নভেম্বর ১২, ২০১৯ ১৬:৪৯ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসরে আমরা সময়-ব্যবস্থাপনা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রনয়ণসহ মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।

আমরা বলেছি একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। এর ফলে মানুষ সহজে সফল হতে পারে। আমরা এও বলেছি প্রতিটি মানুষেরই উচিত কিছু বিষয়ের প্রতি গভীর নজর দেওয়া। এর অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা-প্রশিক্ষণ, নীতি-নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা, সুস্থতা, উত্তম খাদ্য, ব্যায়ামসহ নানা ধরনের খেলাধুলা এবং বিনোদন। ‌এসবের পাশাপাশি নিজের প্রতিভা অনুযায়ী কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জন এবং একটি উপযুক্ত পেশা ও আয়ের ব্যবস্থা করাও প্রতিটি মানুষের জন্য জরুরি।

তবে পাশাপাশি এ কথাও মনে রাখতে রাখতে হবে যে, একজন মানুষ যখন শুধু একটি বিষয়ের প্রতি মাত্রাতিরিক্তভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে বা মনোনিবেশ করে তখন তার কাছে জীবনের অন্যান্য দিক বা ক্ষেত্র যথোপযুক্ত গুরুত্ব পায় না এবং জীবন একপেশে হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ কারণে এ ধরনের মানুষ ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের অধিকারী হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে পারে এবং প্রকৃত আনন্দ ও তৃপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে পারে। প্রতিটি মানুষের উচিত তার দায়িত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত হওয়া। কোন দায়িত্বটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি তা জেনে নেয়াও ব্যক্তির দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সূরা আয-যারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, "আমার ইবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।" পবিত্র ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা। তবে এই ইবাদতের অর্থ জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঘরের এক কোনে বসে থেকে শুধু আল্লাহর প্রার্থনা করা নয় বরং এর অর্থ হচ্ছে একজন মানুষ তার ব্যক্তিগত ও সমাজ জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা চালাবে। সব সময় তার সব কাজের লক্ষ্য হবে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন। এর ফলে তার প্রতিটি কাজ হয়ে উঠবে ইবাদত।

আল্লাহর ইবাদতই যার লক্ষ্য সে ধর্মের দৃষ্টিতে বর্জনীয় কাজগুলো থেকে পুরোপুরি দূরে থাকবে। সে হারাম বর্জন করবে, অন্যের অধিকার লংঘন থেকে বিরত থাকবে, মিথ্যা বলবে না, খারাপ আচার-ব্যবহার ত্যাগ করবে এবং স্বার্থপরতা, হিংসা ও অহংকার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অন্য মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে, অন্যের বিপদ ও সমস্যায় এগিয়ে আসবে, প্রতিবেশীদের অধিকার রক্ষা করবে, দারিদ্র দূর করার চেষ্টা করবে এবং দান-খয়রাত করবে।

ইসলাম ধর্ম সবাইকে একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার পাশাপাশি অন্য মানুষ এবং সমাজ তথা ইসলামী সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে বলেছে। একজন প্রকৃত মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে সে তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে এবং নিজের দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সেগুলো পালন করবে।

মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিগত দায়িত্বের মধ্যে একটি হচ্ছে নিজের সুস্থতা রক্ষা করা। জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করতে এর কোনো বিকল্প নেই। সুস্থতা হচ্ছে মানুষের জন্য আল্লাহর একটি বড় নেয়ামত। কিন্তু আমরা সাধারণতঃ এ বিষয়টির প্রতি খুব একটা গুরুত্ব দেই না এবং এই বিশাল নেয়ামতের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না। আমরা যখন সুস্থ থাকি তখন এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারি না। কিন্তু যখন আমরা অসুস্থ হই তখন বুঝতে শুরু করি সুস্থতার গুরুত্ব কতখানি। এর বাইরে সাধারণতঃ আমরা যখন কোনো আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতজনকে দেখতে হাসপাতালে যাই এবং স্বচক্ষে তার কষ্ট ও সেখানকার কঠিন পরিস্থিতি দেখি তখন সুস্থতার গুরুত্ব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হই। প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসাবিদ হিপোক্রেটিসের ভাষায় সুস্থতা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের মুকুট এবং অসুস্থ হলেই কেবল একজন মানুষ এই মুকুটকে দেখতে পায়। আসলে সুস্থতাকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ বা পুঁজি বললে ভুল হবে না। এ কারণে সুস্থতার গুরুত্ব উপলব্ধি করার পরই কেবল একজন মানুষ আল্লাহর কাছে এজন্য সঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। নেয়ামতের গুরুত্ব না বুঝলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রেও ঘাটতি থেকে যেতে পারে।   

সুস্থতা রক্ষা করা প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব। পবিত্র ইসলাম ধর্মে নিজের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্ম নিজের শরীর ও মনের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে মানুষকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তার সবই হচ্ছে আল্লাহর আমানত। ইচ্ছাকৃতভাবে আমানত নষ্ট করলে এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। হাদিসে এসেছে কিয়ামতের দিন বান্দাকে নেয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো সে আল্লাহর দেয়া সুস্থতা রক্ষা করেছে কি না। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে গনীমত মনে করুন। সুস্থতা রক্ষায় ভালো খাবার গ্রহণ এবং ব্যায়াম বা শরীরচর্চার পাশাপাশি আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আর তাহলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

ইসলামে ব্যক্তির পরিচ্ছন্নতা, ঘরের পরিচ্ছন্নতা, পরিপার্শ্বের পরিচ্ছন্নতা, রাস্তাঘাটের পরিচ্ছন্নতা রক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর মূল কারণ, আমরা যদি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি, তাহলে আমরা সুস্থ থাকব, আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। বেশিরভাগ রোগ-ব্যাধি শরীরে দানা বাঁধে অপরিচ্ছন্নতার কারণে। অনেকে আছেন নিয়মিত গোসল করেন না, ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করেন না। এর ফলে শরীরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধরণের ছোট ছোট রোগ দেখা দেয়। আর এই ছোট ছোট রোগই একদিন বড় আকার ধারণ করে।  

প্রিয়  বন্ধুরা, অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উত্তম। সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে সহজেই রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে থাকা যায়। যেমনটি এর আগেও বলেছি জীবনের একটি বড় সম্পদ হচ্ছে সুস্থতা। সময় থাকতে এর যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।