আগস্ট ০৯, ২০১৯ ২০:৩৪ Asia/Dhaka

শিশুদের সঙ্গে মহানবী হজরত মোহাম্মাদ (স.)'র ব্যবহার ছিল স্নেহপূর্ণ, কোমল এবং বন্ধুসূলভ। নবীজির আচরণে শিশুদের সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট ছিল। ছোটদের চপলতায় তিনি কখনও অসন্তষ্ট কিংবা বিরক্ত হতেন না।

শিশুরা তাঁর কাছে এলে নিজেদের দুঃখ-কষ্ট ভুলে যেতো। নিরাপদ ও সম্মানিতবোধ করতো।  রাসূলে খোদা (স.) শিশুদের সম্মানে কখনো কখনো দেরিতে নামাজের সিজদা থেকে উঠেছেন আবার কখনোও দ্রুত নামাজ শেষ করেছেন। ইসলামি বর্ণনায় এসেছে, একবার মহানবী (স.) ঘরে বসে ছিলেন। এ সময় সেখানে শিশু হাসান ও হোসেনকে প্রবেশ করতে দেখলেন। তাদের দেখেই তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সামনে গিয়ে তাদেরকে স্বাগত জানালেন। এরপর হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং দুইজনকেই কোলে ও কাধে উঠালেন। কাধে উঠিয়ে হাটতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, তোমাদের ঘোড়া কতই না ভালো। তোমরাও ভালো ঘোড়সওয়ার। ছোটবেলায় তোমাদের বাবাও ভালো ঘোরসওয়ার ছিল।

এই ঘটনায় এটা স্পষ্ট যে, শিশু হাসান ও হোসেনকে দেখে মহানবী (স.) সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করেছেন। তিনি বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, তাদের জন্য অপেক্ষা করে, তাদেরকে কোলে ও কাধে উঠিয়ে সব মুসলমানকে শিশুর প্রতি আচরণের উত্তম পন্থা দেখিয়ে গেছেন। নিজের নাতি হওয়ার কারণে নয়, সব শিশুর সঙ্গেই মহানবী এ ধরণের সদাচরণ করতেন। শিশুদের দেখলে মহানবীই আগে সালাম দিতেন। কোনো শিশু তার সঙ্গে খেলতে বললে তিনি সহজে সেই আবদার ফিরিয়ে দিতেন না। রাসূলে খোদা যখন কোনো সফর থেকে ফিরতেন তখন তাঁকে স্বাগত জানাতে শিশুদের ভীড় লেগে যেতো। এ সময় নবীজি শিশুদেরকে আদর করে তাদের ধন্যবাদ দিতেন। কয়েক জনকে কোলে ও কাধে উঠাতেন। বাকি শিশুদের কোলে ও কাধে নিতে সাহাবিদেরকে বলতেন। এ কারণে শিশুরাও মহানবীকে খুব ভালোবাসতো। নিজের সন্তানদের পাশাপাশি অন্য শিশুদেরকে ভালোবাসা ও স্নেহ করা রাসূলের সুন্নাত।

স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়া শিশুদের অধিকার। কারণ সদাচরণ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশুদের সঙ্গে বড়দের আচরণ এমন হওয়া উচিত যে, বড়দের আচরণ শিশুদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করবে। শিশুদের সম্মানিত করার আরেকটি উপায় হলো, তাদের জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা, সুন্দর নামে ডাকা। সুন্দর নামে নরম সুরে শিশুদের ডাকলে তাদের আচরণে এর প্রভাব পড়ে। আহলে বাইতের ইমামরা বলেছেন, শিশুদের ডাকার সময় বলুন- হে আমার প্রিয় সন্তান। হাদিসে এসেছে, নবীকন্যা হজরত ফাতেমা (সা.আ.) তার সন্তানদেরকে যখন ডাকতেন তখন বলতেন- হে আমার চোখের আলো, হে আমার হৃদয়ের টুকরো।

অন্যদের সামনে শিশুদের প্রতি সদাচার করলে তারা সম্মানিতবোধ করে। সবার সামনে হ্যান্ডশেক করলে শিশুরা খুশি হয়। তারা বুঝতে পারে, ছোট বলে তাদেরকে অবহেলা করা হচ্ছে না। শিশুরা যখন কোনো কিছু প্রস্তাব দেয় অথবা কোনো কাজ করে দিতে চায় তখন সম্ভব হলে তা গ্রহণ করতে হবে। শিশুদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা মেনে চলতে হবে। এর ফলে তারাও নীতিবান ও প্রতিশ্রুতিশীল হয়ে উঠে। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মুমিনদের বৈশিষ্ট হলো, ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি মেনে চলা। কাজেই শিশুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অমান্য করার অর্থ হলো ধর্মীয় দায়িত্ব অমান্য করা। আমরা যখন সন্তানকে বলি যে, তোমাকে পার্কে নিয়ে যাব এবং এরপর তাকে সত্যিই পার্কে নিয়ে যাই তখন সে প্রশান্তি অনুভব করে ও সম্মানিতবোধ করে। শিশু বুঝতে পারে তার অভিভাবক তাকে গুরুত্ব দিয়েছে, অভিভাবকের কাছে তার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু যখন কথা দিয়ে কথা রাখা হয় না তখন শিশু ভাবে তাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে সে মনোকষ্টে ভোগে। কথা দিয়ে কথা না রাখলে শিশুর আরেকটি বড় ক্ষতি হয় আর তাহলো শিশুও মিথ্যা বলতে শেখে।

শিশুর প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের আরেকটি উপায় হলো, শিশুদের ভুল ক্ষমা করে দেওয়া। তবে মারাত্মক কোনো ভুল করলে সেজন্য শিশুকে বোঝাতে হবে এবং তা যে ক্ষতিকর তা যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে তুলে ধরতে হবে। এরপর ক্ষমা করতে হবে। শিশুদের প্রতি সম্মান দেখালে তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। এর ফলে সুপ্ত মেধা, সুপ্ত ক্ষমতা ও সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় এবং এর ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সঠিক উপায়ে দায়িত্ব পালন করতে শেখে। মনে রাখতে হবে শিশুরা প্রথম শেখে তার পরিবার থেকে। বাবা-মা বা পরিবারের বড়দের যদি তারা উগ্র-উদ্ধত আচরণ করতে দেখে, তাহলে তারাও সে রকম আচরণ করা শেখে। কারণ এর একটা প্রভাব তাদের মধ্যে পড়ে। বড় হয়ে তারাও উগ্র মেজাজের হতে পারে। কারণ শিশুকাল থেকেই শিশুর ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে থাকে।

পরিবারে সদস্যদের স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীদের আচরণও শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলে। শিক্ষকরা আদর, স্নেহ ও জ্ঞান দিয়ে তাদের নীতিগত আদর্শ গড়ে দিতে পারেন, যা পরবর্তী জীবনে তাদের কল্যাণকর ও নীতিসম্পন্ন কাজ করতে শিক্ষা দেবে। সত্যনিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা, সংযত আচরণ, উদারতা এগুলো মানুষের ব্যক্তিত্বে থাকা খুবই জরুরি। এ কারণে সঠিক ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলেতে শিশুদের সহযোগিতা করাটাও শিশু অধিকার রক্ষার শামিল। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ