সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩ ২১:৪১ Asia/Dhaka
  • দেশে দেশে নারীর বিরুদ্ধে মার্কিন সহিংস আচরণ-(পর্ব-এক)

নারীর বিরুদ্ধে মার্কিন সহিংস আচরণ বিষয়ক অনুষ্ঠানে আমরা নারীদের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের অসদাচরণ ও অপরাধগুলোর বর্ণনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বিষয়টি এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে নরীদের ব্যাপারে মার্কিন আচরণের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা গেলে স্বাধীনতা, মানবাধিকার বিশেষ করে নারী অধিকারের ব্যাপারে তাদের দাবীর অসারতা ফুটে উঠবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গত ২৪৭ বছরের দীর্ঘ ইতিহাসে তারা ২২৭টি যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ২২টি দেশে তারা আগ্রাসন চালিয়েছে। এসব আগ্রাসনের প্রধান শিকার হয়েছে বেসামরিক মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। গণহত্যা, বাস্তুচ্যুতি, যৌন নির্যাতন, পারমাণবিক ও রাসায়নিক বোমা হামলার ফলে নারী ও শিশুরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমেরিকা মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গণহত্যা, বাস্তচ্যুতি, যৌন নির্যাতন এবং নিরপরাধ মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুহত্যার ঘটনায় তাদের অপরাধের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তবে, আমেরিকার অপরাধ তদন্ত করতে আমাদের খুব বেশিদূর যেতে হবে না। প্রয়োজন শুধু ইতিহাসের পাতাগুলোকে একটু উল্টানো। বিশেষ করে গত  শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের ২৬ আগস্টে জাপানে পরমাণু বোমা হামলার দিকে নজর দেয়া যাক। সেসময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল। যুদ্ধ চলাকালে আমেরিকা বহুবার জাপানে হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু এবার তারা জাপানের বিরুদ্ধে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়।

আমেরিকা প্রথমে জাপানের হিরোশিমা নগরীতে 'লিটেল বয়' নামে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালায়। মুহূর্তের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এতে অন্তত ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয় এবং বোমার তেজস্ক্রিয়তায় বহু মাস ও বছর ধরে আরো হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে ধুকে ধুকে প্রাণ হারায়। ২৬ আগস্টে প্রথম পরমাণু বোমা হামলার ঠিক তিন দিন পর ৯ আগস্টে আমেরিকা জাপানের কিউশু দ্বীপের পশ্চিমে অবস্থিত নাগাসাকিতে ফ্যাটম্যান নামে দ্বিতীয় পরমাণু বোমা হামলা চালায় যা হিরোশিমাতে ব্যবহৃত পরমাণু বোমার চেয়ে অনেক বড় ছিল এবং এ হামলায় কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলা ছিল প্রকৃত অর্থে একটি গণহত্যা। আমরা যদি এই বোমা হামলার ধ্বংসাত্মক প্রভাবগুলোর একটি ক্ষুদ্র  অংশ উল্লেখ করতে চাই তবে আমরা দেখবো "সাদাকো" নামের একটি শিশু যে কিনা প্রথম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিল। এরপর আরো বহু শিশু এভাবে জন্ম নিয়েছে এবং খুব অল্প সময় তারা বেঁচে ছিল।

তবে, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার ঘটনা আমেরিকার প্রথম ও শেষ নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস বিশ্বজুড়ে হামলা, আগ্রাসন ও অপরাধযজ্ঞের তালিকা অনেক দীর্ঘ। আর এই অপরাধযজ্ঞের প্রধান শিকার হয়েছে নারীরা। এ প্রসঙ্গে আমরা ভিয়েতনামের "মাই লাই" গ্রামের কথা উল্লেখ করতে পারি যেখানে আধুনিক যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৬৮ সালের ১৬ মার্চ মার্কিন সেনাবাহিনীর ১১তম ব্রিগেডের চার্লি কোম্পানির সৈন্যরা ওই গ্রামের  বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়েছিল। সশস্ত্র গেরিলা গোষ্ঠী 'ভিয়েত কং'-এর সমর্থকরা ওই গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে এমন সন্দেহের ভিত্তিতে মার্কিন সেনারা সেখানে অভিযান চালায়। স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে বর্বর আচরণ করা, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলা, প্রতিটি জীবন্ত প্রাণীকে হত্যা করা, সমস্ত খাদ্য ধ্বংস করা এবং বিষ প্রয়োগ করে পানির কুপগুলো নষ্ট করার নির্দেশে দেয়া হয়েছিল মার্কিন সেনাদেরকে। অথচ মার্কিন সেনারা যখন গ্রামে প্রবেশ করে তখন কোনো রকম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়নি এবং নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। নারী-পুরুষ, শিশু যাকেই সামনে পেয়েছে তাকেই হত্যা হত্যা করেছে।

মার্কিন সেনারা কোনো যাচ-বিচার ছাড়াই ওই গ্রামের ৫০৪ জনকে হত্যা করে।  তারা নির্যাতন, অঙ্গচ্ছেদ, ধর্ষণ এবং লাশ টুকরো টুকরো করার মাধ্যমে এসব লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড চালাতো।

আগ্রাসী মার্কিন সেনারা মাই লাই গ্রামের ১০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী কমপক্ষে ২০ ভিয়েতনামী নারীকে ধর্ষণ করেছে যার মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী নয় জন মেয়ে ছিল। খ্যাতনামা সাংবাদিক শিমোন হার্শ ভিয়েতনামের ওই গ্রামে মার্কিন সেনাদের বর্বরতার কিছু কাহিনী তুলে ধরে বলেছেন, 'অনেককে ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে গলায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছিল। আবার কিছু অল্পবয়সী নারী ও মেয়েকে যৌন নিপীড়নের পর হত্যা করা হয়েছিল। সে কারণে মাই লাই গ্রামের নাম মানুষ কখনো ভুলে যাবে না। কেননা ওই গ্রামের মানুষ ভয়ঙ্কর গণহত্যার শিকার হয়েছিল।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন সেনাদের নৃশংসতার ব্যাপারে খুব কম ছবিই প্রকাশিত হয়েছে। তবে একটি ছবি ছিল খুবই হৃদয়বিদারক। ১৯৬৯ সালে লাইফ ম্যাগাজিনে ছবিটি প্রকাশিত হয় এবং এর বিবরণে বলা হয় " 'মাই লাই' গ্রামে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার আগ মুহূর্তে তারা ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে একত্রে সড়সড় হয়েছিল। ছবির ডান পাশে কালো শার্ট পরা একটি মেয়েকে দেখা যায়, সে তার শার্টের বোতাম বন্ধ করতে ব্যস্ত। এই একটি ছবি দেখে বোঝা যায় যে 'মাই লাই' গ্রামের ওই নারী ও শিশুরা ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হওয়ার আগ মুহূর্ত কি কঠিন ও দুঃসহ সময় পার করেছে''।

যাইহোক, মার্কিন সামরিক বাহিনী ভিয়েতনাম যুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা গোষ্ঠীকে দমনের জন্য তাদের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্রও ব্যবহার করেছিল। এই রাসায়নিক অস্ত্রের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কয়েক দশক ধরে জন্মগত রোগব্যধী নিয়ে ভিয়েতনামে বহু শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এইসব শিশুদের অনেককে বিশেষ স্থানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে এবং তাদের সুস্থ হবার কোনো আশা নেই।

আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমেরিকার বর্বর আগ্রাসনের নানা রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরছি। আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের নৃশংস আচরণ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। আফগানিস্তান এমন একটি দেশ যা বিভিন্নভাবে মার্কিন আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ২০০২ সালে দক্ষিণ আফগানিস্তানের কাকরাক গ্রামে সংঘটিত নৃশংস ঘটনার কথা উল্লেখ করা যায়। ওই বছরের জুলাই মাসে মার্কিন সেনারা এই গ্রামের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালিয়ে ৪৮ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল। #

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ