জুন ০৭, ২০১৯ ২০:৪৪ Asia/Dhaka
  •  ইসলাম ও শিশু অধিকার (পর্ব-২০): শিশুদেরকে সম্মান প্রদর্শন করা

গত আসরে আমরা শিশুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি শিশুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না।

শিশুকাল থেকেই মানুষের মধ্যে ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়,মাতৃগর্ভ থেকেই একজন মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ শুরু হয়। মা-বাবা বা অভিভাবকরা কিভাবে শিশুকে লালন-পালন করছে তার ওপরও ব্যক্তিত্বের অনেকখানি নির্ভর করে। বড়দেরকে দেখে শিশুরা শেখে এবং বড়রা যদি অন্যকে সম্মান করে তাহলে তাদের মধ্যেও অন্যের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি হয়। আল্লাহ নিজেই মানুষকে উচ্চ মর্যাদা দিয়ে সৃষ্টি করেছন। 

শিশুরা অনুকরণপ্রিয়;তারা যা দেখে তা আত্মস্থ করে। আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি তাদের কোমল মনে স্থায়ীভাবে রেখাপাত করে। এর প্রতিফলন ঘটে তাদের কর্মক্ষেত্রে বা কাজে-কর্মে,সারা জীবনের আচার-আচরণে। শিশুদের কোমল ও দয়াপূর্ণ আচরণ তাদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী ও সমাজের সবার কাছ থেকে ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া শিশুর মৌলিক অধিকার। এ অধিকার শিশুর কল্যাণ ও তার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন,দয়া ও মমতা হলো আল্লাহতায়ালার একটি গুণ। তিনি এই স্নেহ-মমতা মা-বাবার অন্তরে ঢেলে দিয়েছেন। ফলে মা-বাবা তাদের সন্তানকে ভালোবাসে। 

রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের মধ্যেও শিশুদের দুষ্টুমি সহ্য করেছেন। শিশুদের ওপর ক্ষুব্ধ না হয়ে তাদের প্রতি কোমল আচরণ করেছেন। ইসলামি বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) অন্যদের নিয়ে এশার নামাজ আদায় করছিলেনতিনি যখন সিজদায় গেলেন, তখন শিশু হাসান(আ.) ও হোসেন (আ.) তার পিঠের ওপর উঠে বসলেনরাসূলে খোদ সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর সময় তাদের পেছনে থেকে কোমলভাবে ধরলেন এবং পাশে বসালেন। যখনই তিনি সিজদায় যাচ্ছিলেন তখনি তারা তাঁর পিঠে উঠে বসছিলেন এভাবে নামাজ শেষ করে তিনি তাদের দুই জনকে নিজের ঊরুর ওপর বসিয়েছিলেন।

দুষ্টুমি করলেও রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান-হোসেনকে ধমকান নি,তিরস্কার করেননি; বরং স্নেহের সঙ্গে তাদেরকে তাঁর কোলে বসিয়েছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলছে, শিশুদের সঙ্গে কোমল ও দয়াপূর্ণ আচরণ তাদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। অনেকেই শিশুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাকে নিজের জন্য অসম্মানজনক বলে মনে করেন। কিন্তু এটা ইসলামের রীতি নয়। আসলে অন্যকে সম্মান করলে কখনোই নিজের সম্মান কমে না। বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদ (স.) শিশুদেরকে প্রথমে সালাম দিয়েছেন ইসলামি বর্ণনায় এসেছে, একবার কয়েক জন শিশু একসঙ্গে খেলছিল। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের কাছে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’

সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ ও পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে শিশুদেরকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে,তাদের প্রতি স্নেহপরায়ণ হতে হবে, তাদেরকেও সম্মান দেখান দেখাতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না আর বড়দের সম্মান করে না সে আমার উম্মতের অন্তর্গত নয়। 

মনে রাখতে হবে, শুধু নিজের সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে সব শিশুর প্রতি সম্মান, স্নেহ ও ভালোবাসা দেখাতে হবে। যেসব শিশুর বাবা বেঁচে নেই কিংবা বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই,সেসব অনাথ শিশুদের প্রতিও মমত্ববোধ প্রকাশ করতে হবে। পথশিশুরাও মানুষ তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলে চলবে না তাদের ওপরও নির্যাতন করা যাবে না।

অনেকে আছেন যারা অশিক্ষা ও কুশিক্ষার কারণে ইসলামকে বাস্তবিক অর্থে বুঝতে পারে নাঅনেকে ইসলামকে মসজিদের চার দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ কোনো পালনীয় ধর্ম বলে মনে করেনকিন্তু ইসলাম ধর্ম হচ্ছে সার্বজনীন ধর্ম। মানবতার ধর্ম ইসলামে সমাজের ধনী,দরিদ্র,ছোট বড় সকল শ্রেণীর মানুষের অধিকার এবং কর্তব্যের কথা রয়েছে। মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (স.) হচ্ছে বিশ্বের সব মানুষর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি শিশুদের খোঁজখবর নিতেন। এটি তাঁর সুমহান চরিত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিশুদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা ও সম্মানের কারণে তারাও মহানবী (সা.)কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। এ কারণে মহানবী (সা.) যখন কোনো সফর শেষে বাড়িতে ফিরতেন তখন শিশুরা তার আগমনের পথে গিয়ে অপেক্ষা করতো এবং সাদরে অভ্যর্থনা জানাত। যারা ভাবেন কেবল শিশুরাই সম্মান শ্রদ্ধা জানাবে বড়দের কোনো দায়িত্ব নেই তারা ভুল করছেনশিশুদের অন্তরের ভালোবাসা পেতে হলে তাদেরকে ভালোবেসে, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের মন জয় করতে হবে   

মনে রাখতে হবে, শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা বা দয়াহীনতার অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে নিষ্ঠুরতা ছড়িয়ে দেওয়া। আল্লাহতায়ালার দয়া পেতে চাইলেও মানুষকে দয়াশীল হতে হবে। এ কারণে ইসলামের দৃষ্টিতে হৃদয়হীন বা নির্দয় ব্যক্তিরা সবচেয়ে বড় হতভাগ্য। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ