জুলাই ২০, ২০২৩ ১২:১৯ Asia/Dhaka

মহররম অনেকেরই মনে তথা অনুসন্ধিৎসু সত্য-প্রেমিকদের মনে এ প্রশ্ন জাগায় যে এমন একটি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ কিভাবে নবী-পরিবারের ওপর চালানো সম্ভব হয়েছিল মহানবীর ওফাতের পর প্রায় ৫০ বছরের মধ্যেই!

আসলে আমরা যদি গভীরভাবে দৃষ্টি দেই তাহলে দেখতে পাব যে নবী-পরিবার তথা তাঁর আহলে বাইতের সদস্য আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলীও অনেক জুলুমের শিকার হয়েছেন কারবালার ঘটনার আরও অনেক আগে। হযরত আলীর শাসনামলে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক বিদ্রোহ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এক বিদ্রোহী খারেজির হাতেই শহীদ হয়েছিলেন আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী (আ)।  বলা হয় এ ঘটনায় মুয়াবিয়া ও তার সহযোগীদের যোগসাজশ ছিল। এরপর ইমাম হাসানও (আ) মুয়াবিয়ার মাধ্যমে অশান্তির শিকার হয়েছিলেন এবং তাঁকেও বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয়। আর ইসলামের হাতে পরাজিত শক্তি আবু সুফিয়ানের বংশ তথা উমাইয়া চক্র ও মুয়াবিয়ার হাতও কিভাবে শক্তিশালী হয়েছিল সেটাও ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে যায়! অন্য কথায় বহু প্রভাবশালী গোত্র ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হিংসার শিকার হয়ে এসেছেন নবী পরিবার ইসলাম-পূর্ব ও পরবর্তী যুগগুলোতে।

কুচক্রী ও কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের ষড়যন্ত্রে মহানবীর (সা.)  হিজরতের প্রায় ৪০ বছর পরই ইসলামের নামে চালু হয় রাজতন্ত্র। ভোগবাদও গোত্রবাদসহ জাহিলি যুগের নানা প্রভাব আবারও প্রাধান্য পেতে থাকে। ফলে এক পর্যায়ে একজন মদ্যপায়ী, ব্যভিচারী, জুয়াড়ি ও পুরোপুরি ফাসিক চরিত্রের এক ব্যক্তি ইসলামী খেলাফতের কর্ণধার হয়ে বসে। এর আগে হযরত আলী ও নবী বংশের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় এত বেশি বিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হয়েছিল যে সেখানকার অনেকেই যখন শুনেছিল যে হযরত আলী কুফার মসজিদে আততায়ীর আঘাতে আহত হয়ে শহীদ হয়েছেন তখন তাদের অনেকেই বিস্ময়ে বলাবলি করছিল যে, আলী নামাজ পড়তেন নাকি!?

শহীদ সম্রাটের মহাবিপ্লব ছিল ইসলামকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের নিদর্শন

 

কবি কাজি নজরুল ইসলামও লিখেছেন: এক ধর্ম এক জাতি তবু ক্ষুধিত সর্বনেশে/ তখতের লোভে এসেছে এজিদ কমবখতের বেশে/ এসেছে সীমার এসেছে ‘কুফার’ বিশ্বাসঘাতকতা/ ত্যাগের ধর্মে এনেছে লোভের প্রবল নির্মমতা/ ... একদিকে মাতা ফাতেমার বীর দুলাল হোসেনী সেনা/ আরদিকে যত তখ্‌ত-বিলাসী লোভী এজিদের কেনা ..... এই ধূর্ত ও ভোগীরাই তলোয়ারে বেঁধে কোরআন/ আলীর সেনারে করেছে সদাই বিব্রত পেরেশান/ এই এজিদের সেনাদল শয়তানের প্ররোচনায়/ হাসান হোসেনে গালি দিতে যেতো মক্কা ও মদিনায়!!

ইয়াজিদ ও তার দলবলের প্রকাশ্য পাপাচার দেখেও একমাত্র হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ছাড়া কেউ তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বা প্রকাশ্যে কথা বলতেও সাহসী হয়নি। আসলে সে যুগে উমাইয়া শাসকগোষ্ঠী ও তাদের সহযোগীরা ইসলামের লেবাস পরেই ইসলামের বারোটা বাজানোর আয়োজন পাকাপোক্ত করছিল। ইসলামের এমন দুর্দিনে যিনি স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, মানবিকতা ও সত্যের ঝাণ্ডা উঁচিয়ে প্রকৃত ইসলামকে আবারও জাগিয়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি ছিলেন মহামতি হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)।  হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) লক্ষ্য করেন যে, ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে পুরোপুরি বিলুপ্তির ব্যবস্থা করছে উমাইয়া রাষ্ট্রযন্ত্র।  তাই ইসলামকে রক্ষার ও মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর গুরু দায়িত্ব পালনের জন্য এগিয়ে আসেন এই মহান ইমাম। তিনি নিজেই এ প্রসঙ্গে বলেছেন:

“আপনারা জেনে রাখুন যে এরা (বনি ঊমাইয়ারা) সব সময়ই শয়তানের সঙ্গী। তারা আল্লাহর নির্দেশ ত্যাগ করেছে এবং প্রকাশ্যে  ফাসাদ বা দুর্নীতি ও অনাচার করে যাচ্ছে। তারা আল্লাহর বিধানকে নিষিদ্ধ করেছে এবং জনগণের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেছে। তারা আল্লাহ যা নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন সেসবকে হালাল বা বৈধ করেছে এবং আল্লাহ যেসবকে হালাল করেছেন সেসবকে হারাম করেছে।”

প্রতিটি দিনই আশুরা

 

হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর বিপ্লবের লক্ষ্য সম্পর্কে  বলেছেন,“হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আমাদের পক্ষ থেকে যা হচ্ছে তা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়। দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলও আমাদের লক্ষ্য নয়। বরং তোমার দ্বীনকে বাঁচিয়ে রাখা,  তোমার ভূখণ্ডে সংস্কার আনা ও নির্যাতিত ব্যক্তিদের স্বস্তি দেয়ার জন্যই  আমরা কিয়াম করেছি যাতে ধর্মের ফরজ বিষয় ও বিধানগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।”

এভাবে বিশ্বনবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে ইমাম হুসাইন (আ) ইসলামের সবচেয়ে দুর্দিনে ইসলামকে রক্ষার জন্য তথা দুনিয়ার বুকে ইসলামকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য কারবালার মহাবিপ্লবে ঝাঁপিয়ে পড়েন।  মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আন্তরিক চিত্তে যথাসময়ে এই জরুরিতম দায়িত্বটি পালনের জন্য নিজের সন্তান ও জীবনসহ সব কিছু বিলিয়ে দেয়ার মত সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন হযরত ইমাম হুসাইন (আ)। তাই মহান আল্লাহও তাঁর একনিষ্ঠ এই প্রেমিক ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য বিশ্বের সব যুগের মু'মিন মানুষের হৃদয়ে দান করেছেন অনন্য মমত্ববোধ আর শ্রদ্ধা।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ