আগস্ট ০৪, ২০১৬ ১৫:০৪ Asia/Dhaka

আমরা ‘চগুন দুজ’ গল্পের সাতটি পর্ব শুনলাম। গল্পের গত পর্বে আমরা দেখেছি ইঁদুররাজের আদেশে তার সকল সেনা দলে দলে ছুটে গেল শাহজাদির কাছ থেকে আংটিটা উদ্ধার করার জন্য। সবাই দ্রুত গেল কিন্তু খোঁড়া আর অন্ধ ইঁদুর সবাই চলে যাবার পর একসাথে রওনা হলো তাদের রাজার আদেশ পালন করতে। আস্তে আস্তে খোঁড়াতে খোঁড়াতে তারা এক সময় গিয়ে পৌঁছলো শহরে। তারপর কী হলো সে কাহিনী শুনবো আজকের পর্বে।

শহরে গিয়েই তারা সোজা চলে গেল বাদশার মেয়ের প্রাসাদে। প্রাসাদে ঢুকে দেখে শাহজাদি শুয়ে আছে সোনার পালঙ্কে। অন্ধ ইঁদুরটা কান পেতে শুনলো ঘুমন্ত শাহজাদির শ্বাস-নিশ্বাসের শব্দ। ফিসফিস করে তার বন্ধু খোঁড়াকে বললো: দেখ! আংটিটা শাহজাদির জিহ্বার নীচে। অবশ্যই জিহ্বার নীচে রেখেছে যাতে কেউ মুখের ভেতর থেকে আংটি বের করে নিয়ে যেতে না পারে। খোঁড়া ইঁদুর মাথা তুলে দেখলো অন্ধের ধারণা সত্যি। বললো: ঠিক বলেছো!

অন্ধ ইঁদুর বললো: এক কাজ কর। তুই রান্নাঘরে যা! দেখ তামাক পানিতে ভেজানো হয়েছে কিনা!

খোঁড়াতে খোঁড়াতে সে গেল রান্নাঘরে এবং দেখলো একবাটি তামাক পানিতে ভেজানো আছে।

সেখান থেকেই বললো: হ্যাঁ! এক বাটি পানিতে তামাক ভেজানো আছে।

অন্ধ ইঁদুর বললো: তোর নরম লেজটাকে ওই পানির ভেতর কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে এদিকে আয়।

খোঁড়া ইঁদুর তাই করলো। লেজটাকে আস্তে করে ডুবিয়ে দিলো তামাকের বাটিতে। এরপর কিছুক্ষণ ওই পানিতে লেজটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভালো করে ভিজিয়ে গেল খোঁড়া ইঁদুরের কাছে। খোঁড়া ইঁদুর এবার বললো: তোর ওই ভেজা লেজটা শাহজাদির নাকের ভেতর ঢুকিয়ে দে।

খোঁড়া ইঁদুর তাই করলো আর অমনি শাহজাদি নড়েচড়ে উঠে ভীষণ জোরে এক হাঁচি দিলো। ওই হাঁচির সাথে দূরে ছিটকে পড়লো শাহজাদির জিহ্বার নীচে লুকিয়ে রাখা যাদুর আংটি। ল্যাংড়া ইঁদুরটা দ্রুত ছিনিয়ে নিলো আংটিটা। শাহজাদির ঘুম ভাঙতে না ভাঙতে তারা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল প্রাসাদ থেকে এবং সোজা রওনা হয়ে গেল তাদের নিজেদের শহরের উদ্দেশ্যে। তাদের আগেই ইঁদুর সেনারা দলে দলে ফিরছিল তাদের বাদশার কাছে। বাদশাকে গিয়ে বলছিলো যে কিছুই করতে পারে নি তারা। কোথায় যে আংটিটা লুকিয়ে রেখেছে তন্নতন্ন করে সকল গর্ত সুড়ঙ্গ খুঁজেও সন্ধান মেলে নি। ইঁদুররাজ একটা টিলার ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। ইঁদুর সেনাদের অপারগতার কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে পড়েছিল বাদশাহ। এমন সময় তার দৃষ্টি পড়লো খোঁড়া আর অন্ধ ইঁদুরের ওপর। তারা আগের মতোই হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে ধীরে সুস্থে আসছিল প্রাসাদের দিকে। তবে বাদশা ভালো করে তাকিয়ে দেখলো তারা আংটিটা নিয়েই আসছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আংটিটা তাদের বাদশার হাতে তুলে দিলো এবং কীভাবে তারা আংটিটা শাহজাদির জিহ্বার নীচ থেকে এনেছে পুরো কাহিনী খুলে বললো।

যাই হোক ইঁদুররাজ আংটিটা বুঝিয়ে দিলো কুকুর এবং বেড়ালের কাছে। কুকুর আর বেড়াল আংটিটা নিয়ে দ্রুত ছুটলো তাদের মনিব ইব্রাহিমের উদ্দেশ্যে।

কুকুর এবং বেড়াল তাদের মনিব ইব্রাহিমের কাছে যেতেই তারা দেখলো বেচারা জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে গায়ের বাঁধন খুলে বেরিয়ে আসতে। কোনোভাবেই পারলো না। অগত্যা বেশি বেশি জোর করতে গিয়ে ইব্রাহিম ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তার নাক দিয়ে এখন জোরে জোরে নিশ্বাস বেরুচ্ছে। নিশ্বাস প্রশ্বাস ছাড়া আর কিছুই তো করার নেই তার। কুকুর আর বেড়ালের খুব মায়া হলো তাদের মনিবকে দেখে। তাড়াতাড়ি করে তারা ইব্রাহিমকে বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিলো।  যত  দড়ি দিয়ে তাকে বাঁধা হয়েছিল সব দড়ি দাঁত দিয়ে কেটে দিলো তারা। ইব্রাহিম উঠে বসলো। কুকুর এবং বেড়াল আংটিটা ইব্রাহিমের হাতে দিলো। ইব্রাহিম আংটিটা পেয়েই আঙুলে পরলো। সোলায়মান পয়গাম্বরের নাম নিয়ে আংটিতে ঘষা দিতেই মাটি ভেদ করে বেরিয়ে এলো সেই পাঁচ পাঁচটি দৈত্য।

ইব্রাহিম সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান এবং বিশালদেহি দৈত্য যাকে ‘হেশাম দেও’ও বলা হয়, তাকে বললো: বাঁধবে না আমাকে? তোর বাপকে এমনভাবে পোড়াবো যে অনুতাপের তোর আর সীমা থাকবে না।

হেশাম দেও বললো: ‘এই আংটি যার আঙুলেই থাকবে আমরা তার আদেশের গোলাম। তার আদেশ মানতে বাধ্য আমরা। সে সময় এই আংটি শাহজাদির আঙুলে ছিল আমরা তার আদেশে কাজ করেছি। এখন তোমার হাতে। তুমি যেই আদেশ দেবে সেই আদেশই পালন করবো আমরা। তোমার আদেশের অপেক্ষায় আছি আমরা’।

ইব্রাহিম বললো: যাও! প্রাসাদে যাও! শাহজাদিকে তার প্রাসাদসহ নিয়ে আসো!

সঙ্গে সঙ্গে দৈত্যরা একটা ঘূর্ণিপাক খেল এবং সাঁই করে হাওয়া হয়ে গেল।

দোকানদারেরা তাদের কাজে ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ তারা দেখলো শাহজাদির প্রাসাদ শূন্যে উড়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে তারা তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেল বাদশাহর দরবারে। বাদশাকে গিয়ে ঘটনা বললো তারা। বললো,শাহজাদির প্রাসাদ আজ আবারও শূন্যে উড়ে যেতে দেখেছে তারা। বাদশা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। মাতম আহাজারি শুরু করে দিলো বাদশা। কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। আনমনে পায়চারি করতে করতে আদেশ দিলো যেন আগের সেই বুড়িকে খবর দেওয়া হয়। আদেশ পাবার সাথে সাথে পাইক পিয়াদারা ছুটে গেল এবং বুড়িকে সঙ্গে করে নিয়ে এলো।

বাদশাহ বুড়িকে বললো: তুমি আগের মতো গিয়ে আমার মেয়েকে নিয়ে আসো’।

বুড়ি তো পড়েছে মহাসংকটে। কাকুতি মিনতি করে বুড়ি বাদশাহকে বললো: ‘ওই ছেলে আমার মাধ্যমে ধোকা খেয়েছে। তার মনে মারাত্মক আঘাত লেগেছে আমার জন্য। ওই আহত মন না শুকাতেই সে যদি আবার আমাকে তার প্রাসাদে দেখে আমাকে আস্ত রাখবে না,মেরে ফেলবে’।

কিন্তু কোনো কাকুতি মিনতিতেই কাজ হয় নি। বুড়ির কথা বাদশার কানেই ঢোকে নি যেন। বাদশাকে বুড়িকে বললো:

‘বলছি যাও! যদি না যাও! আগুনে পুড়িয়ে মারবো’।

বুড়ি অগত্যা পাড়ি জমালো শাহজাদির প্রাসাদে।

এরপরের কাহিনী শুনবো পরবর্তী পর্বে। (চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/৪/টি-১০৩/অ-১০৮