জানুয়ারি ২৮, ২০১৭ ১৫:৩৯ Asia/Dhaka

ম্যারি উইনার শৈশব থেকেই আল্লাহ বা স্রস্টা সম্পর্কে বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনেক কথা শুনতেন। বাইবেলের নানা গল্প ও  অন্য অনেক বিষয় থেকে আল্লাহর দয়া আর ক্ষমাশীলতার কথা তারা বলতেন। আর এসব কথা ম্যারির মনকে আচ্ছন্ন করে রাখত। তবে স্রস্টা সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণের জন্য ম্যারি আরো বেশি তথ্য ও সময়ের মুখাপেক্ষী ছিলেন।

ধর্ম বিষয়ে নানা প্রশ্ন জাগতো তার মধ্যে। কিন্তু সেইসব প্রশ্নের জবাব পেতেন না খ্রিস্ট ধর্মের পরিমণ্ডলে। এভাবে তার শৈশব ও যৌবন কেটে গেছে কোনো বড় পরিবর্তন ছাড়াই। এ অবস্থায় একদিন হঠাৎ পথে হোঁচট খেলে ম্যারির বাম হাতের কব্জির নীচের অংশ ভেঙে যায়। ফলে তাকে যেতে হয় হাসপাতালে। এর পরের ঘটনা সম্পর্কে ম্যারি উইনার বলেছেন:

আমার ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও অপারেশন বা অস্ত্রোপচার করা জরুরি হয়ে পড়েছিল। এ সময় আমি খুবই পেরেশান হয়ে পড়ি এই ভেবে যে, আমার ভাগ্যে খুব খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। কেউই আমার এই উদ্বেগ বা ভয় দূর করতে পারছিল না। সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিলেন। কিন্তু কোনো কাজ হল না। এমন সময় আমার এক মুসলিম বান্ধবীও আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে সমবেদনা জানান। যখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমি খুবই উদ্বিগ্ন ও হতাশ তখন সেই বান্ধবী হাসপাতালে এসে আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বললেন খুব সুন্দর কিছু কথা:

মানুষ যখন আল্লাহ বা স্রস্টাকে ভালোবাসে তখন সে যেন প্রকৃতির সমস্ত শক্তিকে নিজের সেবক করে নেয়। মানুষ যদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাহলে তার কখনও একাকীত্ব অনুভব করা উচিত নয়। আমরা যেখানেই থাকি না কেন আল্লাহ আমাদের সাথেই রয়েছেন। মৃত্যু ও জীবন তাঁরই হাতে।

এইসব কথা শোনার পর ম্যারি তার সমস্ত অনুভূতি নিয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। এর পরের ঘটনা সম্পর্কে উইনার বলেছেন: "আমাকে যখন অস্ত্রোপচারের কক্ষে নিয়ে আসা হল তখন সব কিছুই স্বাভাবিক পথে এগিয়ে যাচ্ছিল। আমার রক্তে সুগারের পরিমাণও ছিল এমন যে তা কোনো সমস্যা করত না। অস্ত্রোপচারের পর আমার জ্ঞান ফিরে আসলে যখন সিসিইউ কক্ষে তথা বিশেষ নিরাপত্তামূলক নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সেবাযত্নের কেন্দ্রে আনা হল তখন আমি ভেবেছিলাম যে, আমি মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য সংজ্ঞাহারা ছিলাম। কিন্তু আমার বান্ধবী বললেন, তুমি চারদিন ধরে কোমায় ছিলে। আমরা তো তোমার বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কারণ, তোমার রক্তে শর্করার মাত্রা ১৪০০ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। আর এই মাত্রায় মানুষের মৃত্যু ঘটে। আর এখানেই বুঝলাম যে আল্লাহ কত বেশি দয়ালু এবং এটা মহান আল্লাহর এক মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনা।"

উইনার আরো বলেছেন:

"এই ঘটনার ফলে আল্লাহর প্রতি আমার বিশ্বাস সুদৃঢ় হল এবং আমি বুঝলাম যে সবকিছুই রয়েছে মহান আল্লাহর কুদরাতের হাতে। যেখানে চিকিৎসা বিজ্ঞান মানুষকে জীবিত রাখতে সক্ষম নয় সেখানে একমাত্র মহান আল্লাহই মানুষের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারেন। এ অবস্থায় আমার সেই মুসলিম বান্ধবীর কথা মনে পড়ল যে আমাকে চরম হতাশার মধ্যে সাহায্য করতে ছুটে এসেছিল। সুস্থ হওয়ার পর তার কাছে গেলাম এবং যেসব কথা তিনি আমায় বলেছিলেন সেই কথাগুলো সম্পর্কে আরো বেশি জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাকে যা বলেছিলাম তা ছিল পবিত্র কুরআনের কয়েকটি বাক্যের বা বাণীর মর্মার্থ ও অনুবাদ মাত্র। এ বই মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ। ফলে আমিও কুরআন পড়ার করার জন্য আগ্রহী হলাম।" 

ম্যারি কুরআন পড়ার পর এ মহাগ্রন্থকে নিজের হৃদয়ের সঙ্গে খোদায়ী বাস্তবতাগুলো বোঝার এক সংযোগ-সূত্র হিসেবে দেখতে পেলেন।  তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: "আমার মতে পবিত্র কুরআন এক খোদায়ী উপহার এবং আমি মহান আল্লাহর কাছে এ মহাগ্রন্থের জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি যতই পবিত্র কুরআনের অনুরাগী হচ্ছিলাম ততই আমার মনের সব প্রশ্নের জবাবগুলো পাচ্ছিলাম এ মহাগ্রন্থে। কুরআন অধ্যয়নের পর আমি যেন এক নতুন জীবন শুরু করলাম। এক অদ্ভুত প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস আমার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল।" 

ব্রিটিশ নও-মুসলিম ম্যারি উইনার পবিত্র কুরআন সম্পর্কে আরো বলেছেন, "এ মহাগ্রন্থে সব বিষয়ের আলোচনা রয়েছে। কুরআন মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গতম গাইড বা পথ-নির্দেশনা। যে কেউ কুরআন মনোযোগ দিয়ে পড়বে ও বিশ্লেষণ করবে সে এই মহাগ্রন্থের প্রতি ঈমান আনবে।"

ম্যারি উইনার মুসলমান হওয়ার পর আত্মিক ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তির জন্য নিজেকে ইসলামের কাছে ঋণী বলে মনে করেন। তিনি নামাজ ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রশান্তি চেয়ে থাকেন।

ব্রিটিশ নও-মুসলিম ম্যারি উইনার  এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 

"কর্মস্থল থেকে রাতে যখন বাসায় ফিরি তখন মনে হয় যেন চিন্তা-ভাবনারও কোনো শক্তি  নেই। এ অবস্থায় নামাজ আদায়ে মশগুল হই এবং পরিপূর্ণ প্রশান্তি নিয়ে আল্লাহর কাছে মনের সব কথা ও ব্যথা-বেদনার কথা খুলে বলি মুনাজাতের আঙ্গিকে। কারণ, আমি জানি যে, আল্লাহ সব জানেন ও শোনেন; তিনিই আমার গোপন সব কিছুর সংরক্ষক এবং তিনিই আমায় সাহায্য করবেন। কখনও কখনও কুরআন খুলে এমন সব আয়াত পাই যেখানে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আমার সমস্যাগুলোর জবাব থাকে। এইসব মুহূর্তগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।"

ব্রিটিশ নও-মুসলিম ম্যারি উইনার বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন: "ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও প্রশান্তির ধর্ম। মুসলমানরাও বিশ্বে শান্তিই চায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এ বাস্তবতার ঠিক বিপরীত তথ্য প্রচার করছে। তারা প্রচার করছে যে, মুসলমানরা কেবলই যুদ্ধ চায়। কিন্তু আসলে তারা কেবল তাদের অধিকার চাচ্ছে, অন্য কিছু নয়। আমি বিশ্বের সব মজলুমের সাফল্য কামনা করছি।" # 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/২৮