ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩ ১৮:১১ Asia/Dhaka
  • ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরনের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী।
    ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরনের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী।

গত আসরে আমরা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরনের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের আসরে আমরা ইসলামি বিপ্লবের এই মহান নেতার ব্যক্তিগত জীবনের একটি দিক নিয়ে খানিকটা কথা বলার চেষ্টা করব। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গ পাবো বলে আশা রাখছি।

২০১৫ সালে মার্কিন দৈনিক লস এঞ্জেলস টাইমসে ইরান সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধের লেখক ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন তুলে ধরেন এভাবে: “ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এখনও একটি রহস্য।” ইসলাম ও এই ধর্মের শিক্ষা সম্পর্কে যারা অজ্ঞ তাদের কাছে সর্বোচ্চ নেতার ব্যক্তিত্ব রহস্যজনকই মনে হবে। কিন্তু যেসব মুসলমান পবিত্র কুরআন ও রাসূলে খোদা (সা.) এর আহলে বাইতের জীবনচরিত জানেন তাদের কাছে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আল্লাহর একজন সৎকর্মশীল বান্দা। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইসলামি শিক্ষার আওতায় বেড়ে উঠেছেন। শত্রুরাই তাঁর সম্পর্কে বলে যে, তিনি যেকোনো বিষয়ের রোড ম্যাপ জানেন, মুসলিম উম্মাহর শত্রুদের চেয়ে অগ্রে চলেন এবং উচ্চমানের প্রজ্ঞা দিয়ে বিশ্বের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত রাজনৈতিক ভাষ্যকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক অধ্যপক এবং টেলিভিশন উপস্থাপক ফরিদ জাকারিয়া।  তিনি ২০১‌৩ সালের আগস্ট মাসে সিএনএন টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে বলেন: “ভিক্টোর হুগোর লেখা ‘লে মিজারেবল’ বা ‘দীন-দুঃখীরা’ হচ্ছে আমার দৃষ্টিতে ইতিহাসের দীর্ঘ পরিক্রমায় লেখা শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। আমি বহুবার বহু জায়গায় বলেছি যে, আপনারা এই উপন্যাসটি পড়ুন। একটি সমাজের সবগুলো দিককে একটি বইয়ের মধ্যে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে এমন একটি উপন্যাসের তুলনা হয় না।” ফরিদ জাকারিয়া আরো বলেন, “এই বাক্যগুলো কে বলেছেন জানেন? এই কথাগুলো ফ্রান্সের কোনো প্রেসিডেন্ট বলেননি। কোনো পশ্চিমা দেশের কোনো রাষ্ট্রনায়কের মুখ থেকে এই বক্তব্য বেরিয়ে আসনি। এটি হচ্ছে এমন একজন মানুষের বক্তব্য পাশ্চাত্য যাকে নিজেদের কসম খাওয়া শত্রু  মনে করে। তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেয়ী।”

ফরিদ জাকারিয়ার মতো পশ্চিমা সমাজে বসবাসকারী একজন ব্যক্তির কাছে এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যে, একটি দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি কীভাবে বইয়ের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে পারেন। কিন্তু তিনি যদি একথা জানতে পারেন যে, আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর পরিবারের সকল সদস্যই বই পাগল তাহলে তার বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে যাবে বৈকি। ইসলামি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার নিজের মুখেই বিষয়টি শোনা যাক: “আমার নিজের ঘরের প্রতিটি সদস্য রাতে বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যান। আমি নিজেও যতক্ষণ ঘুম না আসে ততক্ষণ বই পড়তে থাকি।  ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের হাতে একখানা বই থাকে।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মধ্যে এই বইপ্রীতির কারণ খুঁজতে হলে তাঁর শিশুকালে ফিরে যেতে হবে। সেই যুগে দাদী-নানীরা তাদের নাতী-নাতনীদের শিক্ষণীয় গল্প ও কিসসা শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী দাদীর মুখে শুধু গল্প শুনে কৌতুহল মেটাতে পারতেন না বরং লিখতে ও পড়তে শেখার পর থেকেই বই পড়ে নিজের জ্ঞানপিপাসা মেটানোকে অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। বই পড়ার প্রতি নিজের আগ্রহের বিষয়টিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নিজে এভাবে বর্ণনা করেন: “কেউ যদি আত্মিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে সতেজ থাকতে চায় তাহলে তাকে বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। মানুষকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বইকে জীবনের অংশে পরিণত করতে হবে। আমি যখন গল্পের বই পড়ে মজা পেতাম তখন আমার মনে হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকদের লেখা হাজার হাজার গল্প আমি পড়েছি। যদি কেউ বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে না পারে তাহলে তার পক্ষে মানুষের চিন্তাধারা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।”

উপন্যাস পড়ার প্রতি ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী উপন্যাসকে এক মানুষ থেকে আরেক মানুষের মাঝে চিন্তাধারা স্থানান্তরের হাতিয়ার মনে করেন। তিনি ভিক্টোর হুগোর ‘লে মিজারেবল’ উপন্যাসটিকে সৃজনশীলতা দিয়ে বই লেখার ক্ষেত্রে একটি অনন্য সাধারণ ঘটনা বলে বর্ণনা করেন। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নিজেও একজন প্রসিদ্ধ লেখক। তাঁর লেখা ও অনুবাদ করা বইগুলোকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা যায়। তিনি গবেষণাধর্মী যেসব বই লিখেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- ‘সত্যনিষ্ঠ নেতা’, ‘নামাজের গভীরতা থেকে’, ‘কুরআনে ইসলামী চিন্তাধারার রূপরেখা’, ‘ধৈর্য সম্পর্কে কিছু কথা’ এবং ‘তৌহিদের চেতনা আল্লাহ ছাড়া অন্যের উপাসনাকে অস্বীকার করে’ ইত্যাদি।  এসব বই ইংরেজি, জার্মান, অযারি তুর্কি, ইস্তাম্বুলি তুর্কি, ইতালীয়, চীনা ও আরবি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।

মিশরের ইসলামি চিন্তাবিদ সাইয়্যেদ কুতুবের লেখা দু’টি বই তিনি ইসলামি বিপ্লবের আগেই অনুবাদ করেছিলেন।  ‘মুসলিম ভূখণ্ডের ভবিষ্যত’ এবং ‘পশ্চিমা সভ্যতার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ’ শিরোনামের বই দু’টি তিনি আরবি থেকে ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করেন।  আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনয়ী আরবি থেকে ফার্সি ভাষায় ‘কিফাহ আল-মুসলিমীন ফী তাহরির আল-হিন্দ’ শিরোনামের বইটি অনুবাদ করেন যার বাংলা ভাষান্তর দাঁড়ায়- ‘ভারতের স্বাধীনতা লাভে মুসলমানদের সংগ্রাম’। বইটি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি নিজের গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে অসংখ্য পাদটীকা সংযোজন করেন যার ফলে বইটি জ্ঞানপিপাসু পাঠকের কাছে নতুন মাত্রা লাভ করে।

গত মে মাসে ইরানের রাজধানী তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৩৪তম আন্তর্জাতিক বই মেলা। ইসলামি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তিন ঘণ্টাব্যাপী এই মেলা পরিদর্শন করেন। দেশের মানুষের জ্ঞানপিপাসা মেটানোর ক্ষেত্রে তিনি এই বই মেলাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন।  বইমেলার একটি স্টলের মালিক সর্বোচ্চ নেতাকে একটি কবিতার বই উপহার দিয়ে বলেন: আমি জানি আপনি কবিতা ভালোবাসেন। এ সময় আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, আমি আসলে বই ভালোবাসি। সর্বোচ্চ নেতার ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় ৪০ হাজারের বেশি বই রয়েছে বলে মনে করা হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন: আমি যদি আমার ব্যক্তিগত জীবনের সকল আসবাবপত্র জমা করি তাহলে একটি পিক-আপে করে নিতে পারব; তবে আমার ব্যক্তিগত পাঠাগারকে নয়।

তো শ্রোতাবন্ধুরা, এখানেই শেষ করতে হচ্ছে ঘটনার নেপথ্যের আজকের আয়োজন। যারা সঙ্গ দিলেন তাদের প্রত্যেককে অসংখ্য ধন্যবাদ।#

 

পার্সটুডে/এমএমআই/ বাবুল আখতার/ ৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ