জুন ১৮, ২০১৯ ১৬:১৩ Asia/Dhaka

আমরা শিশুশ্রম নিয়ে কথা বলছিলাম। বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনও শিশুশ্রম একটা বড় সামাজিক ব্যাধি হিসেবে রয়ে গেছে। আর এই শিশুশ্রম হচ্ছে শিশু নির্যাতনের একটি বড় কারণ।

বিভিন্ন সমাজে শিক্ষার হার বাড়ার পরও শিশু নির্যাতনের প্রবণতা প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না বরং ক্রমেই বাড়ছে। শিশুশ্রমিক বা শ্রমজীবী শিশুরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। এর মধ্যে গৃহকর্মী শিশুদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। এই গৃহকর্মীদের বেশিরভাগই কন্যাশিশু। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে গৃহকর্ত্রী, গৃহকর্তা এমনকি তাদের সন্তানদের মাধ্যমে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

গৃহকর্মী শিশুদেরকে অনেক ক্ষেত্রেই বন্দীর মতো জীবনযাপন করতে হয়। কেউ কেউ আবার নিজের পরিবার থেকে অনেক দূরে গিয়ে কাজ করে। তাদের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, সাপ্তাহিক ছুটি নেই। তারা গৃহকত্রী বা গৃহমালিকের বাড়ীতেই বসবাস করে এবং রাত-দিন যখনই প্রয়োজন হয় তখনি তাদেরকে কাজে ব্যস্ত রাখা হয়, গভীর ঘুম থেকে ডেকে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। গৃহকর্মী শিশুর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার প্রতি সাধারণত মনোযোগ দেন না অধিকাংশ গৃহকত্রী বা গৃহকর্তা। এ ক্ষেত্রে গৃহকত্রী ও গৃহকর্তা একসঙ্গে দু'টি অপরাধ করে যাচ্ছেন। এর একটি হলো, আইন অমান্য করে শিশুকে কাজে নিয়োগ দেওয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো তাদের ওপর অনুপযুক্ত কাজ চাপিয়ে দেওয়া। 

বাংলাদেশ ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে শিশু গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, হত্যা, কিংবা আত্মহত্যার ঘটনার মতো দুঃসংবাদ। পত্রিকায় দেখা যায়, অনেক শিক্ষিত লোকজনও গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। শিশু গৃহকর্মীরাও যে মানুষ তা অনেকেই ভুলে যান। তারা ভুলে যান, যে সময় স্কুলে যাওয়ার কথা, খেলার মাঠে থাকার কথা সে সময়টায় এই শিশুটি তাদের সেবা করছে।  গরীব মানুষের ঘরে জন্ম নেওয়ার কারণেই তাকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, সে যে অভাবে পড়েছে তার পেছনে তার নিজের কোনো ভূমিকা নেই। অভাবের তাড়নায় এখনও বাংলাদেশ ও ভারতে লাখ লাখ শিশু গৃহকর্মী কাজ করছে।

দুঃখজনক বিষয় হলো, অনেক গৃহকর্তা নিজের বাসায় ফ্রিজ, টেলিভিশন, অন্যান্য আসবাব রাখার জায়গা ঠিক করলেও তাদের বাসায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে মানুষটি কাজ করছে তার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করেন না। অনেক ক্ষেত্রেই শিশু গৃহকর্মীদের কোনো থাকার জায়গা থাকে না। দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় অথবা মেঝেতে তাদেরকে থাকতে দেওয়া হয়, এর ফলে তার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকে না। অরক্ষিত এই অবস্থার কারণে শিশু গৃহকর্মীদের সম্ভ্রম ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। অনেকেই মশার কামড় থেকে রক্ষার জন্য তাদের গৃহকর্মীকে মশারি পর্যন্ত দেয় না। গৃহকর্মীকে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ফ্যান ব্যবহারের অনুমতি দেয় না অনেকে। বিদ্যুৎ বিল উঠবে বলে গৃহকর্মীকে এ ধরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়।

শুধু তাই নয়, অনেক সময় যানবাহনে উঠলে আরেকটি করুণ চিত্র চোখে পড়ে আর তাহলো গৃহকত্রী ও গৃহকর্তা তার সন্তানদের নিয়ে সিটে বসে আছে, আর তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট শিশু গৃহকর্মী। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শিশুটিকে কখনো কখনো দাঁড়িয়ে ঘুমাতে দেখা যায়। এছাড়া সামান্য ভুলত্রুটি ও কাজে অমনোযোগিতার কারণে গৃহকর্মীদের মারধর ও অপমান করার ঘটনাও অহরহই ঘটে।  এটা ঠিক যে, শিশুশ্রমের অনেক কারণ আছে। কিন্তু এর পেছনে সমাজের মানুষের মানসিকতাও দায়ী। সমাজের অনেকেই এ বিষয়গুলোকে এতোটাই সহজ ভাবে নেন যে, তারা অকপটে বলে ফেলেন- ওরাতো গরিব। ওদের সমস্যা আছে। তাই ওরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করবেই।

কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবেছি, শিশু গৃহকর্মীর মতো আমারও যদি গরিব পরিবারে জন্ম হতো তাহলেতো আজ আমাকেও অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হতো। যাদের শিশু সন্তান রয়েছে তারা কি একবারও ভেবেছি কোনো কারণে যদি আমার শিশু সন্তানকে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তাহলে কেমন হবে। আমার শিশু সন্তানকে দিয়ে যদি কেউ এভাবে কাজ করায় তাহলে কি আমি তা মেনে নিতে পারব। সমাজে আরেক ধরণের মানুষও আছে যারা বাইরে মানুষের সামনে অনেকে অনেক বড় কথা বলে কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায় তিনি নিজেই শিশুকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তার বেতন, ছুটি, কর্মঘণ্টা—কোনো ক্ষেত্রেই তিনি ছাড় দিচ্ছেন না। সপ্তাহের সাত দিনই তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।

পবিত্র ইসলাম ধর্ম এ ধরণের আচরণকে কখনোই সমর্থন করে না। গৃহকর্মীদের সঙ্গে আচরণের ধরণ প্রসঙ্গে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের গৃহকর্মীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন কর। কেননা, তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার দুর্ভাগ্যের কারণ। রাসূলে খোদার সাহাবি আনাস বিন মালিক বলেছেন, তিনি ১০ বছর রাসুল (স.)-এর সেবা করেছেন। কিন্তু মহানবী একবারের জন্য তাকে কটু কথা বলেন নি।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ