পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান
রংধনু আসরের কাছের ও দূরের শিশু-কিশোর বন্ধুরা, তোমাদের সবাইকে জানাচ্ছি পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা 'ঈদ মুবারক'। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পশ্চিমাকালে শাওয়ালের নতুন চাঁদ উঠার পরই শুরু হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। তবে এ আনন্দ একা একা নয়, উপভোগ করতে হবে সবাই মিলে। ঈদের হাসি- আনন্দ বিলিয়ে দিতে হবে গরীব, ইয়াতিম, মিসকিন সবার মাঝে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে রোজাদারদের জন্য এক অপূর্ব উপহার। চমৎকার এ উপহার পেয়ে তোমাদের মনে নিশ্চয়ই খুশির অন্ত নেই, আনন্দের শেষ নেই। তোমাদের এ আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিতে আমরা একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। অনুষ্ঠানটি তৈরি করেছেন আশরাফুর রহমান।
বন্ধুরা, প্রতিবছর ঈদ এলে তোমরা সবাই অনেক আনন্দ করো। কিন্তু তোমাদের মনে কখনো কি প্রশ্ন জেগেছে, ঈদের আগমন কেন এত খুশী, কেন এত আনন্দ? তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- ভেবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ঈদের চাঁদ লিখেছেন-
(দেখ) হযরতের হাসির ছটা ঈদের চাঁদে জাগে
সেই চাঁদেরই রং যেন আজ সবার বুকে জাগে।
বন্ধুরা, এ কবিতা থেকে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো যে, কেন ঈদের চাঁদ উঠলেই সবার মনে খুশির শিহরণ জাগে! আসলে মহানবী (সা.) নামায, ইবাদত ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে এ দিনটি পালন করতেন। আর সেই ধারাবাহিকতায় সারাবিশের মুসলমানরা হিংসা-বিদ্বেষ ও বৈষম্য ভুলে মেতে ওঠেন ঈদের আনন্দে।
তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে, শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠার সাথে সাথেই সবার মনে বেজে ওঠে ঈদ নিয়ে লেখা কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গানটির সুর। খুশিতে দুলতে থাকে সবার হৃদয়।

বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো যে, আমরা কোন গানটির কথা বলছি। হ্যাঁ, তোমরা ঠিকই ধরেছো। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শিশু-কিশোরদের কণ্ঠে শুনি সেই কালজয়ী গানটি। গানটি গেয়েছে শিশুশিল্পী মিফতাহুল জান্নাত, তাসফিয়া জাহান তাহিয়া এবং আবদুল্লাহ আল হিশামের কণ্ঠে।
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানী তাগিদ।।
তোর সোনা-দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ্।
দে জাকাত মুর্দ্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ্।।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদ গাহে। যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে।
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।।
ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরীতে শির্নী তৌহিদের।
তোর দাওয়াতে কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ।।
এ গানে গরিব, ইয়াতিম ও মিসকিনদেরকে উৎকৃষ্ট জিনিস উপহার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তোমরা নিশ্চয়ই সহপাঠী কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে যারা গরিব তাদেরকে ঈদের জামা-জুতোসহ দরকারি জিনিসপত্র উপহার দিয়ে থাকো। অন্যদের মাঝে উপহার বিলানোর আনন্দের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রখ্যাত কবি খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন। তিনি লিখেছেন-
সবার দুয়ার খোলা আজি
কোথাও নেই মানা,
খাঞ্চা ভরে বিলাবো আজ
নানা রকম খানা।
খাঞ্চা ভরে খানা বিলানোর এই ঈদ সম্পর্কে ইরানের বিখ্যাত মরমী করি জালালউদ্দিন মোহাম্মদ রুমি লিখেছেন-
ঈদ এল ঐ ঈদ এল ঐ ঈদ এল
ঈদের সাথে শান্তি সুখের আবেশ এল
ঢোল-তবলা বাজাও আজি ছড়াও খুশির রেশ
আনন্দেরি ঈদ এসেছে পেরিয়ে সকল দ্বেষ।

সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলিয়ে দিতে আকাশের বুক থেকে নেমে এসেছে মহাখুশির ঈদ। ঈদের আগমনে চারিদিকে সাড়া পড়ে গেছে। ফুল-পাখিদের মধ্যেও যেন আনন্দের ঢেউ খেলে যাচ্ছে। কিন্তু তোমরা কি জানো, কবে থেকে ঈদ উদযাপন শুরু হয়েছে? কি বললে- জানো না? ঠিকাছে আমরাই তোমাদেরকে ঈদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বলছি। তোমরা নিশ্চয়ই জানো যে, দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজান মক্কার কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। বদরের প্রান্তরে সংঘটিত হওয়ায় এ যুদ্ধকে 'বদরের যুদ্ধ' বলা হয়।
এ যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান সাহাবী শত্রুপক্ষের এক হাজার সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেন। ওই ঐতিহাসিক ঘটনার মাত্র ১২ দিন অর্থাৎ ২৯ রমজান সন্ধ্যাবেলা শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পেয়ে রাসূলে খোদা ঘোষণা দিলেন, আগামীকাল ঈদুল ফিতর। এরপর থেকে প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে।
আজ থেকে ১৪শ’ বছর আগে শুরু হলেও ঈদ উৎসবকে কখনো পুরোনো ঊৎসব বলে মনে হয়নি। প্রতিটি ঈদের দিনই মুসলমানদের মনে থাকে খুশির আমেজ। ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়ে তারা একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়, কুশলাদি জিজ্ঞেস করা, কোলাকুলিসহ সালাম বিনিময় করে থাকে। দেশ-জাতি তথা মুসলিম উম্মাহ ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মহামিলনের জয়গান গায়।
এ দিনটি রোজাদারদের জন্য আরও খুশির দিন; পুরস্কার প্রাপ্তির দিন। কারণ রমজান মাসে সিয়াম সাধনার প্রতিদান মহান আল্লাহ এ দিনেই দিয়ে থাকেন। সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজে ঈদ আসে জাতীয় মিলনের প্রেরণা নিয়ে। তা সবার হৃদয়ে বুলিয়ে দেয় প্রেম, প্রীতি, আনন্দ আর শান্তির পরশ।
ঈদ কেবল আনন্দের জন্য আসে না, ঈদ আসে পরস্পরের কল্যাণ কামনার জন্য। তাইতো ঈদের দিন দেখা যায় সবাই নিজ পরিবার, পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবসহ বিশ্বে শান্তির জন্য দেখা করে থাকে। আমাদের সবারই উচিত ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, কাশ্মিরসহ বিশ্বের সকল নির্যাতিত মুসলমানের জন্য দোয়া করা, তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা এবং তাদের অধিকারের প্রতি সমর্থন জানানো। ঈদুল ফিতর আমাদের সেই শিক্ষাই দেয়ার জন্য প্রতি বছর হাজির হয়। কবি গোলাম মোস্তফার কথায়-
এনেছে নব-গীতি, এনেছে সুখ-স্মৃতি, এনেছে প্রেম-প্রীতি-পুণ্য,
এনেছে নব-আশা, একতা ভালোবাসা, নিবিড় মিলনের জন্য,
ভ্রাতৃ-প্রণয়ের মহান দৃশ্য!
মিলন-কলগানে মুখর বিশ্ব!
বিভেদ-জ্ঞান যতো আজিকে সব হত
ধন্য ঈদ তুমি ধন্য!
হৃদয়ের সব পাপ-কালিমা মুছে দিতে ঈদে এসেছে। আমরা সবাই মহান আল্লাহর কাছে গুণাহ মাফের জন্য দোয়া করব এবং ঈদের আনন্দ সবার মাঝে ভাগ করে দেব। আর তাহলেই গরিব-দুঃখীরাও ঈদ আনন্দে হাসতে পারবে।
বন্ধুরা, ঈদের আনন্দের রেশ তোমাদের মনে সারাবছর রয়ে যাক-এ প্রত্যাশায় গুটিয়ে নিচ্ছি আজকের বিশেষ অনুষ্ঠান।
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।