জুলাই ১১, ২০১৬ ১৭:১৩ Asia/Dhaka

ঈসা (আ.)-এর একজন হাওয়ারীর বংশধর শামউন (রা.) মহানবী (সা.)-কে অনেক জটিল বিষয়ে প্রশ্ন করে সেসবের জবাব পেয়ে সন্তুষ্টচিত্তে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিলেন। তার প্রশ্নের জবাবে বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন:

অলস লোকের চি‎হ্ন চারটি : ১. এতটা আলসেমি করে যে অবহেলায় পর্যবসিত হয়, ২. এতটা অবহেলা করে যে (সুযোগ) হাতছাড়া করে, ৩. যখন (সুযোগ) হাতছাড়া করে তখন তা পাপ বলে গণ্য হয়, ৪. আর পাপের কারণে কষ্ট অনুভব করে।

মিথ্যুকের চি‎হ্ন চারটি : ১. কখনও কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. যদি তাকে কিছু বলা হয় বিশ্বাস করে না, ৩. একের কথা অন্যের কাছে লাগিয়ে বেড়ায়, ৪. মিথ্যারোপ করে।

ফাসিকের চি‎হ্ন চারটি : ১. অর্থহীন কাজ করে, ২. বেহুদা কথা বলে, ৩. সীমা অতিক্রম করে, ৪. মিথ্যারোপ করে।

বিশ্বাসঘাতকের চি‎হ্ন চারটি : ১. আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করা, ২. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া, ৩. সহকর্মীদের ঘৃণা করা এবং ৪. অবাধ্যদের সাথে ঘনিষ্ঠতা।

এরপর শামউন বিশ্বনবী (সা.)-কে বললেন : আপনি আমাকে নিরাময় দিলেন এবং আমার অন্ধত্ব ঘুচিয়ে দৃষ্টিবান করে তুললেন। অনুগ্রহ করে আমাকে এমন কিছু পন্থা শিখিয়ে দিন যা দিয়ে আমি পথ চলতে পারি।

রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বললেন : হে শামউন! সত্য কথা হলো তোমার কিছু শত্রু রয়েছে যারা তোমার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং তোমার দীনকে কেড়ে নিতে চায়। তারা জিন এবং মানুষ থেকে। মানুষের মধ্যে তোমার শত্রু হলো যারা পরকালের ভাবনায় থাকে না এবং আল্লাহর কাছে যা রয়েছে সেদিকে কোনো আকর্ষণ নেই। তাদের চেষ্টা শুধু মানুষকে তাদের কাজের জন্য তিরস্কার করবে এবং ছিদ্রান্বেষণ করবে, তবে নিজের কাজের জন্য কখনই নিজেকে তিরস্কার করবে না। যদি তোমাকে দেখে সত, তা হলে হিংসা করবে এবং বলবে : লোক দেখানো কাজ। আর যদি তোমাকে দেখে খারাপ তখন বলে: তার মধ্যে ভালো কিছুই নেই।

আর জিনদের মধ্যে তোমার শত্রু হলো ইবলিস এবং তার সেনাদল। যখন তোমার কাছে আসে, বলে, তোমার পুত্র মারা গেছে। তখন তুমি বলবে, সকল জীবই সৃষ্টি হয়েছে মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর আমার কলিজার টুকরো বেহেশতবাসী হয়েছে যা আমার জন্য খুশীর কারণ।

আর যখন সে তোমার কাছে এসে বলবে : তোমার মাল-সম্পদ চলে গেছে, তখন বলবে : সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি দান করেছেন এবং তুলে নিয়েছেন। আর আমাকে যাকাত থেকে মুক্ত করেছেন। এখন আমার ওপর কোনো যাকাত রইলো না। আর যখন তোমার কাছে এসে বলবে : লোকে তোমার ওপর অত্যাচার করে অথচ তুমি অত্যাচার করো না। তখন বলবে : নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন বিচার তাদেরই হবে যারা লোকজনের ওপর অত্যাচার করে। আর পুণ্যবানদের বিচার নেই। আর যখন তারা তোমার কাছে এসে বলবে : তুমি কত বেশি সদাচারী! এর মাধ্যমে সে চায় তোমার মধ্যে অহংকার সৃষ্টি করতে। তখন বলবে : আমার মন্দকর্ম আমার সদাচারের চেয়ে বেশি। আর যখন তোমার কাছে এসে বলবে : তোমার নামায কত বেশি! তখন বলবে : আমার গাফিলতি আমার নামাযের চেয়ে বেশি। আর যখন এসে বলবে : তুমি মানুষকে কত দান করো! তখন বলবে : তাদের কাছ থেকে যা গ্রহণ করি, তা আমি যা তাদেরকে দান করি, তার চেয়ে বেশি। আর যখন তোমার কাছে এসে বলবে : তোমার ওপর কত বেশি অত্যাচার করে তখন তুমি বলবে : আমি যাদেরকে অত্যাচার করেছি তারা আরো বেশি। আর যখন তোমাকে এসে বলবে : তুমি কত বেশি কাজ করো। তখন বলবে : এর চেয়ে অধিক আমি অবাধ্যতা করেছি। আর যখন তোমার কাছে এসে বলবে : মদপান করো। তখন বলবে : আমি পাপ করব না। আর যখন এসে তোমাকে বলবে : দুনিয়াকে কি ভালোবাস না? তখন বলবে: আমি তাকে ভালোবাসি না, যে অন্যদেরকে ধোঁকা দিয়েছে।

হে শামউন! পুণ্যবানদের সাথে চলাফেরা করো এবং নবীদের অনুসরণ করো : ইয়াকুব, ইউসূফ এবং দাউদ। নিশ্চয় আল্লাহ্ যখন ভূনিম্নস্থ সাগরকে সৃষ্টি করলেন, তখন সে গর্বে উথলে উঠে বলল, কি আছে আমার ওপর প্রবল হবে? তখন জমিনকে সৃষ্টি করলেন এবং তার পৃষ্ঠদেশ বিস্তৃত করলেন। ফলে অপদস্থ হলো। অতঃপর জমিন গর্ব করে বলল, কি আছে আমার ওপর প্রবল হবে? আল্লাহ্ পর্বতকে সৃষ্টি করলেন এবং পেরেকের ন্যায় তার পৃষ্ঠে গেঁথে দিলেন। যাতে সে নড়তে না পারে। ফলে জমিন অপদস্থ হলো এবং স্থির হয়ে গেল। অতঃপর পর্বতসমূহ জমিনের ওপর গর্ব করল। মাথা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বড়াই করে বলল : কি আছে আমার ওপর বিজয়ী হবে? আল্লাহ্ লোহাকে সৃষ্টি করলেন যাতে তাকে কাটতে পারে। ফলে পর্বত অপদস্থ হলো। অতঃপর লোহা পর্বতসমূহের ওপর গর্ব করল, বলল, কি আছে আমার ওপর বিজয়ী হবে? আল্লাহ্ আগুনকে সৃষ্টি করলেন এবং লোহাকে দগ্ধ করলেন। ফলে লোহা অপদস্থ হলো। অতঃপর আগুন শিখা ছড়ালো ও গর্জন তুলে নিজে নিজে গর্ব করল, বলল, কি আছে আমার ওপর বিজয়ী হয়? আল্লাহ্ পানিকে সৃষ্টি করলেন এবং আগুনকে নিভিয়ে দিলেন। আগুন অপদস্থ হলো। অতঃপর পানি নিজে নিজে গর্ব করল এবং ঢেউ ছড়ালো। বলল, কি আছে আমার ওপর বিজয়ী হয়? আল্লাহ্ বাতাসকে সৃষ্টি করলেন যাতে পানির ঢেউকে ধাক্কা দিল এবং তার অভ্যন্তরে যা ছিল উতরে দিল। আর তার প্রবাহ ধারা থেকে আটকে দিল। ফলে পানি অপদস্থ হলো। অতঃপর বাতাস নিজে নিজে গর্ব করল এবং ঘূর্ণিঝড়ের উদ্রেক করল। বলল, কি আছে আমার ওপর বিজয়ী হয়? আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করলেন। তারা অট্টালিকা নির্মাণ করল এবং ঝড়ের বিপরীতে আশ্রয় অন্বেষণ করল। বাতাস অপদস্থ হলো। অতঃপর মানুষ অবাধ্য হলো। বলল, কে আছে আমার ওপর বিজয়ী হয়? আল্লাহ্ মৃত্যুকে সৃষ্টি করলেন এবং মানুষকে তার অধীন করে দিলেন। মানুষও অপদস্থ হলো। অতঃপর মৃত্যুও নিজে নিজে অহংকার করল। আল্লাহ্ তাকে বললেন : নিজের ওপর অহংকার করো না। আমি তোমাকে বেহেশতী ও দোযখী দু’দলের মধ্যে জবাই করে দেব। আর কখনোই তোমাকে জীবিত করব না। তখন সে ভয় পেল। অতঃপর হুজুর (সা.) বললেন : রাগের ওপর ধৈর্য বিজয়ী আর ক্রোধের ওপর দয়া বিজয়ী। আর সাদাকাহ্ ভ্রান্তি ও বিচ্যুতিকে পরাস্ত করে।

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/১১

ট্যাগ