জুন ১৫, ২০১৯ ১৭:৩৩ Asia/Dhaka

শিশুরা হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, তারা নানা সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত। অনেক সমাজেই এখনও শিশুদের ওপর কঠিন কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হয়।

এছাড়া শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের ঘটনাও একেবারে কম ঘটে না। শিশুদের নানা অধিকারের মধ্যে একটি হচ্ছে, কঠিন কাজগুলো তারা করবে না। কারণ এ ধরণের কাজ তাদের জন্য ক্ষতিকর।

কাজ হচ্ছে মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনযাপনের জন্য কম-বেশি কাজ সবাইকেই করতে হয়। এ কারণে শিশুদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকেও কাজের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে, প্রশিক্ষণ  দিতে হবে।

আসলে শিশুশ্রম ও শিশুর কাজ এক নয়। যে কাজ শিশুর শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে,সেটাই শিশুশ্রম। কিন্তু শিশু তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনে কিছু কাজ করতেই পারে। কারণ শিশুকে কাজ শেখার সুযোগ দিতে হবে, এটিও তার অধিকারেরই অংশ। স্বাধীনভাবে বাঁচতে এবং সমাজে সফল মানুষ হতে হলে শিশু-কিশোরদেরকেও নানা কাজে পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে শিশুদেরকে এমন কোনো কঠিন কাজে জড়ানো যাবে না, যা তার শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর। শিশু অধিকার সনদেও শিশুকে কঠিন কাজে নিয়োগ করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপরও অনেক দেশেই শিশুদেরকে কঠিন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখন ব্যাপক সংখ্যায় শিশু শ্রমিক রয়েছে। ‘শিশু শ্রমিক বলতে সাধারণত সেই সব শিশুকে বুঝায় যারা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা বা আইএলও বলছে, ১৪ বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েরা যখন বাধ্যতামূলকভাবে বা স্বেচ্ছায় নিজের ও পরিবারের দায়িত্ব পালনের জন্য আয়-উপার্জনমূলক কাজে নিয়োজিত থাকে তখন তাকে শিশু শ্রমিক বলা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোর শিশুরা গৃহকমী, পরিবহনের হেলপার,খোলা বাজার এলাকার কুলি, হোটেল -রেস্টুরেন্ট বয়,খেলনা ও চকলেট বিক্রেতা, দৈনিক পত্রিকা, ফুল ও সস্তা খাবার বিক্রেতা, শহরের যানজটে থেমে যাওয়া ধনীদের গাড়ীর ক্লিনার হিসেবে কাজ করে। এ ধরণের কাজের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু শ্রমিকরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং শিশুকাল উপভোগ করতে পারে না এর ফলে শিশু শ্রমিকদের মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক সুস্থতা বিপন্ন হয়।

বিশ্বের অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠানেই শিশুশ্রমকে এক ধরণের ঔপনিবেশিক তৎপরতা হিসেবে গণ্য করা হয় তবে অনেক দেশেই শিশুশ্রমের বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন না থাকায় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পরিকল্পনা গ্রহণ না করার কারণে শিশুরা অনুপযুক্ত স্থান ও কর্মক্ষেত্রে অতি সামান্য অর্থের বিনিময়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও'র পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী ২৫ কোটি শিশু শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ১২ কোটি শিশু ফুল টাইম কাজ করে। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে ৪১ শতাংশ উত্তর আফ্রিকা এবং ২১ শতাংশ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোত বাস করে।

শিশু শ্রমিকদের জন্য মানসম্পন্ন খাদ্য ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এছাড়া তাদেরকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করতে হয় পেশাদার অপরাধীরা এসব শিশুকে সহজেই নানা অপরাধে জড়িয়ে ফেলতে পারে। পেশাদার অপরাধীরা শিশুদেরকে চুরি, মাদক দ্রব্য বিতরণ ও  পতিতাবৃত্তির মতো ঘৃণ্য কাজে নিযুক্ত করে, অর্থের বিনিময়ে শিশুদের পাচারের ঘটনাও ঘটে। এসব শিশু অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে। হাত বদল হতে হতে তারা এক ধরণের পণ্যে পরিণত হয়অনেক শিশু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হওয়ার কারণে সারা জীবন তাদেরকে শ্রম ও বঞ্চনার মধ্যেই কাঁটাতে হয়অনুপযুক্ত কাজে নিযুক্ত হওয়ায় অনেক শিশু অকালে প্রাণ হারাচ্ছে অথবা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে।

শিশু শ্রমিকরা সাধারণত মায়া-মমতা ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা রুক্ষ ও অসদাচরণের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এ কারণে তাদের মধ্যে নিজের অজান্তেই চাপা ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দেয় এবং বড় হওয়ার পর তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুরা নানা কারণে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে দারিদ্র, বাস্তুচ্যুতি, নিরক্ষরতা ও মাতৃ-পিতৃহীনতা অন্যতম। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের কাজে যোগ দেওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বাবা-মা ও অভিভাবকরা তাদের শিশুদেরকে কঠিন কাজে দিতে বাধ্য হন। অনেক অভিভাবক ধোঁকা খান। যারা কাজে নেন তাদের কেউ কেউ আবার বাবা-মা বা অভিভাবকের সরলতাকে অপব্যবহার করে শিশুকে নিয়ে কঠিন কাজে নিয়োগ করেন।

আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার কনভেনশনের ৩২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যেসব কাজ শিশুর শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সেসব কাজ শিশুকে দিয়ে করানো যাবে না। শিশুর আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয় এমন অনেক পরিবারও অজ্ঞতা ও হতাশার কারণে তাদের শিশুদেরকে কাজে দিচ্ছেন। এসব পরিবারকে সচেতন করে তুলতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে শিশুকে কাজে দেওয়ার মাধ্যমে তারা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তাদের আদরের সন্তান চীরতরে সমাজ থেকে পিছিয়ে পড়ছে। আর একান্তই যদি কোনো পরিবারকে শিশুর আয়ের ওপর চলতেই হয়,তাহলে সেই পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নিতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ