আগস্ট ২১, ২০১৬ ১৯:৪০ Asia/Dhaka

আমরা ‘সোলায়মানের আপেল’ নামে নতুন একটি গল্প শুনছিলাম গত পর্ব থেকে। গল্পটি ছিল এরকম: এক বাদশার তিন সন্তান ছিল। আরও ছিল একটি রহস্যময় বাগান। বাগানটির দরোজা সবসময় বন্ধ ছিল। বাদশা মারা যাবার সময় ছেলেদের ডেকে কিছু অসিয়্যত করে যান। বিশেষ করে ওই বাগানের দরোজা যেন খোলা না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যান।

কিন্তু তার ছেলে অসিয়্যৎটা রক্ষা করে নি। ফলে একটি রহস্যময় হরিণের পাল্লায় পড়ে যায় সে। হরিণ তাকে নিয়ে পৌঁছায় শহরের বাদশার দরবারে। বাদশার ছিল এক বোবা মেয়ে। বাদশা শর্ত দেয় একরাতের মধ্যে ওই বোবা মেয়ের মুখে কথা ফোটাতে না পারলে গর্দান যাবে। পেয়াদারা তাকে মানে মালেক মুহাম্মাদকে ঢুকিয়ে দেয় বাদশার কন্যার রুমে। তারপর কী হয় সে কাহিনী শুনবো আজকের পর্বে।

এদিকে মালেক মুহাম্মাদের বাকি দুই ভাইয়ের কী অবস্থা সেদিকে একবার নজর দেয়া যাক। মালেক মুহাম্মাদের পরের ছোট ভাই মানে দ্বিতীয় ভাই বড় ভাইয়ের জন্য কিছুকাল অপেক্ষা করলো। বহুদিন অপেক্ষা করে দেখলো যে দিন গুণে কোনো লাভ নেই। তখন সে তার ছোট ভাই জামশিদের হাতে বাদশাহির দায়-দায়িত্ব অর্পন করলো। আর সে নিজে গেল বড় ভাইয়ের খবরাখবর নিতে। কীভাবে ভাইয়ের সন্ধান নেওয়া যায় সে কাজে ছুটলো সে। সফরের প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে একাকি সেই পথে রওনা হলো যে পথে ছুটে গিয়েছিল তার বড় ভাই মালেক মুহাম্মাদ।

যেতে যেতে সেই স্থানে গিয়ে উপস্থিত হলো যেখানে মালেক মুহাম্মাদ তার সঙ্গী সাথীদের থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছিল। সেখানে যেতেই ওই সেই হরিণ এসে হাজির হলো তার সামনে এবং তার মাথার উপর দিয়ে পার হয়ে গেল। মালেক ইব্রাহিমও সেই হরিণের পিছু নিলো। যেতে যেতে গিয়ে হাজির হলো একটি দরোজার সামনে। হরিণ তাকে বললো এখানে অপেক্ষা করো! আমি যাবো আর আসবো। মালেক ইব্রাহিম দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর ওই সেই লোকটি এসে হাজির হলো যে তার ভাইকে বাদশার কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ইব্রাহিমকেও নিয়ে গেল।

মালেক ইব্রাহিম প্রাসাদে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বাদশা তার মেয়ের কথাটা তাকে জানালো। এরপর বললো: তুমি যদি এই রাতের মধ্যে মানে ভোরে সূর্য ওঠার আগে মেয়ের মুখ থেকে কথা বের করতে পারো তাহলে রাজকন্যাকে তোমার সঙ্গে বিয়ে দেবো। আর যদি না পারো তাহলে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই তোমার মাথা কাটা যাবে। ও হ্যাঁ! তোমার ভাই মালেক মুহাম্মাদকেও একই শর্ত দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে একরাতে আমার মেয়ের মুখে কথা ফোটাতে পারে নি। যারফলে আমি আদেশ দিয়েছি তার মাথা যেন কেটে ফেলা হয়। এবার তোমার পালা।  

মালেক ইব্রাহিমের হাতও ভালো করে বেঁধে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো বাদশাহর বোবা মেয়ের রুমে। ইব্রাহিমকেও বলে দেওয়া হলো সকাল পর্যন্ত সময় পাবে তুমি। এই রাতের মধ্যে বাদশার কণ্যার মুখ থেকে কথা বের করতে হবে। দরোজা বন্ধ করে দিয়ে পেয়াদারা চলে গেল। সবার মাঝেই এক ধরনের উত্তেজনা-কী হলো না হলো! কন্যার মুখ থেকে কথা বের হলো নাকি হলো না। সকাল হতে না হতেই পেয়াদারা রুমের দরোজা খুললো। দরোজা খুলে তো সবাই অবাক। সবার আশায় গুড়েবালি। কোনো কাজ হয় নি। বাদশার মেয়ের মুখে কথা ফোটে নি। সে আগের মতোই চুপচাপ বসে ছিল। কী আর করা। বাদশার আদেশে মালেক ইব্রাহিমের মাথাটাও গেল।

তিন ভাইয়ের দু ভাইয়ের পরিণতি তো জানলাম। ছোটো ভাইয়ের কী অবস্থা-চলুন দেখা যাক। মালেক জামশিদ তার বড় দু ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করলো দীর্ঘদিন। কিন্তু ফেরার কোনো আলামত না দেখে ভাবলো নিজেই বের হবে ভাইদের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। ঘোড়ায় রওনা হবার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু সঙ্গে নিলো এবং রওনা হয়ে গেল। শহর পেরিয়ে প্রান্তর পেরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো জামশিদ যে পথে গিয়েছিল তার বড় দু'ভাই। যেতে যে ওই সেই জায়গায় গিয়ে উঠলো যেখানে যাবার পর হরিণ এসে কথা বলে।

হরিণ এগিয়ে এলো এবং একইভাবে জামশিদও হরিণের পিছে পিছে ছুটলো ঘোড়া নিয়ে। যেতে যেতে অবশেষে শাহজাদা গিয়ে পৌঁছলো সেই দরোজার কাছে যেখানে গেলে হরিণ বলে: 'তুমি এখানে অপেক্ষা করো! আমি যাবো আর আসবো'। তার পর কী হলো সেই কাহিনী শুনবো পরবর্তী পর্বে। (চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি-১০৫.২/অ-১১১