আগস্ট ১৪, ২০১৯ ১৮:০৫ Asia/Dhaka

পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রথম থেকেই শিশু অধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (স.) শিশুদের যথার্থ মর্যাদায় অভিষিক্ত করে শিশুহত্যায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

আরব অঞ্চলের যেসব মানুষ কন্যা শিশুকে জীবিতাবস্থায় মাটিচাপা দিয়ে আনন্দ-উল্লাস করত, ইসলামের নবীর সংস্পর্শে ও দিকনির্দেশনায় তারাই তা পরিত্যাগ করে সভ্য হয়ে উঠে। এভাবে তিনি কোমলমতি শিশুদের পৃথিবীতে নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি শিশুহত্যা থেকে মানুষকে বিরত রাখতে নানা উপায়ে চেষ্টা চালান। তিনি আল্লাহর নির্দেশ বর্ণনা করেন এবং পবিত্র কুরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করে মানুষকে শিক্ষা দেন। মহানবী সবার কাছে আল্লাহর এই বার্তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেন যে, মহান আল্লাহর কাছে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মাপকাঠি হলো তাকওয়া ও পরহেজগারি কে কতটুকু আল্লাহভীতু এবং ধর্মপরায়ন তার ওপর ভিত্তি করেই  মানুষের গুরুত্ব মূল্যায়ন করা হয়। আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ যার তাকওয়া রয়েছে। এর ফলে ছেলে সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার আর কোনো যুক্তি থাকে না। 

শিশুদের প্রতি রাসূলে খোদার সীমাহীন স্নেহ-ভালোবাসার বহু ঘটনা রয়েছে। একবার মহানবী (স.) মসজিদে খুতবা দেওয়া অবস্থায় হঠাৎ দেখলেন তাঁর শিশু নাতি হাসান (আ.) ও হোসেন (আ.) তাঁর দিকে দৌড়ে আসতে যেয়ে পা পিছলে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। সাথে সাথে খুতবা দেওয়া বন্ধ করে মিম্বর থেকে ছুটে এসে তিনি তাঁদেরকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর তাঁদেরকে সামনে বসিয়ে রেখে আবার খুতবা দিতে শুরু করলেন। মসজিদে কোনো শিশু এলে তাকে তিনি সামনে ডেকে নিতেন। তিনি তাঁর সাহাবিদের উদ্দেশ্য করে বলতেন, শিশুদের প্রতি এমন আচরণ করুন, যাতে তাদের মধ্যে আত্মসম্মানবোধ সৃষ্টি হয়। শিশুদের কোনো ধরনের আচরণেই কখনও তিনি বিরক্ত হতেন না। একবার তিনি একটা শিশুকে কোলে নিয়ে মিষ্টি খাওয়াচ্ছিলেন। এমন সময় শিশুটি হঠাৎ তাঁর কোলে প্রস্রাব করে দিল। কিন্তু তিনি তাতে বিন্দুমাত্র বিরক্তও হলেন না; বরং নিজেই পানি দিয়ে ওই স্থানটি ধুয়ে নিলেন।

মহানবী শিশুদের সাথে আনন্দ করে খেলাধুলা করতেন। শুধু তাই নয়, তাদেরকে কোলে নিয়ে তিনি চুমুও খেতেন। একবার হজরত মোহাম্মাদ (স.) নিজ নাতি হাসান (আ.)-কে চুমু খেলেন। সে সময় তার কাছে আকরা বিন হাবেস উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, আমি দশ সন্তানের জনক। কিন্তু আমি কখনও তাদের আদর করে চুমু খাইনি। এ কথা শুনে নবীজি কষ্ট পেয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) ঘোষণা করেছেন, যে ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে শ্রদ্ধা করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়।  

শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য রাসুলে করিম (স.) তাদের সঙ্গে কোমল ব্যবহার নিজে করেছেন এবং অন্যদেরও সদাচার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি চাইতেন শিশুরা যেন কোনো সময় কষ্ট না পায় বা নির্যাতনের শিকার না হয়। শিশুদের যেকোনো মৌলিক চাহিদা মেটাতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত যত্মশীল।

শিশুদের কোনো ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে সব সময় ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিতে বলেছেন। নবী করিম (স.) সবার উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা শিশুসন্তানদের স্নেহ করুন, তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করুন এবং সদাচরণ ও শিষ্টাচার শিক্ষা দিন

অন্যকে জ্ঞান দান করা উত্তম কাজ। কিন্তু শিশুদেরকে জ্ঞান দান করা আরও উত্তম। তাই রাসুলুল্লাহ (স.) মানবসন্তানকে সুশিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দিতে হবে।  শিশুদের কোমল ও পবিত্র মনে যদি একবার কোনো খারাপ ধারণা বা ভয়ভীতি প্রবেশ করে, তাহলে তা তাদের মনে থেকে যায়। তাই নবী করিম (স.) শিশু-কিশোরদের সঙ্গে খেলাচ্ছলেও মিথ্যা বলতে বা প্রতারণা করতে নিষেধ করেছেন। শিশুদেরকে কোনো কথা দিলে তা মেনে চলতে বলেছেন। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে নিষেধ করেছেন।

কোনো শিশু দুষ্টুমি করলে তিনি তাকে কড়া শাসন না করে হাসিমুখে শোধরানোর কৌশল গ্রহণ করতেন। শিশুরা ভুল করলে তিনি সেই ভুল শুধরে দিতেন তাদের মতো করেই। মনে রাখতে হবে, শিশুরা বড়দের দেখে শেখে, বড়রা যা বলে যা করে তারাও তাই করার চেষ্টা করে। বড়দের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চিন্তা-চেতনার প্রভাব শিশুদের ওপর পড়ে। এ কারণে হজরত হাসান (আ.) ও হজরত হোসেন (আ.)'র আচার-আচরণে শিশুকাল থেকেই নবীজির আচার-আচরণের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।

ইতিহাসে এসেছে, একবার শিশু হাসান (আ.) ও শিশু হোসেন (আ.) মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করলেন একজন বৃদ্ধ মুসল্লি ভুলভাবে ওজু করছেন। এই ঘটনা দেখে দুই ভাই-ই বৃদ্ধ মুসল্লির ভুল শোধরানোর সিদ্ধান্ত নিলেন এবং কৌশল অবলম্বন করলেন। তাদের এই কৌশল মুসলমানদের জন্য আদর্শ হয়ে আছে। তারা দু'জনই ওই বৃদ্ধ মুসল্লির কাছে গেলেন এবং খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে বললেন, দয়া করে আপনি কি একটু আমাদের দুই ভাইয়ের ওজু করা দেখবেন এবং বলবেন যে, আমাদের মধ্যে কার ওজু করার পদ্ধতি বেশি সঠিক?

তাদের এই আবেদন ওই বয়স্ক মুসল্লি মেনে নিলেন এবং দুই ভাইয়ের ওজু করার পদ্ধতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তাদের ওজু শেষ হওয়ার পর বৃদ্ধ মুসল্লি বললেন, তোমাদের দু'জনের ওজুই উত্তম বরং আমি এতোদিন যেভাবে ওজু করেছি তা ছিল ভুল। আমি তোমাদের ওজু দেখে ভুল বুঝতে পেরেছি।

বন্ধুরা, আমরা সবাই শিশু অধিকার রক্ষায় আরও সোচ্চার হবো, এ প্রত্যাশায় আসর এখানেই শেষ করছি।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/১৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ