অক্টোবর ১৮, ২০১৮ ১৪:৪২ Asia/Dhaka
  • দেখব ঘুরে ইরান এবার: আমিরে চাখমক কমপ্লেস এবং ইয়াযদ বাজার

হিজরি নবম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে শাহরুখ তৈমুরিয়দের অন্যতম শাসক আমির জালালুদ্দিন চাখমক তাদের শাসনাধীন ইয়াযদ অঞ্চলে পৌঁছেন, তখন তার স্ত্রী বিবি ফাতেমা খাতুনের সহযোগিতায় ওই শহর উন্নয়নের জন্য একটা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়।

সেই কমপ্লেক্সটি এখন ইয়াযদ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর অন্যতম হিসেবে প্রসিদ্ধি পাচ্ছে। আমির চাখমক কমপ্লেক্স মোটামুটি প্রাচীন শহরের মাঝখানে অবস্থিত এবং ইয়াজদের গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকার মর্যাদায় অভিষিক্ত। কমপ্লেক্সের ভেতর বাজার যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে মসজিদ, বিবি ফাতেমা পানির হাউজ, আমির চাখমক পানির হাউজ ইত্যাদি। এগুলোর সবই হিজরি নবম শতকের ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং ইরানের ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এইসব স্থাপনার নাম। 

আমির চাখমক স্কোয়ার সাফাভি শাসনামলেও এই একই নামে প্রসিদ্ধ ছিল। শাহ আব্বাস সাফাভির সময় এইসব নিদর্শনের বেশিরভাগই পুনরায় সংস্কার করে ঝকমকে করে তোলা হয়। আমির চাখমক স্কোয়ারের পূর্বদিকে হাজি কারবার নামে একটি বাজার আছে। এই বাজারটি নিজাম উদ্দিন হাজি কানবার জাহানশাহী নির্মিত স্থাপনার একটি। এই ব্যক্তি জাহানশাহের আদেশে ইয়াযদে এসে আরো একটি স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। এরপর বাজারের প্রধান প্রবেশদ্বারে বেশ উঁচু এবং চমৎকার আরো অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেন। আমির চাখমক মসজিদের নামটিও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ইয়াযদ শহরের জামে মসজিদের পরই এই মসজিদটির স্থান। অনেকেই আমির চাখমক মসজিদকে নতুন জামে মসজিদ নামেও উল্লেখ করে থাকেন।

 এই কমপ্লেক্সের ভেতর দুটি জলাধারও আছে, আগেই বলেছিলাম আমরা। একটির নাম ফাতেমা অপরটির নাম হাজি কানবার। আমির চাখমক বিশ্রামাগারের মধ্যে অবস্থিত এই জলাধারগুলো এখন আর জলাধার বা পানির হাউজ হিসেবে নয় বরং পানি যাদুঘর হিসেবেই বেশি পরিচিত। কেননা নাম থেকে নিশ্চয়ই বোঝা যায় এগুলোকে এখন যাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।

 ইয়াজদের আমির চাখমক স্কোয়ারের উত্তর অংশে এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একটি অবস্থিত। ওই স্থাপনার ভেতর খ্রিষ্টিয় ২০০০ সালে ‘পানি যাদুঘর’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এই পানি যাদুঘরটি সমগ্র পৃথিবীর নজিরবিহীন একটি স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। ঐতিহাসিক এই স্থাপনা এবং মিউজিয়ামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শত শত বছর আগের একটি পানির নালা পাঁচ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। পাঁচ তলার তিন তলাই মাটির নীচে আর দুই তলা উপরে। তার মানে গ্রাউন্ড ফ্লোর হলো চতুর্থ তলা আর উপরে আছে আরেকটি তলা। যাদুঘর ভবনটির ছাদে কূপ থেকে পানি তোলার ব্যবস্থা রয়েছে। কূপের ভেতরে এক ধরনের চর্কা থাকে। ওই চর্কার সাহায্যেই পানি উপরে তোলা হয় এবং গ্রাউন্ড ফ্লোরে থাকা জলাধার পূর্ণ করা হয় ওই চর্কার পানি দিয়ে।

 

খাল খনন করার সাথে সম্পৃক্ত ঐতিহাসিক বিচিত্র সরঞ্জাম রয়েছে এই যাদুঘরে। এগুলোর সংখ্যা দুই শ’রও বেশি হবে। ইয়াজদের মূল খাল বা নালাগুলোর ব্যাপারে বেশিরভাগ প্রামাণ্য দলিল এই যাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছে দর্শকদের দেখার সুবিধার্থে। সেইসাথে রয়েছে পানির পরিমাণ পরিমাপ করার বিভিন্ন সরঞ্জামও। আরও রয়েছে কেনাবেচা আর পানি সরবরাহ করা সংক্রান্ত তথ্যপঞ্জির পাশাপাশি বিচিত্র পাত্র। এসব পাত্র পানি ধারণ করা, পানি বহন করে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি কাজের সাথে সম্পর্কিত। এসবের বাইরেও রয়েছে আরও বহু সরঞ্জাম। 

ইয়াযদ শহরে অন্তত বারোটি ঐতিহাসিক বাজার রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি বাজার হলো ‘খান বাজার’ এবং ‘পাঞ্জে আলি’ বাজার। এসব বাজারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো এখানকার অর্থাৎ ইয়াযদ প্রদেশের স্থানীয় হস্তশিল্পের প্রদর্শনী ও সহজলভ্যতা। খান বাজার ইয়াযদবাসীদের কেনাকাটা বা লেনদেনের প্রধান কেন্দ্র। এক নজরেই এই বাজারের জমজমাট অবস্থা চোখে পড়বে। এই বাজারটিও ইস্পাহান, কেরমান এবং শিরাজ শহরের বাজারগুলোর মতোই বিশাল। 

ইয়াযদ বাজারে রয়েছে বেশ কয়েকটি কমপ্লেক্স। রয়েছে চমৎকার কিছু পরিবেশ যেখানে বসার বা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব স্থানের স্থাপত্যকর্মগুলোও আলাদা রকমের। বাজারের ভেতরটা বেশ খোলামেলা। ছাদও যথেষ্ট উঁচু। এই বাজারের কয়েকটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। যে ই একবার বাজারের ভেতরে যাবে তার ভালো না লেগে পারবে না। বাজারের ভেতরের কয়েকটি অংশে রয়েছে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা। বেশ উঁচু করে সুন্দর কারুকাজের মাধ্যমে এমনভাবে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে যে দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। বলাবাহুল্য! এই আলো প্রবেশেরে আয়োজন পুরো স্থাপনাকে আলাদা একটা মর্যাদা ও গুরুত্ব দিয়েছে। তাছাড়া বাজারের প্রবেশপথ যেমন প্রশস্ত এবং খোলামেলা তেমনি মালামাল খালাস করার জন্য রয়েছে উন্মুক্ত ও বিস্তৃত উঠোন।               

ইয়াযদ বাজারে বহু পেশার সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। তবে ইরানের যে কোনো বাজারেই তেমনটি দেখতে পাওয়া যাবে। খুব একটা ব্যতিক্রম বলা যাবে না। স্বর্ণকারের পেশা সহজেই নজরে পড়বে এখানে। চমৎকার কারুকার্যময় সোনার অলংকার, রূপার অলংকার এই বাজারে প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যাবে। তামা শিল্পেরও ব্যাপক আয়োজন রয়েছে এখানে। তামা দিয়ে তৈরি বিচিত্র হস্তশিল্প সামগ্রী যেমন হাঁড়িপাতিল, বিচিত্র তৈজস, থালাবাটি এবং বহুরকমের শো পিস দেখতে পাওয়া যাবে। এসবের বাইরেও রয়েছে বিচিত্র গালিচার দোকান, জুতার দোকান, মিষ্টির দোকান, সোনার অলঙ্কার রাখার সুন্দর সুন্দর বাক্সের দোকান ইত্যাদি। গ্রামের লোকেরা এবং উপজাতীয়রাও তৈরি করে বিচিত্র হস্তশিল্প। সেগুলোও এই বাজারে দেখতে পাওয়া যাবে।

ইয়াজদের বাজারে মিষ্টি তৈরির রেওয়াজ বেশ প্রাচীন। এখানকার মিষ্টির বেশ সুনামও রয়েছে। এখানকার মিষ্টিও এক ধরনের শিল্প হিসেবে পরিগণিত। ইয়াজদের মিষ্টি তাই প্রাদেশিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন শহরেও পাঠানো হয় এমনকি দেশের বাইরেও প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হয় এখানকার মিষ্টি।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ১৮

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ