জুলাই ২২, ২০২৩ ১৯:১৬ Asia/Dhaka

একটি ইসলামী সমাজ ততক্ষণ ইসলামের ওপর অবিচল থাকতে পারে যতক্ষণ সে সমাজে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের সংস্কৃতি চালু থাকবে।

সাধারণ জনগণ এই মৌলিক কাজ থেকে দূরে সরে পড়ে যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে এই প্রথা কড়াকড়িভাবে মেনে চলা না হয়। ফলে এক সময় প্রতিটি বিচ্যুতি জনগণের কাছে গা-সওয়া হয়ে যায় কিংবা জনগণ এ বিষয়ে উদাসীন হয়ে পড়ে। আর এ জন্যই অতীতে অনেক জাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছেন যদিও তাদের মধ্যে ধর্মের অন্য অনেক দিকের চর্চাকারী অনেক মানুষ ছিলেন। মহান আল্লাহ সেই জাতিকে ধ্বংসের হুকুম দিলে ফেরেশতারা বলতেন এখানে তো অমুক অমুক ব্যক্তিরা জুলুমে জড়িত নয়! তখন মহান আল্লাহ বলতেন, জুলুমে জড়িত না হলেও তারা জালিমদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও এমনকি মৌখিক প্রতিবাদও করছে না বলে তারাও জুলুমের সহযোগী হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। বলা হয় অন্যায় যে করে ও অন্যায় যে সহে তারা উভয়ই সমানভাবে ঘৃণ্য

শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন (আ) তাঁর আন্দোলন বা ক্বিয়াম শুরু করার প্রাক্কালে স্পষ্টভাবেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ক্ষমতার লোভ বা অনর্থক বিদ্রোহ করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি বলেছিলেন,আমি সৎ কাজের প্রতি আদেশ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে চাই। অতএব, লোকেরা যদি আমাকে গ্রহণ করে তো করুক, আর গ্রহণ না করলে তাদেরকে আল্লাহর উপর অর্পণ করব, আর তিনি হচ্ছেন উত্তম বিচারক।

যে রাত্রে ইমাম হুসাইনের কাছ থেকে ইয়াজিদের বাইআত গ্রহণ করতে লোক পাঠানো হয়েছিল এবং তিনি বাইআত করেন নি, তার পরের দিন মারওয়ান তাঁর সাথে দেখা করে এবং তাঁর কাছে গিয়ে বলে যে : “আমার একটি উপদেশ শুনুন!” তিনি বললেন:”বল!” সে বলল:”আসুন! ইয়াজিদের কাছে বাইআত করুন; এটি আপনার দ্বীন ও দুনিয়ার জন্যে কল্যাণকর হবে!” তিনি বললেনঃ যদি মুসলিম জাতি, ইয়াজিদের মত একজন প্রতিনিধি ও আমীরের আনুগত্য করে তাহলে ইসলামের সাথে খোদা হাফেযী করতে হবে এবং তাকে বিদায় জানাতে হবে!” অন্য এক স্থানে ইমাম হুসাইন (আ) বলেন : ইয়াজিদ একজন মদ্যপায়ী লোক। যাদেরকে হত্যা করা নিষেধ তাদেরকে সে হত্যা করে। তাই আমার মত লোক কখনই তার মত লোকের আনুগত্য করতে পারে না।

মহানবী (সা) বলেছেন, হুসাইন আমা হতে ও আমি হুসাইন হতে!

হযরত সায়্যিদুশ্ শুহাদার (আ.) শাহাদতের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কিত যে সব হাদিস রাসূল (সা.) এবং হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে, সেসবের প্রেক্ষিতে, সমস্ত মুসলমানই সেই বিপ্লব বা আন্দোলন যে ঘটবেই সে বিষয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন; আর যেহেতু তারা জানতেন এবং রাসূলের (সা.) কাছ হতে শুনেছিলেম যে, হযরত সায়্যিদুশ্ শুহাদা (আ.) ইরাকের ভূমিতে শহীদ হবেন, তাই ইবনে আব্বাস ও অন্য অনেকেই তাঁকে ইরাকে যেতে নিষেধ করছিলেন। রাসূল (সা.) কারবালার অল্প পরিমাণ মাটি, উম্মে সালমাকে দিয়েছিলেন, এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি যেন তা একটি বোতলে সংরক্ষণ করেন এবং তিনি তাকে বলেছিলেন : “যখন এই মাটি রক্তে পরিবর্তিত হবে তখন বুঝবে যে, আমার সন্তান ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হয়েছে !”

হযরত সায়্যিদুশ্ শুহাদার (আ.) শাহাদতের খবরটি এমন এক ভবিষ্যদ্বাণী ছিল যা মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কয়েকবার তাঁর সাহাবীদেরকে বলেন। ফলে এই সংবাদটি অধিকাংশ সাহাবীই শুনেছিলেন। ইমাম হুসাইন যে ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত না করে পবিত্র মক্কায় আশ্রয় নিয়েছেন সে সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। আমার মত ব্যক্তি যে ইয়াজিদের মত মদ্যপায়ী ব্যক্তির আনুগত্য করতে পারে না – ইমামের এই মন্তব্যের সংবাদও সর্বত্র প্রচারিত হয়েছিল। এভাবে ইমামের বক্তব্য জনগণের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টির পটভূমি তৈরি করেছিল।

অন্যদিকে কুফার জনগণের এক বিপুল অংশ ইমাম হাসানের শাহাদাতের পর থেকেই মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ও ইমাম হুসাই্নের প্রতি আনুগত্যের বাইয়াত নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। কিন্তু ইমাম তাদেরকে মুয়াবিয়া জীবিত থাকা পর্যন্ত সক্রিয় হতে নিষেধ করেছিলেন। কারণ মুয়াবিয়া ইসলামী ধর্মাচারের কিছু খোলস বজায় রেখেছিল। অন্যদিকে ইয়াজিদ সেইসব খোলসও দূরে ছুঁড়ে ফেলে প্রকাশ্যে জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হত। এসব পাপাচারের মধ্যে ছিল প্রকাশ্যে মদপান, জুয়া খেলা, সমকামিতা ও  যাদেরকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ পরিবারের এমন আপনজনদের সঙ্গেও ব্যভিচার করা!

মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর কুফাবাসীদের চিঠির সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়। ইমাম হুসাইনের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন-জানানো ওইসব চিঠির সংখ্যা কয়েক হাজার ছিল অথবা ওইসব কোনো কোনো চিঠিতে হাজার হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষরও ছিল। ওদিকে ইমাম হুসাইনের বাইয়াত গ্রহণ ছাড়া ইয়াজিদের খেলাফত সুদৃঢ় হতে পারে না ভেবে ইয়াজিদি প্রশাসন হয় ইমামের বাইয়াত গ্রহণ অথবা ইমামকে হত্যা করতেই হবে এমন নীতি গ্রহণ করে।  এ অবস্থায় ইমাম যদি কুফাবাসীদের দাওয়াত গ্রহণ না করতেন তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত ইতিহাসে এ কথা প্রচারিত হত যে কুফার হাজার হাজার বা লক্ষাধিক ব্যক্তি ইমামকে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও ইমাম হুসাইন তাদের ডাকে সাড়া দেননি! ফলে ইমাম যদি তাদের ডাকে সাড়া না দিতেন তাঁকে ভীরু বা কাপুরুষ বলে ইতিহাসে উল্লেখ করা হত! #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ