আগস্ট ২৩, ২০২৩ ২১:১২ Asia/Dhaka

মানুষ সামাজিক জীব। তাই মানুষের দরকার হয় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের এবং রক্ষা করতে হয় সামাজিকতা ও সুসম্পর্ক। যুব সমাজও এর ব্যতিক্রম নয়।

তাদের জন্যও সামাজিক জ্ঞান ও সামাজিক দূরদৃষ্টি বা প্রজ্ঞা অর্জন জরুরি। একজন তরুণ ও যুবক বা যুবতী তার সমবয়সী সমাজকে এড়িয়ে চলতে পারে না। তাই এই শ্রেণীর মধ্যে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করার মত যোগ্যতা তাকে অর্জন করতে হয়। এ ছাড়াও নানা যোগ্যতা ও প্রতিভা তুলে ধরা বা সেসবের বিকাশের জন্য সমবয়সী গ্রুপের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখা তাদের জন্য জরুরি। বিপদে আপদেও বন্ধুত্ব বেশ কাজে লাগে। তবে অনেক বেশি বন্ধু থাকলে সেখানে মাঝে মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টির আশঙ্কাও থাকে! বন্ধুত্ব গড়া যতটা সহজ বন্ধুত্ব রক্ষা করা তত সহজ নয়। তাই বন্ধু নির্বাচনে সবারই সতর্ক থাকা উচিত। পবিত্র কুরআনের ভাষায় (ফুরক্বান-২৮) পরকালে যেন এমনটি বলতে না হয়: হায়! আমি যদি অমুকের সঙ্গে বন্ধুত্ব না রাখতাম! –বলা হয়, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।

অপরিণামদর্শী, বখাটে বা ভবঘুরে কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করা তরুণ ও যুব সমাজের জন্য খুবই ধ্বংসাত্মক। যুব ও তরুণ সমাজ যাতে পথভ্রষ্ট বা বিভ্রান্ত চিন্তাধারার কারো খপ্পরে না পড়ে সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করে দেয়া অভিভাবক মহলের দায়িত্ব। বর্তমান যুগে অনেক কিশোর কিশোরী বা তরুণ-তরুণী এবং যুব সমাজের কেউ কেউ ইন্টারনেটে এমন কারো সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে যারা তাদেরকে মাদকাসক্তি, হতাশা, নাস্তিক্যবাদ, উগ্র বা বিভ্রান্ত নানা মতবাদ, ধর্মমত বা বিভ্রান্ত রাজনৈতিক মতবাদের অনুসারী করছে। ফলে বাড়ছে মাদকাসক্তি, আত্মহত্যা ও উগ্র সন্ত্রাসী তৎপরতা।

যেসব পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো নয় বা তারা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন সেসব পরিবারের সন্তানরা খুব সহজেই বিপথগামী লোকদের ধ্বংসাত্মক বন্ধুত্বের শিকার হতে পারে। এ ছাড়াও ইন্টারনেটের অশালীন নানা সাইট তরুণ ও যুব সমাজকে অপসংস্কৃতি ও অশালীনতার শিকার করছে। তাই এইসব বিষয়ে অভিভাবক মহল ও বিশেষ করে বাবা মাকে সচেতন থাকতে হবে এবং এইসব বিপদের বিষয়ে তথা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিষয়ে যুব ও তরুণ সমাজকেও সচেতন রাখতে হবে।

কিশোর ও তরুণ এবং যুব সমাজ যেন তাদের আসল কাজ তথা শিক্ষামূলক তৎপরতা  বাদ দিয়ে তাদের  অনুপযুক্ত কাজে বেশি মাত্রায় জড়িয়ে না পড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত অভিভাবক মহলের। তরুণ ও যুব সমাজ যদি নানা ধরনের বদ অভ্যাসের অধিকারী সমবয়সী শ্রেণীর সঙ্গে চলাফেরা করে তাহলে তাদের মধ্যেও ওইসব বদ-অভ্যাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।মহানবী (সা)'র মতে তারাই হলেন সেরা বন্ধু যাদের দেখলে মহান আল্লাহর কথা বা চিন্তা স্মরণে আসে ও যারা মানুষকে আধ্যাত্মিকতার কাছাকাছি করে। একদিন মহানবীর (সা) কাছে হযরত আব্বাস প্রশ্ন করেন, সবচেয়ে ভালো সঙ্গী কে? মহানবী (সা) বলেন,  যাকে দেখলে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণে আসে এবং যার কথা তোমাদের জ্ঞান বাড়িয়ে দেয় ও যার কাজকর্ম তোমাদের মধ্যে পরকালের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে।

সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ

 মহানবীর (সা) দৃষ্টিতে ভালো বন্ধু বা সঙ্গী হচ্ছেন আতর বিক্রেতার মত। এই বিক্রেতা আতর দান না করলেও তার আতরের খুশবু চলে আসে সঙ্গীদের কাছে। আর খারাপ সঙ্গী হচ্ছে এমন কর্মকারের মত যে সঙ্গীদের কাপড়ে আগুন ধরিয়ে না দিলেও তার কামারশালার দুর্গন্ধ অন্যদের কাছে চলে আসে!বন্ধুত্বকে জোরালো বা স্থায়ী করার ক্ষেত্রে যুব ও তরুণ সমাজ বেশি দক্ষতা দেখাতে সক্ষম। এর নানা নীতি ও কৌশলের মধ্যে বন্ধুত্বের ঘোষণা অন্যতম। মহানবী (সা) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো এক ভাইকে ভালোবাসতে চাও তখন তা তার কাছে ঘোষণা করে দাও বা জানিয়ে দাও। এ কাজ বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখবে এবং ভালোবাসাকে জোরদার করবে।-বন্ধু নির্বাচনের আরেকটি ভালো পন্থা বা নীতি হল বিপদের সময় পরীক্ষা করে দেখা। অর্থাৎ বিপদের সময়ও যে বন্ধুত্ব বজায় রাখে বা বিপদের সময় বিপদে ভয় না পেয়ে বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে এমন ব্যক্তির সঙ্গেই সুদৃঢ় বন্ধুত্ব রাখা উচিত।

মহানবী (সা) বলেছেন,  যে ব্যক্তি তার বন্ধুর প্রয়োজন মেটাতে সচেষ্ট হয় মহান আল্লাহও তার অভাব বা চাহিদাগুলো মেটানোর পদক্ষেপ নন। কেউ যখন কোনো মুসলমানের সমস্যাগুলোর কোনো একটি সমস্যা সমাধান করে দেন তার প্রতিদান হিসেবে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বা বিচার দিবসে তার সমস্যাগুলো বা বিপদগুলোর যে কোনো একটি বিপদ দূর করে দেবেন।  বিপদের সময়ই প্রকৃত বন্ধু কে তা চেনা যায় এবং বিপদের সময়কার বন্ধুই হল আসল বন্ধু। কেউ যদি অভাব বা বিপদের মুখে পড়ে তখন সে কারো কাছে সাহায্যের আবেদন জানানোর আগেই যদি কেউ তাকে সাহায্য করেন তাহলে সেই সাহায্যের মূল্য অনেক বেশি। ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, তোমরা যখন বুঝতে পারবে যে তোমার বন্ধু একটি বিষয়ে সাহায্যের মুখাপেক্ষী, তখন এই অপেক্ষায় থেকো না যে সে তোমার কাছে এসে সাহায্য চাইতে বাধ্য হোক।  

মহানবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর আস সাদিক (আ)'র মতে ভালো বন্ধুর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল: সে প্রকাশ্যে ও গোপনে সব অবস্থায় তোমার প্রতি হবে একই ধরনের। সে তোমার কল্যাণকে নিজের কল্যাণ ও তোমার অকল্যাণকে নিজের অকল্যাণ বলে ভাববে। বড় কোনো পদ ও ব্যাপক সম্পদের অধিকারী হলেও তোমার সঙ্গে বন্ধুত্বে তা কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিপদের সময় সে তোমাকে পরিত্যাগ করবে না এবং তোমার কল্যাণের জন্য সে তার সর্বশক্তি নিয়োগে কুণ্ঠিত হবে না। - যার মধ্যে এইসব বৈশিষ্ট্য থাকবে বন্ধুত্বের দিক থেকে সে হবে পরিপূর্ণ বন্ধু। আর যার মধ্যে এসব গুণের একটিও দেখা যায় না তাকে কখনও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত নয়।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ