আগস্ট ২৯, ২০১৬ ১৭:১২ Asia/Dhaka

‘সোলায়মানের আপেল’ নামক গল্পটির গত পর্বে বলেছিলাম রাত ঘনিয়ে এলে জামশিদ যতই চেষ্টা করলো শাহজাদির মুখ থেকে কোনো কথাই বের করতে পারলো না। অবশেষে তার পকেট থেকে বুড়ির দেওয়া আপেলটা বের করে বাতির নীচে আলতোভাবে রেখে দিলো। তারপর আপেলের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো: "তোকে আমি হযরত সোলায়মান (আ) এর কবরের কসম দিচ্ছি, কথা বলো! রাতটা আমাদের সুন্দর কাটুক"। জামশিদ কসম দিতেই আপেল আশ্চর্যরকমভাবে একটা কাহিনী বলতে শুরু করে দিলো।

সোলায়মানি আপেলের বলা কাহিনীটি ছিল এরকম: প্রাচীনকালে তিন বন্ধু ছিল। তাদের একজন ছিল মোল্লা একজন কার্পেন্টার আর অপরজন ছিল টেইলার। তাদের পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব ছিল বেশ গভীর। তারা একদিন একসঙ্গে বেরিয়ে একটা বাগান ইজারা নিলো। রাত ঘনিয়ে এলে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয় দু'জন ঘুমোবে আর একজন পাহারা দেবে। পাহারার কাজটা রাতভর এক জনের পর একজন পালাক্রমে করবে। বলা তো যায় না কখোন কোন ভয়ংকর জন্তু এসে হামলা করে বসে জীবনের গতি সাঙ্গ করে দেয় কিংবা কেউ এসে তাদের বাগানের আঙুর,আপেল চুরি করে নিয়ে যায়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সবার আগে কার্পেন্টার মানে কাঠমিস্ত্রির পালা। কাঠমিস্ত্রি পাহারা দেয় আর মোল্লা এবং টেইলার ঘুমিয়ে পড়ে। কাঠমিস্ত্রি এখন পাহারাদার। পাহারাদার এদিক ওদিক পায়চারি করলো কিছুক্ষণ। তারপর তার দু'চোখে নেমে এলো ঘুমের তাড়া। কিন্তু সে ভাবলো ঘুমিয়ে পড়লে তো চলবে না। জেগে থাকতে হবে। ঘুম তাড়ানো যায় কীভাবে? ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা বুদ্ধি এলো তার। হাতের কাছে যে কাঠের টুকরো ছিল আরো কিছু কাঠ কুড়িয়ে এনে জমালো। টুকরো টুকরো কাঠ জোড়া দিয়ে দিয়ে শুরু করলো ভাষ্কর্য তৈরি। একটি মেয়ের ভাষ্কর্য। কাঠমিস্ত্রির পাহারার সময় যখন শেষ হলো,তখন ছোট্ট তরুণীর ভাষ্কর্যের কাজও শেষ হয়ে গেল।

ভাষ্কর্যের কাজ শেষ করে কাঠমিস্ত্রি ভাষ্কর্যটাকে এক পাশে রেখে টেইলারকে জাগিয়ে তুললো। এখন টেইলার মানে জামা কাপড় তৈরি করে যে তার পাহারা দেওয়ার পালা। টেইলার ঘুম থেকে উঠে পাহারা দেওয়ার জন্য তৈরি হলো। দেখলো কাঠমিস্ত্রি বন্ধুটা কী চমৎকার ভাষ্কর্য একটা তৈরি করেছে কাঠের টুকরো জোড়া দিয়ে। বাহ! কী সুন্দর এক তরুণীর ভাষ্কর্য। ভালো করে ভাষ্কর্যটা দেখলো টেইলার। মনে মনে বললো: একেই বলে শিল্প! মজার ব্যাপার হচ্ছে মিস্ত্রি বন্ধুটা শিল্পটি তৈরি করেছে যেন তার চোখে ঘুম না আসে। টেইলার বন্ধুর মাথায়ও একটা বুদ্ধি এলো। সে তার কাছে থাকা টুকরো টুকরো কাপড়ের সাথে খুঁজে খুঁজে আরও কিছু কাপড় জমিয়ে একটা জামা বানালো। ওই জামাটি পরিয়ে দিলো ভাষ্কর্যটির গায়ে। জামাটি পরানোর পর টেইলার ভাষ্কর্যটিকে তার আগের জায়গায় নিয়ে রেখে দিলো। কাজটি করে সেও নিজেকে ব্যস্ত রাখলো যাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে না পড়ে।

কাঠমিস্ত্রি যে তরুণীর ভাষ্কর্য বানালো তাতে জামা বানিয়ে পরিয়ে দিলো টেইলার। জামা পরানো শেষ করার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় তার পাহারার পালা। তাড়াতাড়ি সে গিয়ে মোল্লাকে জাগিয়ে তুলে বললো: যাও! এবার তোমার পাহারার পালা। মোল্লা উঠে গেল এবং দেখলো কাঠমিস্ত্রি বন্ধু যে ভাষ্কর্য নির্মাণ করেছে, টেইলার তাতে জামা বানিয়ে পরিয়ে দিয়েছে। এবার মোল্লাও শুরু করে দিলো তার কাজ। কী সব পড়ে ফুঁ টু দিয়ে ভাষ্কর্যটাকে প্রাণ দিয়ে দিলো। আশ্চর্যরকমভাবে ভাষ্কর্যকন্যা সোজা হয়ে জীবন্ত মানুষের মতো উঠে দাঁড়ালো। তখন ভোরবেলা।

কাঠমিস্ত্রি আর টেইলারও তখন ঘুম থেকে উঠে পড়লো। জেগে উঠতেই তাদের তো চোখ ছানাবড়া। এতো সুন্দরী মেয়ে। তিনজনই তাকে দেখে বললো এ কন্যার অধিকারী আমি। ব্যাস! লেগে গেল ঝগড়া। তিনবন্ধুর মাঝে তুমুল ঝগড়া। একজন আরেকজনের গলা চেপে ধরে মেরে ফেলার উপক্রম। কাঠমিস্ত্রি বললো: একে বানিয়েছি আমি! সুতরাং ও আমার। টেইলার বললো: আমি নিজ হাতে ওকে জামা পরিয়ে সুন্দরি বানিয়েছি। ও আমার! মোল্লাও বললো: ও তো ছিল নিষ্প্রাণ এক ভাষ্কর্য মাত্র। আমি ওকে জীবন্ত করে তুলেছি। ও আমারই!

হে মালেক জামশিদ! এবার তুমিই বলো: কার দাবি ঠিক? এ মেয়ের অধিকারী কে?

মালেক জামশিদ বললো: 'কাঠমিস্ত্রির দাবিটাই সঙ্গত! কারণ সে যদি ওর ভাষ্কর্যটা নির্মাণ না করতো তাহলে বাকি দুজনের পক্ষে কিছুই করা সম্ভব হতো না'।

মালেক জামশিদের কথা শুনে হঠাৎ করে শাহজাদি বলে উঠলো: 'না মালেক জামশিদ! প্রকৃত অধিকারী মোল্লা! কেননা সে যদি দোয়া না করতো তাহলে ভাষ্কর্যটি নিষ্প্রাণ হয়েই থাকতো। নিষ্প্রাণ ভাষ্কর্যকে জামা পরালেই বা কী হতো'!

শাহজাদির কামরার বাইরে প্রহরারত বাদশার কর্মচারীরা যখন শুনলো রাজকন্যা কথা বলেছে, দ্রুত বাদশাকে গিয়ে খবরটা জানালো। বাদশাহ যখন শুনলো তার মেয়ে কথা বলেছে। ভীষণ খুশি হয়ে গেল এবং মেয়ের রুমে এসে নিজ কানে শুনে নিশ্চিত হতে চাইলো। মেয়েও দেখলো এখন আর অস্বীকার করার কোনো জো নেই।

তাছাড়া মালেক জামশিদকেও তার পছন্দ হয়েছে,ভালো লেগেছে তাই সে কথা বলতে শুরু করে দিলো। মালেক জামশিদকে সে বললো: তুমিই সেই যার অপেক্ষায় ছিলাম এতোদিন। জামশিদেরও ভালোই লেগেছে মেয়েটিকে মানে শাহজাদিকে। সে তাই বললো: আমি একটি শর্তে বিয়ে করতে পারি। শর্তটা হলো এ ধরনের বোবার অভিনয় আর কক্ষণো করা যাবে না। শাহজাদি মেনে নিলো। শত থলি মুদ্রা বিলালো দরিদ্রদের মাঝে। বাদশার আদেশে শহরকে সাজানো হলো জাকজমক করে। সাতদিন সাত রাত ধরে উৎসব করে সপ্তম রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান হলো।

উপরে গেলাম,ময়দা ছিল

নীচে এলাম খামির হলো

কিসসা আমাদের এ-ই ছিল। (সমাপ্ত)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি:১০৭/অ:১১৩/ই:২৭