আগস্ট ২৩, ২০১৬ ১৯:৩৬ Asia/Dhaka

আমরা ‘সোলায়মানের আপেল’ নামে নতুন একটি গল্প  শুনছিলাম। গল্পটি ছিল এরকম: এক বাদশার তিন সন্তান ছিল। আরও ছিল একটি রহস্যময় বাগান। বাগানটির দরোজা সবসময় বন্ধ ছিল। বাদশা মারা যাবার সময় ছেলেদের ডেকে কিছু অসিয়্যত করে যান। বিশেষ করে ওই বাগানের দরোজা যেন খোলা না হয় এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যান। কিন্তু তার বড় ছেলে অসিয়্যৎটা রক্ষা করে নি। ফলে একটি রহস্যময় হরিণের পাল্লায় পড়ে যায় সে।

তার খোঁজখবর নিতে ছোট ভাই মালেক জামশিদের হাতে রাজ্য শাসনের ভার দিয়ে মেজো ভাই মালেক ইব্রাহিম বের হয় ঘোড়া নিয়ে। বড় ভাইয়ের পরিণতি ইব্রাহিমকেও ভোগ করতে হয়। গর্দান যায় তাদের। অবশেষে ছোটভাই জামশিদও হরিণের পিছে পিছে ছুটে যায় ঘোড়া নিয়ে। যেতে যেতে অবশেষে শাহজাদা গিয়ে পৌঁছায় সেই দরোজার কাছে যেখানে গেলে হরিণ বলে: 'তুমি এখানে অপেক্ষা করো! আমি যাবো আর আসবো'। তারপর কী হয় সে কাহিনী শুনবো আজকের পর্বে।

হরিণ জামশিদকে বসিয়ে রেখে চলে যাবার পর জামশিদ ভাবলো বসে থেকে লাভ কী, একটু এদিক ওদিক ঘুরেফিরে দেখি এই হরিণের রহস্যটা কেউ বলতে পারে কিনা। কয়েক পা হাঁটতেই সে দেখতে পেল একটা তাঁবু। এগিয়ে দেখলো তাঁবুর ভেতরে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বসে আছে এক বুড়ি। অবাক দৃষ্টিতে ওই বুড়ি তাকালো জামশিদের দিকে। জামশিদ বুড়ির সামনে গিয়ে বললো: এই বুড়ি! তুমি এখানে কী করো?

বুড়ি হাসতে হাসতে বললো: এসো! তাঁবুর ভেতরে এসো!

জামশিদ তাঁবুর ভেতরে গেল। বুড়ি তার জন্য হুক্কা সাজালো আর পানি নিয়ে এলো। পানি দিতে দিতে বুড়ি বললো: মালেক জামশিদ! কোথায় তোমার স্থান আর এ কোথায় এলে তুমি!

বুড়ি আরও স্পষ্ট করে জামশিদকে বললো: কেন এসেছো তুমি এখানে?

মালেক জামশিদ পেছনের সকল ঘটনা বুড়িকে খুলে বললো। তারপর বললো আমি এখন ওই হরিণের ফেরার অপেক্ষায় আছি। বুড়ি ওই হরিণের কথা শুনতেই মুখটাতে ক্ষুব্ধতা আর চরম আক্রোশ এনে গালি দিলো একটা। মালেক জামশিদ বুড়ির এই কাণ্ড দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল। বুঝে উঠতে পারছিল না কী করবে। একটু চুপ থেকে বুড়িকে জিজ্ঞেসই করে বসলো: কেন তুমি ওই হরিণটাকে গালি দিলে? কী করেছে সে?

বুড়ি কেন হরিণকে গালি দিয়েছিলো সেকথা জানতে চেয়েছিল মালেক জামশিদ। বুড়ি বললো: "মালেক জামশিদ! তোমার যৌবনটাকে মায়া করো,ভালোবাসো। কিছুতেই ওই হরিণের ফাঁদে পা দিয়ো না! এই হরিণ হলো এই শহরের বাদশার মেয়ে। নিজে হরিণের রূপ ধরে এই বনে এসে ঘোরাফেরা করে সে। তারপর যুবকদের দেখে দেখে বিভ্রান্ত করে এবং নিয়ে যায় বাদশার কাছে। যুবক বাদশার দরবারে গেলে সে তার আসল রূপ মানে শাহজাদি সেজে নিজের কামরায় ঢুকে অসুস্থতার ভান করে শুয়ে থাকে। কোনো কথা বলে না,বোবা সেজে বসে থাকে। আর তার বাবা বাদশাহ যুবকদেরকে বাধ্য করে তার মুখ থেকে কথা বের করতে। যদি কথা বের করতে না পারে তাকে হত্যা করে। এ পর্যন্ত অন্তত দুই শ যুবককে হত্যা করেছে এই বাদশা আর তার এই মেয়ে"।

মালেক জামশিদ বুড়ির মুখে এসব কথা শুনার পর ভাইদের জন্য তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। ভয়ও পেয়ে যায় কিছুটা। ভাবে এ কোন আজব ফাঁদে পড়ে গেলাম। বুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো: আমি এখন কী করবো তাহলে?

বুড়ি বললো: "আমি তোমাকে একটা আপেল দেবো। এই আপেলটা নবী হযরত সোলায়মান (আ) এর। তোমাকে যখন রাতের বেলা শাহজাদির কামরায় ঢোকানো হবে তখন তুমি এক কাজ করবে। তোমাকে তো শাহজাদির মুখে কথা ফোটাতে হবে! তুমি রুমে ঢুকেই আপেলটাকে চুরি করে সতর্কতার সঙ্গে বাতির নীচে রেখে দেবে। এরপর এমনভাবে ফিসফিস করে আপেলের সঙ্গে কথা বলবে যেন দেয়ালও তা শুনতে না পারে। প্রথমেই বলবে, দেখো! তোমাকে আমি হযরত সোলায়মান (আ) এর কবরের কসম দিচ্ছি! কথা বলো! রাতটা আমাদের জন্য আনন্দময় হোক"!

মালেক জামশিদ বুড়ির হাত থেকে আপেলটা নিয়ে তার পকেটে ঢুকালো। তারপর তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পড়লো তাঁবু থেকে। সোজা তার আগের জায়গায় মানে শহরের গেইটের পাশে যেখানে সে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। একটু পরেই সেই লোকটি এসে জামশিদকে নিয়ে গেল বাদশার কাছে। বাদশা মালেক জামশিদের দিকে তাকিয়ে আগের কথাগুলোই বললো: "আমার কন্যা কথা বলতে পারে না। তুমি যদি আজ রাতের মধ্যে তার মুখে কথা ফোটাতে পারো তাহলে তোমার সাথে তাকে বিয়ে দেবো। আর না পারলে তোমার দু'ভাইয়ের মতো সকালে তোমারও গর্দান যাবে"।

এই বলেই মালেক জামশিদকে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো শাহজাদির কামরায়। রাত ঘনিয়ে এলে জামশিদ যতই চেষ্টা করলো শাহজাদির মুখ থেকে কোনো কথাই বের করতে পারলো না। অবশেষে তার পকেট থেকে বুড়ির দেওয়া আপেলটা বের করে বাতির নীচে আলতোভাবে রেখে দিলো। তারপর আপেলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো: "তোকে আমি হযরত সোলায়মান (আ) এর কবরের কসম দিচ্ছি, কথা বলো! রাতটা আমাদের সুন্দর কাটুক"।

জামশিদ কসম দিতেই আপেল আশ্চর্যরকমভাবে  একটা কাহিনী বলতে শুরু করে দিলো। সে কাহিনী আজ আর শোনার সময় নেই। পরবর্তী পর্বে শোনাবো ইনশাআল্লাহ। (চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি-১০৬/অ-১১২/ই-২৬