১১ কিলোমিটারব্যাপী শোক মিছিল
ইরানে ইসরাইল-আমেরিকার আগ্রাসনে শহীদদের জানাজা অনুষ্ঠানে জনতার ঢল
-
তেহরানের ইনকিলাব চত্বরে শোকানুষ্ঠান
ইহুদিবাদী ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ দিনের সামরিক আগ্রাসনে শহীদদের স্মরণে ইরানের রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয়ভাবে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তেহরান সময় আজ (শনিবার) সকাল ৮টায় এই বিশাল জানাজা শুরু হয় শহরের কেন্দ্রস্থল ইনকেলাব চত্বরে যা ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আজাদি স্কয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই জানাজায় ৬০ জন পরমাণু বিজ্ঞানী, সামরিক কমান্ডার ও বেসামরিক নাগরিকের কফিন স্থান পায়। শহীদদের কফিন ইরানের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ছিল এবং অনেকের ছবি ও সামরিক পোশাক সংবলিত ব্যানারও প্রদর্শিত হয়।

জানাজায় অংশ দেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, আইআরজিসির কুদস ফোর্সের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কায়ানি এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
বিপুলসংখ্যক শোকসন্তপ্ত জনতা কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে "ইসরাইল ধ্বংস হোক", "আমেরিকা ধ্বংস হোক"— স্লোগান দেন এবং নানা প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ড বহন করেন। একটি ব্যানারে লেখা ছিল: "বুম বুম তেল আবিব"—যা ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ইঙ্গিত দেয়।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি জানাজায় অংশ নিয়ে ‘শহীদদের প্রতি ইরানি জাতির অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা’ তুলে ধরেন।
পরে এক এক্স (টুইটার) বার্তায় তিনি লিখেন, "আজ ইরানের দেশপ্রেমী জনতা তাদের সবচেয়ে নিষ্ঠাবান ও দেশপ্রেমিক সন্তানদের—কমান্ডার, বুদ্ধিজীবী, ক্রীড়াবিদ, নারী ও শিশুদের—কাঁধে তুলে নিয়েছে। আজ ইরানের সাহসী জনগণ, তাদের এক একটি পবিত্র দেহকে বীরের মতো শ্রদ্ধার সাথে মাতৃভূমির মাটিতে সমাহিত করছে।”

তেহরান ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল-এর প্রধান মোহসেন মাহমুদি এই দিনটিকে "ইসলামি ইরান ও বিপ্লবের ইতিহাসে এক গৌরবময় দিন" বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শহীদদের মধ্যে রয়েছেন— ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি—যিনি তাঁর স্ত্রী ও সাংবাদিক কন্যাসহ তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় শহীদ হন। পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি ও তাঁর স্ত্রী, আইআরজিসির প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং আরও অন্তত ৩০ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও ৪ শিশু।
ইরানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১২ দিনের এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৬০০-রও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এই বিশাল জানাজা অনুষ্ঠিত হলো মহাররম মাসের দ্বিতীয় দিনে—যে মাসে কারবালার বীর শহীদ ইমাম হোসেইন (আ.) ও তাঁর সাথীদের স্মরণ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাকায়ি বলেন: “ইরানিরা প্রমাণ করেছে, তারা ইমাম হোসেইনের জাতি—যারা সত্য-মিথ্যার যুদ্ধে ঈমান, ধৈর্য ও জাতীয় ঐক্যের শক্তিতে যেকোনো শত্রুকে পরাজিত করতে সক্ষম।”#
পার্সটুডে/এমএআর/২৮