জুন ২৭, ২০১৯ ১৮:৩৫ Asia/Dhaka

সুরা ইনসানের শানে নুজুল ও এই সুরার প্রথম কয়েকটি আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে গত পর্বে।

পবিত্র কুরআন মানুষকে সুপথ দেখায়। অন্য কথায় মানুষকে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে দেয়াই কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য। সুরা ইনসানে এ লক্ষ্যেই মানুষের জন্য আদর্শ ও যোগ্য নেতা বা পথ-প্রদর্শকদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে তারা কোন্ ধরনের সৎ কাজ করায় এমন নেতৃত্বের সম্মান অর্জন করেছেন। রোজা রাখা সত্ত্বেও তীব্র ক্ষুধা তথা খাবারের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও হযরত আলী ও হযরত ফাতিমা এবং এমনকি শিশু ইমাম হাসান ও হুসাইন কিছু না খেয়ে ইফতারের জন্য নির্ধারিত খাদ্য দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে পর পর তিন দিন দান করায় সুরা ইনসানের অর্ধেকেরও বেশি আয়াতে এই মহামানবদের অনন্য ত্যাগের অসাধারণ প্রশংসা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন:

(৫) নিশ্চয়ই পুণ্যকর্মশীল বান্দারা এমন শরাবের পাত্র হতে পান করবে যা কাফূর মিশ্রিত। (৬) এমন একটি প্রস্রবণ যা হতে আল্লাহর পুণ্যকর্মশীল বান্দারা পান করবে এবং তারা যেখানে ইচ্ছা তা প্রবাহিত করবে। (৭) তারা তাদের মানত পূর্ণ করে এবং সে দিনের ভয় করে যেদিনের অকল্যাণ হবে বিস্তৃত। (৮) আর তারা তাঁর তথা আল্লাহর ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত,পিতৃহীন ও বন্দিকে আহার্য দান করে। (৯) এবং বলে,‘কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার করাই ;আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা চাই না।–

পবিত্র কুরআনের সুরা ইনসানের এই বাক্যগুলো মহানবীর (সা) আহলে বাইতের অসাধারণ ত্যাগ ও কুরবানির বিষয় তুলে ধরছে। চরম ক্ষুধার সময়ও নিজের কষ্টার্জিত এবং ঘরের সর্বশেষ খাবারটুকু অন্য অভাবগ্রস্ত, ইয়াতিম ও বন্দিকে দিয়ে তারা সর্বোত্তম সৎকাজের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন। এমনকি অভাবগ্রস্ত, ইয়াতিম ও বন্দি যদি অমুসলমানও হয় তবুও তাদেরকে খাদ্য দেয়া খুবই বড় ধরনের সৎকর্ম।

বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইত প্রকৃত খোদাপ্রেমিকদের ও আদর্শ মু'মিনদের পথ-নির্দেশক বা দিশারী। তাই  তাঁদের কাজগুলো ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে একনিষ্ঠ বা পুরোপুরি খালেস ও পবিত্র। তাঁরা সাহায্য দেয়ার সময় বলেন:

‘কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদের আহার করাই; আমরা তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা চাই না। (১০) নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে মুখমণ্ডল বিকৃতকারী কঠিন দিনের আশংকা করি;-

হ্যাঁ,এ রকম সৎকর্মশীল নেতাদের জন্যই মহান আল্লাহ রেখেছেন নানা পুরস্কার যার বর্ণনা দেয়া হয়েছে সুরা ইনসানের ১১ থেকে ২২ নম্বর আয়াতে। যেমন: এ সুরার ১১ ও ১২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:   (১১) পরিণামে আল্লাহ তাদের সেদিনের মন্দ বা কাঠিন্য হতে রক্ষা করবেন এবং তাদের উৎফুল্লতা ও আনন্দের সাথে গ্রহণ করবেন। (১২) আর তাদের ধৈর্যশীলতার প্রতিদানস্বরূপ তাদের প্রদান করবেন জান্নাত ও রেশমী বস্ত্র। ....

সুরা ইনসানের একাংশে বিশ্বনবী (সা) ও তার পবিত্র আহলে বাইতকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাঁদেরকে ধৈর্যের দাওয়াত দেয়া হয়েছে। এরপর চারটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেয়া হয়েছে :  

এই চারটি নির্দেশ হচ্ছে: ধর্ম প্রচার ও মহান আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে ধৈর্যশীল হওয়া,পাপী ও কাফিরদের অনুসরণ না করা, সকাল-সন্ধ্যায় মহান প্রতিপালককে স্মরণ করা এবং রাতের একটা অংশে আল্লাহর দরবারে সিজদা দেয়া ও রাতগুলোতে আল্লাহর পবিত্রতার প্রশংসা করা।

যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে এসব নির্দেশনা মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের উদ্দেশে উচ্চারিত হয়েছে কিন্তু বাস্তবে এসব নির্দেশনা সব মানুষের জন্যই আদর্শ দিক-নির্দেশনা। মানব সমাজের আধ্যাত্মিক ও মানবীয় নেতৃত্বের জন্য এইসব নির্দেশনা অপরিহার্য।

ইসলামের যেসব লক্ষ্য ও কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান ও আস্থা থাকতে হবে। আর এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ধৈর্য ও দৃঢ়তা দরকার। সমস্যার ব্যাপকতায় ভীত-সন্ত্রস্ত হলে চলবে না। শয়তান ও ইসলামের শত্রুদের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায়ও সর্বশক্তি নিয়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে। কারণ শয়তান ও ইসলামের শত্রুরা ইসলামী নেতৃবৃন্দকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে নানা ধরনের ধোঁকা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যাতে ইসলামের মিশন অকার্যকর ও অক্ষম হয়ে পড়ে। তাই ইসলামী নেতৃত্বকে হতে হবে লোভ ও প্রলোভন এবং হুমকি ও ভয়-ভীতির মোকাবেলায় পাহাড়ের মত অবিচল প্রতিরোধকামী।

ঐশী নেতৃত্বকে আত্মিক-শক্তি ও ইচ্ছাশক্তি প্রবল করার জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় মহান আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকতে হবে এবং কপালকে রাখতে হবে মহান আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত। সকাল ও সন্ধ্যায় দোয়া আর ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য নেয়া ও আল্লাহর বিধি-বিধানগুলো মেনে চলা সম্ভব হলে বিজয় অনিবার্য। আবার কখনও কখনও বিপদ-আপদ কিংবা দূর্যোগ ও পরাজয় দেখা দিলে এসব ইবাদত, দোয়া ও দিক-নির্দেশনার মাধ্যমে সেসবের ক্ষতি পুশিয়ে নেয়া যায়। মহানবী (সা) ও তাঁর আহলে বাইতের জীবনের কর্মসূচিগুলো এবং তাদের দাওয়াত ও মিশন হচ্ছে ধর্ম আর সত্যের পথে এগিয়ে চলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য এক প্রজ্জ্বোল আদর্শ।  

সুরা ইনসানের ২৮ নম্বর আয়াতে আবারও মানুষের সৃষ্টির বিষয়ে বক্তব্য এসেছে। মহান আল্লাহ বলছেন:

আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং মজবুত করেছি তাদের গঠন বা পারস্পরিক বন্ধন শক্তি ও ক্ষমতা দান করে। আমি যখন ইচ্ছা করব,তখন তাদের পরিবর্তে তাদের অনুরূপ লোক আনব। - এ আয়াতে কাফিরদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হচ্ছে,তারা যেন শক্তির বিষয়ে দম্ভ না করে। কারণ,মহান আল্লাহই তাদের সৃষ্টি করেছেন ও তাদের ক্ষমতা দিয়েছেন। আল্লাহ যখনই চাইবেন তখনই তাদের ধ্বংস করে দিতে পারেন এবং অন্য গোষ্ঠীকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন।

মহান আল্লাহ অশেষ ধনী। মানুষের ঈমান আর আনুগত্যের মুখাপেক্ষী তিনি নন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার জন্য ও সুপথ বেছে নেয়ার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জোর দেয়ার বিষয়টি মানুষের জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহ মাত্র। আসলে পবিত্র কুরআনের সুরা ইনসানের এই বাক্যগুলো তাদের জন্যই কিছু স্মরণীকা ও সঠিক পথের দিক-দর্শন যারা সঠিক পথের দিশা চান ও আল্লাহর পথে চলতে চান।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/  ২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।