নভেম্বর ২৬, ২০২৩ ১৪:৫৩ Asia/Dhaka

সৃজনশীল মানুষের চিন্তা-ভাবনা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। তারা সব সময় নতুন নতুন তথ্যের সন্ধানে থাকে। তাদের কল্পনা শক্তিও হয় প্রখর। কল্পনার জগতে নানা ভাবনা তাকে হাতছানি দেয়। এ ধরণের মানুষেরা ইতিবাচক চিন্তার অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকে।

স্কুলের একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সৃজনশীলদেরকে সহজেই আলাদা করতে পারেন। কারণ সাধারণত একটা ক্লাসে মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থীই একটু ভিন্নধর্মী ও ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন করে থাকে। তাদের প্রশ্নের ধরণ দেখেই বুঝা যায় তাদের সৃজনশীল শক্তি তুলনামূলক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সব মানুষের মধ্যেই সৃজনশীলতা রয়েছে, সবার মধ্যেই এমন কিছু গুণ রয়েছে যা তাকে সেরা অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। কেবল ঐ ব্যক্তির দায়িত্ব হলো নিজের সেই সৃজনশীলতাকে আবিষ্কার করা। এই শক্তিকে আবিষ্কার করার জন্য অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা সবাই দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। সৃজনশীলতা আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক বড় ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে।

সৃজনশীলতা আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে সাহায্য করে, আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে, জীবনকে একঘেয়েমি অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রভাব রাখে। যারা সৃজনশীল তারা নিজেকে তুচ্ছ অস্তিত্ব না ভেবে নিজেকে মূল্যায়ন করতে পারে এবং তাদের শক্তি-সামর্থ্যও ক্রমেই বাড়তে থাকে। সৃজনশীল শক্তি তাকে নতুন নতুন কাজে উৎসাহ যোগায় এবং জীবনে নির্দ্বিধায় নতুন নতুন পরীক্ষা চালাতে সাহায্য করে। ব্যর্থতার আশঙ্কা তাকে আটকে রাখতে পারে না। এ ধরণের মানুষ জীবনের নানা সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রে ভয় পায় না। তারা জীবনের নানা সমস্যা সমাধানে তার সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে উৎরে উঠতে সক্ষম হয়। তারা নানা সমস্যাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে বিবেচনা করে এবং সমস্যাকে সুযোগে পরিণত করে ফেলে। সমাজে এমন অনেককেই দেখা যায়, যারা সব সময় ক্লান্ত থাকেন, কোনো কাজের প্রতি তাদের স্পৃহা থাকে না। এর কারণ হলো, তারা কোনো মতো শুধু দিনাতিপাত করতে চান। তারা কোনো পরিকল্পনা ও লক্ষ্য ছাড়াই সময় অতিবাহিত করেন। কিন্তু সৃজনশীলতা মানুষকে তার জীবনে নতুনত্ব আনতে সাহায্য করে। জীবনে বৈচিত্র্য আনতে পারদর্শী করে তোলে। 

যারা প্রতিদিন সকালে অফিসে যান এবং অফিসে কিছু রুটিন ওয়ার্ক করে বিকালে বাড়ি ফিরে আসেন তাদের জীবনে যদি বৈচিত্র্য আনা যায় তাহলে কাজের মান ও গতি এবং জীবন সম্পর্কে উপলব্ধিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটতে বাধ্য। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত উদ্ভাবক ও ব্যবসায়ী টমাস আলভা এডিসনের এই বিখ্যাত উক্তিটি আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন। তিনি বলেছেন- আমি ব্যর্থ হইনি, কেবল ১০ হাজার উপায় খুঁজে বের করেছি যা কাজ করে না। এই কথার অর্থ হলো, সৃজনশীলতা হচ্ছে অভিজ্ঞতা অর্জন। কখনো কখনো ভুল করার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, যা নতুন পথ উন্মুক্ত করে। আপনি যদি একজন সৃজনশীল মানুষকে কারো সঙ্গে বা কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করতে চান তাহলে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত হবে একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। আপনি যদি লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে, তারা তাদের কাজ করার সময় তাতে প্রতিনিয়ত নানা পরিবর্তন আনেন যাতে কাজটি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং কাঙ্ক্ষিত অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। 

মানুষের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার মূল ভিত্তি হচ্ছে তার মন তথা মস্তিষ্ক। সৃজনশীলতা অনুশীলনে সর্বপ্রথম মনকে উন্মুক্ত করুন যেন সে নতুন কিছু গ্রহণ করতে পারে  অর্থাৎ ইনপুট নিতে পারে। যেহেতু শিক্ষা-প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে সৃজনশীলতা বাড়ানো যায় সেহেতু আপনি যত দ্রুত সৃজনশীলতা বাড়ানোর পথে হাঁটবেন তত বেশি লাভবান হতে পারবেন। শিশুকাল থেকেই এই দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব। আপনার সৃজনশীলতার পেছনে অন্য অনেক কিছুর পাশাপাশি তথ্যের সমৃদ্ধিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি আপনি লেখক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার এ সংক্রান্ত সৃজনশীলতার পেছনে নিশ্চিতভাবেই অন্য লেখকদের বইগুলো ভূমিকা রেখেছে। আপনি অনেক বই পড়েছেন বলেই লেখার ক্ষেত্রে নতুন একটা ধারা তৈরি করতে পেরেছেন। সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় একটা নিছক ধারণা মানুষের চিন্তাভাবনা এবং কর্মের মধ্যে দিয়ে বাস্তবে রূপান্তরিত হয়। 

পুরনো ও বিদ্যমান ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় নতুন ধারণা। সহজেই নতুন কিছু গ্রহণ ও তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ধরুন আপনার মনে নতুন একটা ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, আপনার মাথায় তা ঘুরপাক খাচ্ছে। যত-বেশি সম্ভব আপনি ঐ ধারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর তথ্য সংগ্রহ করুন। চিন্তাভাবনা করুন। আপনার মনকে আরও ভাবতে দিন। ভাবনাগুলো কোথাও লিখে রাখুন যেন এলোমেলো আইডিয়াগুলো মিলে ধারণাটা পরিপূর্ণতা লাভ করে। বিষয়টার আরও গভীরে প্রবেশ করুন। তা নিয়ে রিসার্চ করুন। আপনার যা যা জানা দরকার বলে মনে করছেন সেগুলো জানুন। আপনার সৃজনশীল সৃষ্টিকে নতুন রূপ দিতে যদি বই কিনতে হয় কিনুন। যা কেনা দরকার কিনুন, প্রয়োজনে যতটুকু সম্ভব এই কাজে অর্থ ব্যয় করুন। শেষ পর্যন্ত এই আইডিয়াটা কাজ না করলে তা বাদ দিন। নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করুন। সৃজনশীলতা মানে এই নয় যে, এমন আইডিয়া দিতে হবে যা পূর্বে কেউ কখনো শুনেনি চোখেও দেখে নি। বরং আপনি পূর্বের কোন ধারণার সাথে নতুন ধারণা জুড়ে দিতে পারেন। এর ফলে কিন্তু নতুন কিছুই তৈরি হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীতে কোন ধারণা মৌলিক নয়। সেটা পূর্বের ধারণার বর্ধিত, পরিবর্তিত কিংবা নতুন সংস্করণ মাত্র। 

আইডিয়াগুলো নিয়ে কাজ করতে করতে একটা পর্যায়ে একটু ব্রেক নিন অর্থাৎ বিরতি নিন। এ সময়টায় আপনার অবচেতন মনকে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে দিন। আপনার সক্রিয়তা কমিয়ে দিন। এর ফলে আপনার অবচেতন মন একটা ভালো ফলাফল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবে। একটা পর্যায়ে আপনার জড়ো করা সকল তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে, মস্তিষ্ক আপনার সমস্যার একটা যুতসই সমাধান দিয়ে দিতে পারে। এরপর এই সমাধানকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে লক্ষ্য করুন। সম্ভাব্য বিকল্পগুলোর সাথে বিচার করুন। এরপর আপনার ধারণাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করুন। আপনার সৃজনশীলতা থেকে সৃষ্টি হবে নতুন কিছু। উপকৃত হবে গোটা সমাজ তথা গোটা বিশ্ব। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ