঘাতের জন্য সে নিজে যেমন দায়ী তেমনি দায়ী বয়স্করাও। কিশোর-কিশোরীদের নিজেদের মর্যাদা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা এই ধরনের আবেগিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। বয়স্কদের এ সময় আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি। কিন্তু আমরা অনেকেই কিশোরদেরকে খুব ছোট বা বাচ্চা হিসাবে বিবেচনা করে থাকি, আবার উল্টোটাও হয়। এমন মনোভাব সঠিক নয়।

আবার আমরা কখনো কখনো তাদেরকে বেশি পরিপক্ব ভেবে সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেই এবং তাদের কাছ থেকে বড়দের মতো আচরণ প্রত্যাশা করি। এর ফলে আমাদের কিশোর বয়সী সন্তানেরা তাদের অবস্থান সম্পর্কে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। এর ফলে তাদের মধ্যে আশংকা ও অন্তর্দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কৈশোরে অনেকের মধ্যে আন্ত-সচেতনতার জন্য গর্ববোধও দেখা যায়। নিজের সম্পত্তি এবং বৈশিষ্ট্য জাহির করার চেষ্টা করে এই বয়সী সন্তানেরা। আসলে দেহের আকস্মিক পরিবর্তন, যৌন পরিণতি মানসিক ক্ষমতার পূর্ণতা লাভ এ সব মিলে কৈশোরে একটা ছোটখাটো বিপ্লব ঘটে যায়। শৈশবের সুপ্রতিষ্ঠিত আবেগের সংগঠনটি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। নিজের বহুমুখী পরিপূর্ণতার উপলব্ধি তাকে বিপুল আনন্দ দেয়। আবার তার সামর্থ্য ও প্রয়োজনের প্রতি সমাজের উদাসীনতা ও অবহেলা তার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ফলে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী অন্তর্মুখী ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। মনে বিক্ষোভের ভাব জাগে। (মিউজিক)

কিশোর-কিশোরীদের অনেকেই মনে করে, তারা কোথাও সুবিচার পাচ্ছে না। কারো কারো মধ্যে অনমনীয়তা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তবে মনে রাখতে হবে, এই সময়টা হচ্ছে সবদিক থেকে সুগঠিত হয়ে ওঠার আদর্শ সময়। এ সময়টায় তারা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য, সুনীতি-দুর্নীতি, ধর্ম ইত্যাদি নিয়ে চিন্তা করে এবং সঠিক উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময়ই সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং ভুল পথে ধাবিত হয়। এ বিষয়েও অভিভাবকদেরকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। এ সময় বাবা-মা বা অন্যদের বকুনি বা কটাক্ষ সহ্য করতে পারে না, ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কখনো কখনো অভিমান করে ২/৩ দিন না খেয়ে থাকার ঘটনাও ঘটে। কৈশোরের শেষ পর্যায়ে পূর্ণ যৌন বিকাশ ঘটে। স্বাভাবিক জৈব কারণে তাদের মধ্যে প্রেমানুভুতি ও যৌন অনুভূতি ইত্যাদি সৃষ্টি হয়। গবেষকদের মতে, মোটামুটি ভাবে ২০ বছর নাগাদ ছেলেদের যৌন তাড়না চরমে উঠে এবং মেয়েদের ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এ অবস্থা দেখা দেয়। অবশ্য যৌন আবেগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে এবং জাতি ও সংস্কৃতির উপরও এই ভিন্নতা যথেষ্ট নির্ভরশীল। 

কিশোর-কিশোরীরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপ ও তিরস্কারের ভয়ে তাদের নিজস্ব আবেগ-অনুভূতি সহজে প্রকাশ করতে চায় না। তাদের ভয় থাকে যে, তাদের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে বড়রা ক্ষুব্ধ হবেন, এছাড়া রয়েছে সামাজিক অনুশাসনের ভীতি সব মিলিয়ে এরা আবেগ চেপে রাখে। বয়ঃসন্ধিকালে সন্তানেরা আনন্দ পায়  নানা উৎসব উদযাপন করার মাধ্যমে। এছাড়া বেতার-টিভি ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমের অনুষ্ঠানমালাও তাদেরকে আনন্দ দেয়। বন্ধুত্ব, গান, খেলাধুলা ও উপহার আদান-প্রদানের মাধ্যমেও তারা আনন্দ উপভোগ করে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ