আগস্ট ১০, ২০১৬ ১৯:১২ Asia/Dhaka

এক বাদশার তিন সন্তান ছিল। আরও ছিল একটি রহস্যময় বাগান। বাগানটির দরোজা সবসময় বন্ধ ছিল। বাদশা মারা যাবার সময় ছেলেদের ডেকে কিছু অসিয়্যত করে যান। কী সেই অসিয়্যৎ, বাদশার মৃত্যুর পর কী করে তার সন্তানেরা সেসব শুনবো গল্পের শুরুতেই। গল্পের নাম ‘সোলায়মানি আপেল’।

অনেক আগের গল্প। এক বাদশা ছিল। তার ছিল তিন সন্তান। তিনজনই ছেলে। তাদের নাম ছিল যথাক্রমে মালেক মুহাম্মাদ, মালেক ইব্রাহিম এবং মালেক জামশিদ। বাদশার একটা বাগান ছিল বেশ বড় এবং বিস্ময়কর। বাগানের প্রবেশদ্বার সবসময়ই বন্ধ থাকতো। বাদশা নিজেও যেত না বাগানে। সে কারণে মানে বাদশার ভয়ে কেউই সাহস করতো না ওই বাগানের ধারেকাছে যেতে। এভাবে কেটে যেতে লাগলো দিন-মাস-বছর যুগ। বয়স তো আর থেমে থাকে না,বাদশাহ একসময় বুড়ো হয়ে গেল। জীবনের সূর্য যখন অস্তের দিকে ধাবমান বাদশার অবস্থা তখন বয়সের ভারে ক্লান্ত,অবসন্ন। বাদশা ভাবলো জীবন তো প্রায় সমাপ্তির পথে, মৃত্যুর ফেরেশতা যে-কোনো সময় এসে জীবনের ভাঙা দরোজায় নক করতে পারে।

বাদশাহ তার তিন ছেলেকেই ডেকে পাঠালো। মৃত্যুর পরে কে হবে বাদশা কী হবে তার রেখে যাওয়া ধন-সম্পদের ইত্যাদি সকল বিষয়ে ছেলেদের বলে গেল। সবশেষে তাদেরকে অসিয়্যৎ করলো ওই বাগানটির দরোজা যেন কেউ না খোলে। বলতে না বলতেই বাদশাহর মাথাটা ঝুঁকে পড়লো এবং মৃত্যুবরণ করলো। ছেলেরা তাদের পিতাকে দাফন কাফন করলো। তৃতীয় দিন, সপ্তম দিন এবং চল্লিশতম দিনের আনুষ্ঠানিকতাও যথাযোগ্যভাবে আয়োজন করলো এবং শেষ করলো তারা। মৃত্যু পরবর্তী সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবার পর বড় ছেলে মালেক মুহাম্মাদ মনে মনে বললো: এতো বিশাল বাগানটা খালি খালি পড়ে আছে। আর কতোকাল এভাবে পড়ে থাকবে। কী লাভ ফেলে রেখে! এইসব ভেবে সে আদেশ দিলো বাগানের দরোজা খুলতে।

দরোজা খোলা হলো এবং সে তার মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং লশকর নিয়ে প্রবেশ করলো বাগানের ভেতর। বাগানে ঢুকে ব্যাপক ঘুরলো। ফেলে আসা দরোজাও বন্ধ করে দেওয়া হলো। হঠাৎ তাদের নজরে পড়ে একটা সুন্দর চিত্রা হরিণ দূর থেকে দৌড়তে দৌড়তে আসছে তাদের দিকে। হরিণটা এসে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। মালেক মুহাম্মাদের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্যরকমভাবে হরিণটা কথা বলে উঠলো: তোমার মাথা থেকে নাকি তোমার বাহিনীর কারো মাথা থেকে লাফ দেবো।

মালেক মুহাম্মাদ বললো: আমার মাথা থেকে..।

অদ্ভুতরকমভাবে হরিণটা এক লাফে মালেক মুহাম্মাদের মাথায় উঠে গেল এবং সেখান থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলো।

বলছিলাম হরিণটা দৌড়ে পালাতে শুরু করলো। মালেক মুহাম্মাদ এই ঘটনা দেখে তার সঙ্গী উজির নাজির আর সেনাবাহিনীকে বললো: কেউ এসো না আমার পিছে। এই বলেই সে একাকি হরিণের পিছু নিলো। যেতে যেতে এক শহরের প্রবেশদ্বারে গিয়ে পৌঁছলো। সেখানে হরিণের কাছাকাছি হলো মালেক। হরিণ সেখানে আবারও মুখ খুললো। বললো: হে মালেক মুহাম্মাদ! আমি যাচ্ছি। ফিরে আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকো।

মালেক মুহাম্মাদ তো থ বনে গেল। সে হরিণের কথামতো সেখানে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর শহর থেকে একটা লোক এসে মালেককে বললো: হে যুবক! আমার সঙ্গে এসো! শহরের বাদশাহ তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে। তোমার সঙ্গে তাঁর কাজ আছে।

লোকটা একথা বলেই তার পথে পা বাড়ালো।  মালেক মুহাম্মাদও তার পেছনে পেছনে যেতে লাগলো। তার মনে কৌতূহল কী জানি কী হয়। যেতে যেতে এক সময় গিয়ে পৌঁছে গেল বাদশার দরবারে। ওই বাদশার এক মেয়ে ছিল বোবা। তার ঠোঁট দিয়ে কোনো শব্দই বের হত না। বহু চেষ্টা করেও কন্যার মুখ দিয়ে কোনো কথা শুনতে পারে নি বাদশা। মালেক মুহাম্মাদ প্রাসাদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বাদশা তার মেয়ের কথাটা তাকে জানালো। এরপর বললো: তুমি যদি এই রাতের মধ্যে মানে ভোরে সূর্য ওঠার আগে মেয়ের মুখ থেকে কথা বের করতে পারো তাহলে রাজকন্যাকে তোমার সঙ্গে বিয়ে দেবো। আর যদি না পারো তাহলে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তোমার মাথা কাটা যাবে।

মালেক মুহাম্মাদ এইসব শর্ত মর্ত এড়িয়ে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কয়েকজন সেপাই এসে মালেককে রাজকন্যার কামরায় ঢুকতে বাধ্য করলো। মালেক রুমে ঢুকতেই রুমের দরোজা বন্ধ করে দিলো পেয়াদারা।* (চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/১০/টি-১০৫/অ-১১০