সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৬ ১৪:৫৫ Asia/Dhaka

আমরা  ''তিগ তরুণ'' গল্পটি শুনছিলাম। গল্পটি হলো এক বাদশার সন্তানাদি ছিল না। পরে এক দরবেশের দোয়ায় তার তিনটি মেয়ে আর একটি ছেলের জন্ম হলো। বাবার মৃত্যুর আগে ছেলেকে মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে যায় এবং ছেলে সে অনুযায়ী বিয়ে দিয়ে দেয় বোনদের। একদিন জাভনতিগ চেহেণগিসের ছবি দেখে প্রেমে পড়ে যায় এবং তার দুই বন্ধু,নক্ষত্রবিদ ও দারিয়াবোরসহ কবুতর, বিড়াল এবং কুকুর নিয়ে পথে রওনা হয়ে যায়।

প্রথম শহরে পৌঁছে সে সাতমাথা দৈত্যকে মেরে বাদশাহর কন্যাকে লাভ করে এবং প্রচুর সম্পদ পায়। সেগুলো নক্ষত্রবিদ বন্ধুকে দিয়ে পরের শহরে গিয়ে শোনে একটি বিশাল অজগর প্রতিদিস সে শহরের সাতটি কন্যা এবং সাত পাতিল স্যুপের বিনিময়ে সামান্য পানি দেয়। জাভনতিগ ওই অজগরকে মারার কথা জানায় বাদশাকে। বিনিময়ে বাদশা যা কিছু দেবে তাই নেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

জাভনতিগ বাদশাকে যে অজগর সাপ মেরে বিপদ থেকে মুক্তি দেবে বলে পয়গাম পাঠিয়েছে, বাদশার বিশ্বাস হয় নি। বাদশা বললো: আমার সকল সেনা সামন্ত পারে নি অজগর সাপের কোনো ক্ষতি করতে, আর এই একজন কী করে সেই অজগর সাপ মেরে আমাদের উদ্ধার করবে! বাহকের মাধ্যমে বাদশা জাভনতিগকে জানাতে বললো: যদি অজগরকে সত্যিই মেরে ফেলতে পারে তাহলে বাদশার কন্যা এবং তার সম্পদের অর্ধেক তাকে উপহার দেওয়া হবে। পরের দিন যথারীতি বাদশার কন্যার পালা ছিল। কেননা আর কোনো কন্যা অবশিষ্ট ছিল ওই শহরে। কন্যাকে সাত পাতিল অশ মানে স্যুপসহ পাঠানো হলো অজগরের জন্য যাতে অজগর পানির লাইন ছেড়ে দেয়।

জাভনতিগ গিয়ে দাঁড়ালো অজগরের মাথার উপরে। অজগর যখন শাহজাদিকে খাওয়ার জন্য মাথা উঁচু করলো তরবারি দিয়ে সজোরে কোপ মেরে সাপের মাথাটা আলাদা করে ফেললো। দুই টুকরো হয়ে গেল অজগর। বাদশার কাছে দ্রুত সেই খবর চলে গেল। বাদশাকে বললো তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ের আয়োজন করো। অচেনা সেই যুবক অজগর সাপটিকে দুই টুকরো করে ফেলেছে। এখন আর আমাদের পানির কোনো সমস্যা নেই। বাদশাহ এই খবর শুনে ভীষণ খুশি হয়ে গেল এবং সাত রাত সাত দিন ধরে উৎসবের আয়োজন করলো। মেয়ের বিয়ে দিলো এবং মেয়ের সম্পদের অর্ধেকটা উপহার দিলো জাভনতিগকে।

বিয়ের পর জাভনতিগ তার সফরে বের হবার মূল উদ্দেশ্যটা বাদশাকে জানালো। শাহজাদি আর উপহারের মালামাল সব দিয়ে দিলো তার বন্ধু দারিয়াবোরকে। এরপর সে তার সফরসঙ্গী কুকুর, বেড়াল এবং কবুতরকে নিয়ে রওনা হয়ে গেল চেলগিসের সন্ধানে। পাহাড় পর্বত, মরু প্রান্তর পেরিয়ে সে গিয়ে পৌঁছলো একটি বাড়িতে। পাহাড়ের পাদদেশে সেই ঘরটি বানানো হয়েছিল। জাভনতিগ ওই ঘরের দরোজায় টোকা দিলো। দরোজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো এক বুড়ি। জাভনতিগ বুড়িকে বললো: 'যদি অনুমতি দাও তাহলে এই রাতটা আমরা চাচ্ছি তোমার ঘরে কাটাতে'।

বুড়ি বললো: আমার স্বামি এখন ঘরে নেই। সে ফিরে এসে যদি তোমাকে দেখে, হত্যা করে ফেলবে তোমাকে।

যুবক বললো: ঘরে আসার অনুমতি দাও! আশ্রয়ের ব্যাপারটা তো আল্লাহর হাতে। তিনি জন্ম-মৃত্যুর মালিক। জাভনতিগ ঘরে প্রবেশ করলো।

বুড়ি গেল ছাদের উপর। সেখান থেকে স্বামির আসার পথের দিকে তাকিয়ে দেখলো স্বামি প্রায় পৌঁছে গেছে। একটু পরেই চলে আসবে বাসায়। তাড়াতাড়ি ছাড় থেকে নেমে বাসায় গিয়ে জাভনতিগকে ঢুকিয়ে রাখলো একটি সিন্দুকে। সিন্দুকের তালা মেরে দিলো। স্বামি ঘরে ফেরার পর মহিলা বললো: অচেনা এক অতিথি এসেছে। শপথ করো তাকে দেখলে তুমি উত্তেজিত হবে না, বিরক্ত করবে না। বুড়ো শপথ করলো যে অতিথিকে সে কোনোরকম বিরক্ত করবে না।

বুড়ি এবার যুবককে সিন্দুক থেকে বের করে আনলো বাইরে। বুড়ো ওই যুবককে দেখামাত্র বুড়িকে বললো: এই নারী! তুমি তোমার নিজের ভাইকেও চিনতে পারলে না! বুড়োর কথা শুনে জাভনতিগ বুঝতে পারলো যে এই নারী হলো তারই ছোট বোন। ভীষণ খুশি হয়ে গেল।

রাতটা কাটিয়ে দিলো বোনের বাসাতেই। জাভনতিগ তার সফরের মূল উদ্দেশ্যটা জানালো তার বোনের স্বামিকে। সকালবেলা ছোট বোনের স্বামি জাভনতিগকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল হাত ধরে। একটি টিলার উপর গিয়ে দূরে একটি ঘর দেখিয়ে বললো ওই পার্বত্য উপত্যকায় যে ঘরটি দেখা যায় সেটি তোমার বড় বোনের। ওখান থেকে যে জায়গাটা খোলামেলা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো তোমার বোনের স্বামির। তুমি যদি তোমার মেজো বোনের বাসায়ও যেতে চাও তাহলে বড় বোনের বাসায় যাবে। সেই বোন তোমাকে দেখিয়ে দেবে। আর যদি চেলগিসের সন্ধানে যেতে চাও তোমার বোন তোমাকে ভালো দিক-নির্দেশনা দিতে পারবে।

জাভনতিগ বোনের স্বামির দিক-নির্দেশনা পেয়ে রওনা হয়ে গেল বড় বোনের বাসার উদ্দেশ্যে। বোনের বাসায় পৌঁছে সেখানে রাত কাটিয়ে দিলো। সকালবেলা বড় বোনের স্বামি একটি চিঠি লিখলো তার মায়ের উদ্দেশ্যে। একটি সোলায়মানি আংটিও জাভনতিগকে দিলো। তারপর বললো: এই চিঠিতে আমি আমার মাকে লিখেছি তোমাকে যেন চেলগিসের বাসার খোঁজ দিতে সহযোগিতা করে। এরপর মায়ের বাসার ঠিকানাও দিয়ে দিলো জাভনতিগকে। জাভনতিগ বড় বোন এবং বোনের স্বামির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয়ে গেল বোনের শ্বাশুড়ির বাসার উদ্দেশ্যে।*

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি:১০৯/অ:১১৫/ই:৩০