ডিসেম্বর ০২, ২০২৩ ১৬:২৯ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ২ডিসেম্বর শনিবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর অনলাইন ভার্সন ও ই পেপারের বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশল নিয়ে নাখোশ দলীয় প্রার্থীরা -প্রথম আলো
  • বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে-যুক্তরাষ্ট্র-ইত্তেফাক
  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট দীর্ঘায়িত হবে, স্থিতিশীলতা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক হবে চ্যালেঞ্জিং-মানবজমিন
  • দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মাঠপ্রশাসন ও পুলিশে বড় রদবদল চায়  ইসি-যুগান্তরের প্রধান শিরোনাম
  • আওয়ামী লীগ হয়তো জিতবে, কতটা মূল্য দিতে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে-ডেইলি স্টার বাংলা

কোলকাতার শিরোনাম:

  • উত্তর-পূর্বে বিজেপিকে হারাতে তৎপর কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ ১৫ বিরোধী দল -আনন্দবাজার পত্রিকা
  • মানসিক চাপের শিকার শহরের কমবয়সিরা, আশঙ্কা নয়া সমীক্ষায়-সংবাদ প্রতিদিন
  • গোটা দিল্লিতে এখনও বাতাসের গুনমান ‘অত্যন্ত খারাপ’-গণশক্তি
  • বাংলাদেশে ভূমিকম্প, প্রভাব পড়ল বাংলাতেও-আজকাল

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি। দৈনিকগুলো ভিন্ন ভিন্ন খবরকে প্রধান শিরোনাম করেছে।

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কৌশল নিয়ে নাখোশ দলীয় প্রার্থীরা-প্রথম আলো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ার কৌশল নিয়ে নাখোশ দলের মনোনীত প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে নৌকা প্রতীক নিয়েও হেরে বসতে পারেন অনেকে—এমন দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে; আছে সংঘাতের আশঙ্কাও। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করছেন, এর মাধ্যমে দলের তৃণমূলে একটা স্থায়ী বিভক্তি তৈরি হতে পারে। যা জোড়া লাগাতে হিমশিম খেতে হবে। 

এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে শরীয়তপুর-২ আসনের নড়িয়া এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণে দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক, মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কোনো আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীরা অনেকটা একা হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাঁদের অনেককে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেন। তাঁদের মধ্যে আছে সংঘাতের আশঙ্কাও। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, ১৭ ডিসেম্বরের পর স্বতন্ত্র কৌশলে কিছুটা বদল আসতে পারে। তবে সেই বদলটা কী, তা এখনো স্পষ্ট নয় নেতাদের কাছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে দল থেকে নির্দেশনা আসবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। 

মুখ্য তিনটি বিষয়: 

আওয়ামী লীগের ‘স্বতন্ত্র কৌশল’ তৃণমূলে একটা স্থায়ী বিভক্তি তৈরি করতে পারে।

৭০-৮০টি আসনে দলীয় প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। 

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বরের পর স্বতন্ত্র কৌশলে কিছুটা বদল আসতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক প্রতিবেদন-বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে-ইত্তেফাকের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। শুক্রবার (২ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেররিজম–২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এ তথ্য উঠে এসেছে।

২০২২ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী সহিংসতার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, কর্তৃপক্ষ জঙ্গিদের কঠোরভাবে অনুসরণ অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে আল-কায়েদা-অনুমোদিত গোষ্ঠী, জামাত-উল-মুজাহিদিন (জেএমবি) এবং আইএসআইএস-সম্পর্কিত জেএমবি শাখা নব্য জেএমবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়শই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির উপর জোর দিয়েছিলেন, যদিও বাংলাদেশ আল-কায়েদা এবং আইএসআইএসের মতো বিশ্বব্যাপী সংগঠিত জিহাদি জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতি অস্বীকার করে চলেছে। অক্টোবরে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ আল-কায়েদা অনুপ্রাণিত একটি গোষ্ঠী জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়া (জেএএইচএস)কে ধ্বংস করার জন্য অভিযানের ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশ কয়েক ডজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে। যাই হোক, নিরাপত্তা বাহিনীর অন্যান্য উপাদান- বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি থেকে ১৫ নেতা বহিষ্কার-যুগান্তর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের ১৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের ১৫ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

দৈনিকটির অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, বিএনপি ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে আসা অপরাধ নয়। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।বিএনপির ‘করুণ দশার’ কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো দলকে ভাগ করা আওয়ামী লীগের নীতি নয়। দলের ভুল নীতির জন্য বিএনপির এই দশা। নেতৃত্বে হতাশ হয়ে, বিএনপি নেতারা নির্বাচনে আসছেন। বিএনপির এক দফা গভীর গর্তে পড়ে গেছে। ভুলের চোরাবালি আটকে গেছ বিএনপির আন্দোলন। 

দ্য রিও টাইমসের খবর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট দীর্ঘায়িত হবে, স্থিতিশীলতা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক হবে চ্যালেঞ্জিং-মানবজমিন

বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনের পথ শুধু এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, এতে বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট শুধু দীর্ঘায়িত হবে, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্যও চ্যালেঞ্জিং হবে। ‘বাংলাদেশজ ইলেকশন্স: এ নেক্সাস অব ডমেস্টিক আনরেস্ট অ্যান্ড গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথা লিখেছে ব্রাজিলভিত্তিক অনলাইন দ্য রিও টাইমস।

এতে রোকো ক্যালডেরো লিখেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন মৌসুম অশান্ত। এতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক ধরন বিপরীতমুখী। উভয় দেশই একটি স্থিতিশীল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সমর্থন করে। কিন্তু তাদের পদ্ধতির মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনে জোর দিয়েছে। যারা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পক্ষান্তরে নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে ভারত। তারা এখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন দিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনে কারসাজির অভিযোগের মধ্যে তিনি চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হতে চান।

তবে কারসাজির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। অন্যদিকে এই নির্বাচন বর্জন করছে বিরোধী জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ আরও কিছু দল। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করছে। বিএনপির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপড়েনের ইতিহাস আছে। অভিযোগ আছে, ভারতবিরোধী বিদ্রোহীদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়েছে বিএনপি। ফলে শেখ হাসিনার প্রতি তাদের সমর্থন প্রভাবিত হয়েছে। 

তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দৃঢ়। তারা এখানে গণতান্ত্রিক অখণ্ডতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই অবস্থা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের বিপরীত, আঞ্চলিক অগ্রাধিকারের সঙ্গে এতে মতবিরোধ প্রতিফলিত। বাংলাদেশের পশ্চাৎগামী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যবহার করছে বিএনপি। 

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহকারী এবং বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। এতে জটিলতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত হওয়ার সমালোচনা করেছে চীন। তারা সমর্থন করে শেখ হাসিনার সরকারকে। এতে ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের কৌশলগত মূল্য প্রতিফলিত হয়। 

ওদিকে দেশে পুলিশ, আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সহিংস সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরকার দমনপীড়নকে কৌশল হিসেবে নিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির হাজার হাজার সদস্য গ্রেপ্তারির মুখে আছেন। এই টলমলে পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটকে জোরালো করে তুলেছে। 

আওয়ামী লীগ হয়তো জিতবে, কতটা মূল্য দিতে হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে-ডেইলি স্টার বাংলা

বহির্বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের আইনি ব্যবস্থার কোন ধরনের ভাবমূর্তি তুলে ধরছি?

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি প্রায়ই ১৯৭১ সালের সেই গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোর কথা স্মরণ করি। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে পেরে আমরা কতটা ভাগ্যবান ছিলাম, সেই কথা ভাবি। আমরা সেই গৌরব, ত্যাগ ও সাহসিকতার সময়টিকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করি এবং আমাদের অন্তর্নিহিত অভা, অদম্য আকাঙ্ক্ষা ও স্বাধীনতার চেতনাকে জাগিয়ে তুলতে চাই, যেটি আমাদের সত্ত্বাকে আচ্ছন্ন করেছিল, সাহসী ও ভীরু, সবাইকে দুঃসাহসিকতায় পূর্ণ, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার মতো কাজে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং গণহত্যাকারী সেনাদের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত করেছিল।

সেই সময় নিঃসন্দেহে আমাদের সহযোদ্ধারাই ছিলেন অনুপ্রেরণা ও শক্তির উৎস। একইসঙ্গে কবিতা, দেশাত্মবোধক গান, অতীত সংগ্রামের ইতিহাস এবং অবশ্যই, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে সময়ের একটি গান আমার স্মৃতিতে চির অম্লান:

মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি

মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি'

ছয় বছর বয়সী সিয়াম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পড়তে যেয়ে আমার এই গানের কথা মনে পড়ে যায়। গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে সিয়াম তার বাবা কারাবন্দী বিএনপি নেতা আবুল কালামের (৩৫) একটি ছবি তুলে ধরেছিল। সেখানে আরও উপস্থিত ছিল নুরজাহান (৪) ও তার বড় বোন আকলিমা (৭)। তাদের বাবা গ্রেপ্তার এড়াতে লুকিয়ে আছেন। তাদের মা হাফসা আখতারকে তুলে নেওয়া হয় এবং তার বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আনা হয়। তার পরিবারের ভাষ্য, তিনি কখনোই কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এর পরও আদালত তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আবেদন মঞ্জুর করে। শিশুগুলো তাদের দাদা-দাদী, নানা-নানীর সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিতে এসেছে। চার বছরের নুরজাহানের চোখ-মুখ দেখেই তার মায়ের শূন্যতা বোঝা যাচ্ছিল। সে এর আগে আর কখনোই মাকে ছাড়া বাসা থেকে বের হয়নি। এই বিক্ষোভ কেন হচ্ছে বা এখানে কী হচ্ছে, সে বিষয়ে কিছুই বুঝতে না পেরে শুধু মাইক্রোফোনে তার বাবা-মায়ের নাম শুনে তারস্বরে কেঁদে উঠেছিল শিশুটি। তার মতো আরও অনেক শিশু ছিল সেখানে। একেবারে ছোট ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ছিল সেখানে, যারা সবাই তাদের বাবা-মায়ের খোঁজে এসেছে—বিশেষত, বাবাদের—যারা আটক আছে।

একটু আগে যে গানটির কথা উল্লেখ করেছি, সেটা কী স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে নিয়ে লেখা হয়নি? এই শিশুরাই কি সেই 'ফুল' নয়, যাদেরকে বাঁচানোর জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি? আমরা কী আমাদের তরুণ প্রজন্মের মুখের হাসি অটুট রাখতে অস্ত্র ধরিনি? আমরা কি আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে দায় দিতে পারি, যদি তারা ধরে নেয় যে শহীদদের প্রতি আমাদের সকল অঙ্গীকার ফাঁকা বুলি ছাড়া কিছুই নয়? আমাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কি আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যবোধগুলোকে প্রহসনে পরিণত করিনি? আমরা কি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মিথ্যা বলেছি?

নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, মারধর, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভয়-ভীতি প্রদর্শনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা গত মঙ্গলবার প্রশ্ন তোলেন, 'বিএনপি করা কি অপরাধ?'। বুধবার বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একটি সংগঠনের দাবি করে, ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে বিরোধীদলের ২০ হাজার ৩২৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিএনপির। আইনজীবীরা দাবি করেন, মোট ৮৩৭টি 'সাজানো ও গায়েবি' মামলায় ৭৩ হাজার ১২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া, পুলিশ ও অন্যান্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে একই সময়ে ৮ হাজার ২৪৯ জন আহত হয়েছেন এবং এক সাংবাদিকসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন।

তাহলে কি আমরা এটাই ধরে নেব যে, বিরোধীদলের কর্মীরা, বিশেষত যারা বিএনপির সদস্য, তারা সবাই হঠাৎ অপরাধী হয়ে উঠেছেন? কর্তৃপক্ষের উত্তর হবে: যারা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত, শুধু তাদেরকেই আটক করা হচ্ছে, বিএনপি কর্মীদের নয়। বিষয়টি যদি এরকমই হয়, তাহলে বিএনপি যখন হাজারো মানুষ নিয়ে (কখনো লাখো মানুষের অংশগ্রহণে) বড় সমাবেশের আয়োজন করেছিল, তখন কেন সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি? কেনই বা পাঁচ থেকে দশ বছরের পুরনো মামলাগুলোকে হঠাত করে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে, ঠিক নির্বাচনের আগে? এসব ঘটনা কি এক সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে না যে, আমাদের আইনি ব্যবস্থা এখন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে, বা আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যবহার হচ্ছে?

এই মুহূর্তে বেশ কিছু ঘটনা ঘটছে যা আমাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

প্রথমত, বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেপ্তার, জোর করে বাসায় ঢুকে হেনস্তা, তাদেরকে খুঁজে না পেলে পরিবারের সদস্যদের ধরে নিয়ে যাওয়া, ইচ্ছেমত মামলায় জড়ানোসহ আরও অনেক কিছুর জন্য পুলিশকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সার্বিকভাবে এমন এক ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যে বাধ্য হয়ে দলটির অনেক কর্মী এখন বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে দুইটি ঘটনা ঘটেছে: দলের সেই কর্মীদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে ও তাদের পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়েছে। এদের অনেকেই চরম অর্থ সংকটে আছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের মনে ভয় ঢোকাতে পেরেছে পুলিশ। এটাই আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতার চিত্র।

দ্বিতীয়ত, আমাদের আইনি ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দুইভাবে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে। ১) যে কাউকে অভিযুক্ত করা যায়, এবং এ ক্ষেত্রে মামলাগুলোর পেছনের যুক্তি যেমনই হোক না কেন—খুব সম্ভবত গ্রহণ করা হবে; এবং ২) জামিন দেওয়ার বিষয়টিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অধিকার নয়, বরং সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল এবং উপযুক্ত কারণ ছাড়াই জামিন আবেদন নাকচ হতে পারে। এর অর্থ হলো, আসামি হলেই কারাবরণ করতে হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রিমান্ডেও যেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সম্প্রতি খাদিজাতুল কুবরার বিরুদ্ধে মামলাটি বিবেচনা করতে পারি। তাকে জামিন পেতে আটবার আবেদনের প্রয়োজন পড়ে, শেষ পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ আদালতে গড়ায়। এর মধ্যে পেরিয়ে যায় ১৪ মাস।

আইন এখন আর নাগরিকদের সুরক্ষা কবচ নয়, বরং ভীতি ও দমন-পীড়নের উৎস। আজকের দিনে, যেকোনো মানুষকে, যেকোনো মামলায়, যেকোনো সময় এবং যেকোনো অজুহাতে অভিযুক্ত করা যেতে পারে—এবং এ ক্ষেত্রে পুলিশই বিচারকের ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের আইনি ব্যবস্থা তাকে মুক্ত করার কোনো দায় নেবে বলে মনে হয় না। আমাদের আইন 'অজ্ঞাতনামাদের' বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সুযোগ দেয়, যাদের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন থেকে শুরু করে কয়েক ডজন, এমনকি শত শতও হতে পারে। এতে পুলিশ যেকোনো মানুষকে অভিযুক্ত করার সুযোগ পেয়ে যায়, বিশেষত, যাদের সঙ্গে রাজনীতির ন্যুনতম হলেও যোগসূত্র রয়েছে এবং যারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছেন (অথবা ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসা পরিচালক বা ছোটখাটো উদ্যোক্তা), যারা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহায় এবং যাদের টাকা খরচ করা ছাড়া এই বিপদ থেকে বের হয়ে আসার কোনো উপায় নেই। কর্তৃপক্ষও কিছু মনে করে না, কারণ এতে পুলিশ খুশি থাকে।

বহির্বিশ্বের কাছে আমরা আমাদের আইনি ব্যবস্থার এ কোন ভাবমূর্তি তুলে ধরছি?

এই কলাম লেখার সময় আমি মালদ্বীপের সাম্প্রতিক নির্বাচনের কথা না ভেবে পারছি না, যেখানে বিরোধী দলের প্রার্থী—মোহামেদ মুইজ্জু—৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন—আর তার প্রতিপক্ষ ও ক্ষমতাসীন, আমি আবারও বলছি, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী—৪৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই দুই দলের ধ্যানধারণা পুরোপুরি বিপরীতধর্মী। তা সত্ত্বেও, কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন হয়েছে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। উন্নয়নের রোল মডেল হওয়া সত্ত্বেও মালদ্বীপ যা পেরেছে, আমরা তা করে দেখাতে পারিনি।

থাইল্যান্ডে জেনারেল প্রাইয়ুত চান-ও-চা ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর গত নয় বছর কারসাজির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন। তিনিও নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন—যদিও সেনাবাহিনী তার পক্ষে ছিল। সেখানে অত্যন্ত অস্থিতিশীল পরিবেশেও নির্বাচন ও ক্ষমতার হস্তান্তর ছিল শান্তিপূর্ণ।

তৃতীয় একটি উদাহরণও আমাদের মনোযোগ পেতে পারে। তুরস্কের রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান মে মাসে নির্বাচন আয়োজন করেন। তিনি একজন উচ্চাভিলাষী, অত্যন্ত অসহিষ্ণু ও শক্তিশালী নেতা হিসেবে বিবেচিত, যিনি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এমনকি সংবিধানেও পরিবর্তন এনেছেন। তিনি পুনর্নির্বাচিত হয়ে টানা তিন দশক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরদোয়ান দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ২ কোটি ৭৭ লাখ ৩০ হাজার বা ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লু ২ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার ভোট পান। মোট ৮৪ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ ভোট দেন। তিক্ততা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ণ এই নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ড অবধি গড়ায়। কিন্তু তা স্বত্বেও, নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ।

আমি যতদূর জানি, উপরের তিন নির্বাচনের উদাহরণের ক্ষেত্রে—একটি খুবই ছোট নির্বাচনী এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়, আরেকটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের নায়ককে উৎখাত করা হয় এবং অপরটিতে একজন অত্যন্ত বিতর্কিত ব্যক্তি জয়ী হয়েছেন যিনি বিরোধী পক্ষের প্রতি অত্যন্ত অসহিষ্ণু। কিন্তু কোথাও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠেনি, বিরোধী দলের হাজারো নেতাকে গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করা হয়নি, এমনকি, তাদের সমর্থকদের পুলিশ খুঁজে বেড়ায়নি এবং তাদেরকে ঘর ছেড়ে পালাতেও হয়নি। উপরের একটি দেশেও বিরোধী দল ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলেনি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে এই তিন দেশের একটিকেও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

নির্বাচন শুধু একটি ঘটনা—এটা যতই জটিলতায় পূর্ণ হোক না কেন, এর সঙ্গে যত সম্পদ-উপকরণের সংযুক্তিই থাকুক না কেন এবং এর জন্য প্রস্তুতি যতই দীর্ঘ হোক না কেন—এটা একসময় শেষ হবে। প্রশ্ন হলো: নির্বাচন শেষে আমরা কোন ধরনের দেশ পাব? এটাকে নির্বাচন বলা যায় কি না, সেটাও একটি প্রশ্ন, কেননা এতে মূলত আওয়ামী লীগ এ ও বি (দলের অনুমোদনপ্রাপ্ত বিদ্রোহীরাই) লড়বেন। শাসনব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, আমলাতন্ত্র সরকারের অনুগত, পুলিশ রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করছে এবং প্রতিটি সরকারি সংস্থার রাজনীতিকরণ হয়েছে—সবচেয়ে উঁচু স্তর থেকে একেবারে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত। এ অবস্থায় কীভাবে আমরা দেশ পরিচালনায় ন্যূনতম সুশাসনের দেখা পাব?

কীভাবে আমরা আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলব—এ ধরনের প্রশংসনীয় কাজ করার পর—যেখানে ব্যাংক লুটেরা ও অর্থ পাচারকারীরা আগের চেয়েও বেশি সুরক্ষিত, দুর্নীতি কোনো ত্রুটি নয়; বরং সার্বিক প্রক্রিয়ার আনুষঙ্গিক অংশ, সাধারণ জনগণের সরকারি সেবা পেতে ঘুষ না দেওয়ার কোন বিকল্প থাকছে না, সৎ ব্যবসাগুলোকে সবদিক থেকে চেপে ধরা হচ্ছে, বড় প্রকল্পগুলো বড় আকারের দুর্নীতির ছদ্মবেশ হিসেবে কাজ করছে এবং একজন মানুষ আইনের আওতায় পড়বেন কি না, সেটা নির্ধারণ হচ্ছে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে?

মূল্যবোধ ধ্বংস হয়েছে, আইনের অপব্যবহার হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকরণ হয়েছে এবং দুর্নীতি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায়, নির্বাচনে জয়ী হলেও চরম মূল্য দিতে হতে পারে আওয়ামী লীগকে।

দেশাত্মবোধক গানগুলোতে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেগুলো পূরণ না করতে পারার জন্য সিয়াম, নুরজাহান, আকলিমা ও তাদের মতো অন্য সবার কাছে আমাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

মাহফুজ আনাম: সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার

মতামত-এক ইহুদির খোলাচিঠি: ইসরায়েল আমাদের সঙ্গে মিথ্যা বলেছিল-প্রথম আলো

এই চিঠিটা আমি লিখতে বসেছি আমার প্রিয় ইহুদি স্বজনদের উদ্দেশে। আমার স্ক্রিনে এই এখনো গণহত্যার ছবি ভেসে উঠছে। আমার হৃদয় নিংড়ানো চিঠি এটি। এই চিঠি ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানোর প্রগাঢ় আহ্বান। বলে দিতে চাই, শতাব্দীজুড়ে চলা অবিচারের মধ্যেও আমরা যেভাবে আমাদের ইতিহাস, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য ধরে রেখেছি, তার প্রতি আমার গভীর মমতা আছে।

আপনাদের অনেকের মতো আমিও সিনাগগে যাওয়া-আসা করেছি নিয়মিত। বড় হয়েছি প্রগতিবাদী ‘আমেরিকান জিউইশ’ সমাজের অংশ হয়ে। সংস্কৃতি ও ধর্মকে ধারণ করতে ইসরায়েলকে সমর্থন ও দেশটির সবকিছুর উদ্‌যাপন করতে হবে—এমনটাই মনের গভীরে প্রোথিত হয়েছিল।

আমি যখন কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ি, আমার বয়স যখন ১৮ তখনই প্রথম জানতে পারি, অধিকৃত ফিলিস্তিনে আসলে কী চলছে। আমার এক ইহুদি বন্ধু আমাকে একদিন জানাল কীভাবে ইসরায়েল আমাদের নাম ব্যবহার করে অপরাধ করে চলেছে।

আমার বলতে সংকোচ হচ্ছে, তবু স্বীকার করতেই হবে যে আমি ওর কথা শুনেছিলাম; কারণ সে-ও ছিল ইহুদি। 

আমার সম্প্রদায় আমাকে বুঝিয়েছিল আমাদের নিরাপত্তা ও ভালো থাকার জন্য ইসরায়েলের টিকে থাকা প্রয়োজন। আমি যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন মনে হয় কেন আরও আগে আমি ফিলিস্তিনিদের বিশ্বাস করলাম না। ফিলিস্তিনিদেরই তাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই শৈশবেই মগজ ধোলাই করা হয়েছিল আমার, তীব্র ভয় দেখানো হয়েছিল। জায়নবাদিতা আবরণ ভেদ করে যত দিন পর্যন্ত না আমি বের হতে পেরেছি, তত দিন পর্যন্ত এই ভয় আমাকে তাড়া করে ফিরেছে।

আমি যখন প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলিদের বর্বরতা সম্পর্কে জানতে পারি, আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। আমার ইহুদি মুরব্বিরা আমাকে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ইহুদি নৈতিকতা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন। তাঁরা বলতেন, সমাজ পরিবর্তন ও পৃথিবী সংস্কারে এসব গুণ প্রয়োজন।

এটা কীভাবে বিশ্বাস করি যে আমার নিজের লোকেরাই আমার কাছ থেকে ইসরায়েলি অ্যাপারথেইড ও দখলদারির কথা গোপন রেখেছিল? আমাকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলিরা এক খণ্ড ফাঁকা জমিতে দেশ গড়েছিল। জায়নিস্টরা গ্রামকে গ্রাম অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, নাকবার সময় সাড়ে ৭ লাখ মানুষকে উৎখাত করেছে—এসব খবর ওরা আমাদের কাছে গোপন রেখেছিল। তারাও কি আমার মতো সদ্যই জানল ওখানে কী ঘটছে?

ইসরায়েলের ক্রমেই বাড়তে থাকা যুদ্ধাপরাধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলকে সমালোচনা করাই ইহুদিবিদ্বেষ, এ কথা আর বলা চলে না। আর এখনো আমার যেসব ইহুদি বন্ধু পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে জায়নবাদী জাতীয়তাবাদের ভ্রান্তিতে পড়ে আছে, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা অর্থহীন।

ইচ্ছে করে যে কথাটা আমাদের কাছে চেপে রাখা হয়েছিল, সেটা ছিল ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদের একমাত্র ঠিকানা, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা বসবাস করেছে। ইসরায়েল এখনো ফিলিস্তিনিদের তাদের বাসভূমিতে এমনকি বেড়াতে যাওয়ারও অনুমতি দেয় না। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া একজন ইহুদি হয়েও আমি সেখানে যেতে পারি। এমনকি ওখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে ইসরায়েল আমার সব খরচ বহন করবে এবং ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে চুরি করে নেওয়া জমিতে থাকতে দেবে।

একদা যা শুনেছি তা একসময় মানতে চাইনি। যখন মানতে পেরেছি, তখন ক্ষুব্ধ হয়েছি। যাদের ওপর আমাদের আস্থা ছিল, তারা আমাদের সঙ্গে মিথ্যে বলেছিল। এমনভাবে ধোঁকা দিয়েছিল, যেন আমরা এই অ্যাপারথেইড রাষ্ট্রের সব অপকর্মকে উদ্‌যাপন করেছি। তারা শিশুদের হয়রানি করুক বা আমাদের নামে নির্দয় নির্যাতন চালাক। আমার মতো ইহুদি তরুণদের ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলা গণহত্যায় জড়িত করা হয়েছে।

ইহুদিদের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা দেওয়ার নামে এতকাল ভয়াবহ, অতলস্পর্শী নির্যাতন চালানো হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ওপর। যেখানে সত্য হলো, একজন দখলদার তখনই নিশ্চিত শান্তি পান, যখন একজন ফিলিস্তিনির ওপর নির্যাতন হয়। দখলদারের অধীনে নিরাপদ জীবনযাপন অসম্ভব।

আমাদের শেখানো হয়েছিল হলোকাস্টের পর ইহুদিদের জন্য ছোট্ট এক টুকরা আশ্রয়ের নাম হলো ইসরায়েল, যেকোনো কিছুর বিনিময়ে মহামূল্যবান এই বস্তুকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য একমাত্র রাষ্ট্র, ইসরায়েল আমাদের আবাসভূমি, ইসরায়েল আমাদের ‘বার্থ রাইট’ (ইহুদি হিসেবে জন্মগ্রহণ করলে ইসরায়েলে যাওয়া-আসা ও বসবাসের যে অধিকার)।

পৃথিবীর অন্য প্রান্তে থেকেও আমরা এক টুকরা জমির অধিকারী—এমনটাই শেখানো হয়েছিল আমাদের। ইসরায়েল আমাদের জন্য ছিল দ্বিতীয় কিংবা বিকল্প বাসভূমি। কিন্তু ইচ্ছে করে যে কথাটা আমাদের কাছে চেপে রাখা হয়েছিল, সেটা ছিল ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদের একমাত্র ঠিকানা, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা বসবাস করেছে।

ইসরায়েল এখনো ফিলিস্তিনিদের তাদের বাসভূমিতে এমনকি বেড়াতে যাওয়ারও অনুমতি দেয় না। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া একজন ইহুদি হয়েও আমি সেখানে যেতে পারি। এমনকি ওখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইলে ইসরায়েল আমার সব খরচ বহন করবে এবং ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে চুরি করে নেওয়া জমিতে থাকতে দেবে।

আমাকে কখনো বলা হয়নি যে ইসরায়েল টিকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে। ওখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ খননের ক্ষেত্রে ইসরায়েল পশ্চিমাদের ঔপনিবেশিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ওখানে ওরা অস্ত্রের পরীক্ষা করে, মার্কিন পুলিশরা প্রশিক্ষণ নেয়। আরও কত কী করে। কেউ আমাকে কখনো বলেনি ইসরায়েলকে জন্ম দিতে ফিলিস্তিনকে হত্যা করা হয়েছে। পাপসের নিচে গণহত্যা হয়েছিল নির্দ্বিধায়, যেন ইহুদিরা একটা চকচকে পরিষ্কার কিছু পায়। যেটা বলা হয়নি তা হলো এটা একটা সামরিক জাতি, যার ভিত্তি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি দেহ। বলা হয়নি যে, ইহুদিদের বাসভূমি তৈরি হয়েছিল, সেখানকার আদি বাসিন্দাদের কবরের ওপর।

ইসরায়েল প্রসঙ্গে এই গল্প নতুন কিছু নয়। সারা বিশ্বের উপনিবেশশাসিত মানুষের এ গল্প জানা। শ্রেষ্ঠত্ববাদী শ্বেতাঙ্গরা ঔপনিবেশিক মিথ্যে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বলে বেড়ায়। আদিবাসীদের গণহত্যার যৌক্তিকতা জাহিরে তারা বলে তারা একটা কচ্ছপের দ্বীপে এসে পড়েছিল (উত্তর আমেরিকা)। তারপর বলে, অগ্রগতি, আধুনিকতা, গণতন্ত্রের স্বার্থে ঔপনিবেশিক শক্তিকে ধ্বংস করতে হবে, খুন করতে হবে, গুঁড়িয়ে দিতে হবে সব।

ফিলিস্তিনিরা কোনো ধর্মযুদ্ধ করছে না। তারা স্বাধীনতাসংগ্রাম করছে। ফিলিস্তিনিরা যেচে পড়ে ইহুদিদের ডেকে আনেনি। তাদের নৈতিক ও আইনগত অধিকার আছে দখলদারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর। এ ক্ষেত্রে দখলদার বাহিনী কে, সেটা মুখ্য নয়। ইহুদিরা যত দিন ফিলিস্তিন দখল করে রাখবে, তত দিন তারা নিরাপদ জীবন পাবে না। আমাদের একজনের মুক্তি, অন্যের মুক্তির সঙ্গে জড়িত।

ফিলিস্তিনের গণহত্যাকে থামিয়ে দিতে পারে শুধু ইহুদিরাই। আমরা আমাদের লাখ লাখ পূর্বপুরুষের মৃত্যুকে প্রতিরোধ করতে পারিনি। কিন্তু আর এক দিনও যেন গণহত্যা চলতে না পারে, সে উদ্যোগ নিতে পারি। ইহুদির যন্ত্রণাকে কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের ওপর এই হামলাকে—চলুন আর প্রশ্রয় না দিই। এই জরুরি পরিস্থিতি আমরা যেন এড়িয়ে না যাই।

আপনি যদি নিজেকে একজন বিবেকবান ইহুদি বলে বিবেচনা করে থাকেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন যে এই গণহত্যা, রক্তপাতের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। কথা বলার সময় এখনই। ইতিহাস কবে ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ মেটাবে, সে দিনের অপেক্ষায় থাকা চলে না আর। কারণ স্বজন, আমি যখন আপনার কাছে এই ভালোবাসা আর দ্রোহের চিঠি লিখছি, তখনো আকাশ থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে।

•    অ্যামান্ডা গেলেন্ডার একজন আমেরিকান–ইহুদি। জায়নবাদবিরোধী লেখক। ২০০৬ সাল থেকে তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে আসছেন।

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

উত্তর-পূর্বে বিজেপিকে হারাতে তৎপর কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ ১৫ বিরোধী দল-আনন্দবাজার পত্রিকা

কংগ্রেস এবং তৃণমূল ছাড়াও ‘ইন্ডিয়া’র কয়েকটি শরিক দল এবং অসম জাতীয় পরিষদ, ‘অল পার্টি হিল লিডারস কনফারেন্স’, রাইজর দল ও জাতীয় দল অসমের প্রতিনিধিরা বৈঠকে রয়েছেন।

মিজ়োরামে ভোটপর্ব মিটতেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তৎপর হল কংগ্রেস। আগামী লোকসভা নির্বাচনকে ‘পাখির চোখ’ করে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের সক্রিয়তা শুরু উত্তর-পূর্বের বৃহত্তম রাজ্য অসমে। ডিব্রুগড়ে শুক্রবার থেকে বিজেপি বিরোধী ১৫টি দলের দু’দিনের বৈঠক শুরু হয়েছে। অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরা বলেন, ‘‘আগামী লোকসভা ভোটে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে একজোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে আমাদের নতুন জোট ‘ইউনাইটেড অপোজিশন ফোরাম অসম’-এর বৈঠকে।’

মানসিক চাপের শিকার শহরের কমবয়সিরা, আশঙ্কা নয়া সমীক্ষায়-সংবাদ প্রতিদিন

১৩-১৮ বছরের পড়ুয়া এবং ২৫-৩৫ বছরের চাকরিজীবীরাই সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের শিকার। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে এমন তথ‌্যই পেয়েছে ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রির এপিডেমিওলজি বিভাগ।‘ডিপার্টমেন্ট অফ সাইকিয়াট্রি এপিডেমিওলজি’র তরফে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় লাগাতার সমীক্ষা চালানো হয়।সহকারী অধ‌্যাপক ডা. রিয়াল দাস বলছেন, ‘‘১৩-১৮ বছরের পড়ুয়াদের মধ্যে পাঠ‌্যসূচির চাপ যেমন থাকে তেমনই উচ্চমাধ‌্যমিক ও স্নাতক স্তরে কোন বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি দেখা যাচ্ছে।’তঁার কথায়, ”এটা যেমন একটা সমস‌্যা, তেমনই ২৫-৩৫ বছরের চাকরিজীবীদের মধে‌্য অফিসের চাপ অথবা কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি না হওয়ার মানসিক চাপ অত‌্যন্ত বেশি।

গোটা দিল্লিতে এখনও বাতাসের গুনমান ‘অত্যন্ত খারাপ' –গণশক্তি

অশোক বিহার, আনন্দ বিহার সহ গোটা দিল্লির বাতাসের গুনমান অত্যন্ত খারাপ। শনিবার দিল্লির এই দুই জায়গার একিউআই ছিল যথাক্রমে ৩৮৮ এবং ৩৮৬।দুষণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্কুলও বন্ধ রাখা হয় পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে। গাড়ি চলালে নিয়ন্ত্রণ এবং সব ধরনের নির্মান কাজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষনা করা হয় কেজরিওয়াল সরকারের পক্ষ থেকে।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ২

ট্যাগ