আগস্ট ০৩, ২০১৯ ১৮:৩৫ Asia/Dhaka

প্রিয় বন্ধুরা, সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আশাকরি সবাই ভালো আছেন। যুদ্ধের কারণে শিশুরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, গত আসরে আমরা সেসব সমস্যা নিয়ে খানিকটা আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুকে যুদ্ধে ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

কিন্তু এই সনদ অনেক দেশই মানছে না। তারা শিশুদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শিশুদেরকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিশুদেরকে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আজকের আসরে আমরা শিশুদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্মানের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।

শিশুর প্রতি স্নেহ- ভালোবাসার পাশাপাশি তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদেরকে সম্মান করে কথা বলার অনেক প্রভাব রয়েছে। শিশু যখন সন্মানিতবোধ করে তখন তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় এবং তারা ভালো কাজে উৎসাহবোধ করে। বড়দের মতো ছোটরাও অন্যের প্রিয় হতে চায় এবং শিশুদের প্রত্যাশা বড়রাও তাদেরকে সম্মানকরে কথা বলবে। রাসূলে খোদা (স.) শিশুদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে বলেছেন, "আপনারা শিশুদেরকে ভালোবাসুন, ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন।" তিনি আরও বলেছেন, আপনার শিশুকে নাম ধরে ডাকার সময়ও তার প্রতি সম্মানের বিষয়টি মনে রাখবেন, তাকে পাশে বসার সুযোগ দেবেন এবং সন্তানের সঙ্গে রুক্ষ আচরণ করবেন না। রাসূলে খোদা (স.) আরও বলেছেন, কেউ যখন তাদের সন্তানকে চুমু খায় তখন তার নামে সওয়াব লেখা হয়ে যায়।

রাসূলে খোদা (স.) এসব বক্তব্যের মাধ্যমে শিশুদের প্রতি সঠিক ও পরিপূর্ণ স্নেহ ও সম্মান প্রদর্শনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বাবা-মায়েরা এসব হাদিস মেনে শিশুদের প্রতি স্নেহ ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে এবং শিশুদের মানসিক চাহিদা মেটাতে পারে।

এ ক্ষেত্রে সম্মান ও মর্যাদার অর্থ হলো- কথা ও কাজে সঠিক আচরণ করা যা পরস্পরের জন্য প্রশান্তির জন্ম দেয় এবং শিশুদের মধ্যে আত্মমর্যাদার অনুভূতিকে জোরদার করে। যেসব বাবা-মা চান তার সন্তান সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হোক তাদের উচিত সব সময় সন্তানদের সম্মানের বিষয়টি মনে রাখা। শিশুর প্রতি সম্মানের অর্থ হলো তাদের মধ্যে সঠিক ও প্রত্যাশিত ব্যক্তিত্ব গেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করা। যেসব শিশু ছোট বেলায় সম্মান ও প্রশংসা পায় তারা পরবর্তীতে যোগ্য মানুষ তথা বড় ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়। এ ধরণের শিশুরা বড় হয়েও খারাপ কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করে।

শিশু-কিশোরদের ব্যক্তিত্ব গঠনে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে সেগুলো হলো আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ। মানুষের ইচ্ছা শক্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও মানসিক সুস্থতার সঙ্গে একজন ব্যক্তির আত্মসম্মানবোধের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। শিশুরা যাতে তাদের সার্বিক শক্তি, সামর্থ্য ও প্রতিভা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে সেজন্য শিশুদের মধ্যে তাদের নিজেদের সম্পর্কে, পারিপাশ্বিকতা সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে, তাদেরকে ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী করে তুলতে হবে এবং অধ্যাবসায়ী হওয়ার মানসিকতা গড়তে হবে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শিশুদেরকে কোনো কারণে শাস্তির সম্মুখীন করা হলেও তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না যাতে তারা অপমানিত হয় এবং লজ্জাবোধ করে। শিশুদেরকে শারীরিক নির্যাতন করতে নিষেধ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা। কারণ তাদের মতে, এর ফলে শিশুর আত্মসম্মানবোধ নষ্ট হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুরা শাস্তির কারণে নয় বরং অপমানিত হওয়ার কারণে কান্না করে। ফলে তাদের সঙ্গে কখনোই এমন আচরণ করা যাবে না যাতে তারা অপমানবোধ করে। যেসব কারণে শিশুদের আচরণে সমস্যা দেখা দেয় তার একটি বড় কারণ হলো, শিশুর প্রতি বাবা-মায়ের স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্মানের অভাব। শিশুর ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত করতে শিশুদের স্নেহ করতে হবে এবং শিশুদেরকে অপমান-অপদস্থ করা থেকে বিরত রাখতে হবে।

শিশুরা যাতে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার না হয় সে বিষয়টি বাবা-মাকে প্রথম থেকেই খেয়াল রাখতে হবে। তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে হবে যাতে তারা সদাচরণ শেখে এবং স্বাধীনচেতা হয়।

ইমাম সাদেক (আ.) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, "আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে স্নেহ ও সম্মান করুন। ভালো আচরণ শেখান যাতে আল্লাহ ক্ষমা ও করুণা করেন।" ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যা শিশুর প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্মান করার শিক্ষা দেয়।

একবার রাসূলে খোদা (স.) নামাজের ইমামতি করতে মসজিদে এলেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট্ট নাতি হাসান (আ.)। তিনি শিশু হাসানকে পাশে বসিয়ে নামাজে দাঁড়ালেন। অন্যরাও রাসূলে খোদার পেছনে নামাজ শুরু করলেন। কিন্তু হঠাৎই রাসূলে খোদা সিজদায় গিয়ে আর উঠছেন না। হাদিসের বর্ণনাকারী সিজদা থেকে মাথা তুলে রাসূলের দিকে তাকালেন। তিনি দেখলেন, শিশু হাসান রাসূলের কাধে বসে আছে। নামাজ শেষে মুসল্লিরা বললেন, হে রাসূলে খোদা, এতো দীর্ঘ সিজদা দিতেতো আর কখনো দেখিনি। সিজদারত অবস্থায় কি আপনার ওপর কোনো ওহি নাজিল হয়েছে? রাসূল (স.) বললেন, না কোনো ওহি নাজিল হয় নি। সিজদায় যাওয়ার পর হাসান আমার কাঁধে উঠে বসে পড়েছিল। আমি তাড়াহুড়ো করতে চায় নি এবং শিশুটিকে জোরকরে নামিয়ে দিতে চাই নি। হাসান স্বেচ্ছায় কাঁধ থেকে নামা পর্যন্ত আমি ধৈর্য্য ধরেছি।

প্রিয় নাতির বিষয়ে মহানবীর এই আচরণ শিশুদের প্রতি সম্মানের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। তিনি সিজদাকে দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে শিশুর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখিয়েছেন। রাসূল (আ.)'র জীবনে এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে যেগুলো শিশুদের প্রতি এই মহামানবের স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্মানের পরিচায়ক।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ