ডিসেম্বর ০৩, ২০১৯ ১৯:১৯ Asia/Dhaka

জীবনকে আরও সুন্দর করতে অনেক সময়ই দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের জীবনে সামান্য পরিবর্তনেই বড় ধরণের সাফল্য আসে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিগত পরিবর্তনে জীবনের মোড় ঘুরে যেতে পারে।

আমরা জীবনকে কীভাবে দেখছি, সাফল্য-ব্যর্থতাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করছি তা জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি ব্যর্থতা, হতাশা বা অন্য কোনো কারণে নিজের ভেতরে এই ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলি যে, জীবন যেভাবে চলছে আমৃত্যু সেভাবেই চলবে, তাহলে বলতে হবে আমরা জীবনে পরাজয় মেনে নিয়েছি।

মানব জীবনে হতাশা হলো এমন একটি নেতিবাচক উপাদান যা মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ বন্ধ করে দেয়। এ কারণে ইসলাম ধর্ম হতাশাকে পাপ হিসেবে গণ্য করে। জীবনকে সুন্দরভাবে যাপনের জন্য প্রত্যেক মানুষকে আশাবাদী হতে হবে, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। নিজের যা কিছু আছে তা নিয়ে জীবন পরিচালনার সাহস রাখতে হবে। সর্বোপরি হতাশা পরিহার করতে হবে।  কারণ মানুষের অনেক অসুস্থতার মূলেই রয়েছে হতাশা। হতাশা মানুষকে দিন দিন দুর্বল ও অক্ষম করে দেয়। আমরা এর আগের আসরে জীবনকে সুন্দর করার ক্ষেত্রে সুস্থতার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছি।

সুষম খাবার বলতে কী বোঝানো হয়, প্রথমেই আমরা সে বিষয়ে আলোচনা করব। সুস্থ থাকার প্রধান নিয়ামক সুষম খাবার। আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খাই তাতে যদি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন বা আমিষ, ফ্যাট বা চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ লবণ পরিমাণমতো থাকে তাহলে বলতে পারব যে, আমরা সুষম খাবার গ্রহণ করেছি। মানুষের দেহ সাধারণত তার প্রয়োজনীয় ক্যালরি বা শক্তির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শর্করা জাতীয় পদার্থ থেকে, ১০ থেকে ২০ শতাংশ আমিষ জাতীয় পদার্থ থেকে এবং ২০ থেকে ৩০ শতাংশ চর্বি জাতীয় পদার্থ থেকে গ্রহণ করে থাকে। খাবার শুধু সুষম হলেই চলবে না, খেতে হবে সময়মতো। আমরা সাধারণত দিনে তিনবার-সকাল, দুপুর ও রাতে খাবার খাই। তিন বেলা খাবার খেতে হবে পরিমাণ মতো। প্রতিদিনের সকালের খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা রাত ঘুমিয়ে থাকার পর সকালে পাকস্থলী খালি থাকে। এ কারণে ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে হবে। বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকা যাবে না।

সবার খাদ্যাভ্যাস এক রকম নয়। সকালে ভাত খান অনেকে। এতে শর্করার প্রয়োজন পূরণ হয়। এছাড়া সকালে রুটি, পরোটা, খিচুড়ি, পাউরুটি কিংবা মুড়ি খাওয়া যেতে পারে। আমিষের জন্য সঙ্গে ডিম, ডাল, এক থেকে দুই টুকরা মাংস ও সবজি খেতে হবে। পুষ্টিবিদদের মতে, সকালের খাবার ৮টার মধ্যে খেয়ে নিলে দুপুরের খাবার ২টার মধ্যে খেয়ে নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। দুপুরে এক কাপ ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ অথবা মাংস ও সবজি খেতে হবে। এতেই শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। রাতে অনেকের মধ্যে দেরিতে খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এটা ঠিক নয়। রাত ৮টার মধ্যে রাতের খাবার খেতে হবে। রাতের খাবারে এক কাপ ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে ডাল, ডিম কিংবা এক থেকে দুই টুকরা মাছ অথবা মাংস ও সবজি খেতে হবে। অনেকেই মাছ কিংবা মাংস খেতে চান না। এই অভ্যাস থেকে সরে আসতে হবে। দিনের পর দিন মাছ-মাংস থেকে দূরে থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। শরীরে শক্তি কমতে শুরু করে। এ জন্য নিয়মিত প্রাণিজ প্রোটিন বা আমিষ খেতে হবে।  

মনে রাখতে হবে আমাদের শরীরের সিংহ ভাগই পানি। শরীরের জন্য পানি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সারা দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা প্রয়োজন। এর বেশি পানি পান করলে অবশ্য তা শরীরের কোনো উপকারে আসে না। গরমের দিনে শরীর থেকে পানি বেশি বের হয়ে যায়। তাই এ সময় সারা দিনে তিন লিটার পানি পান করলেই প্রয়োজন মিটে যায়। অনেকের মিষ্টি বা কোমল পানীয় খাওয়ার অভ্যাস আছে। এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। চিকিৎসকদের মতে, কোমল পানীয় হজমে বাধা সৃষ্টি করে এবং শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। অনেকের ধারণা গুরুপাক খাবার খেলে কোমল পানীয় পান করতে হবে, কারণ তাতে হজমে সুবিধা হয়। এটি ভুল ধারণা। গুরুপাক খাবার খেলে হালকা গরম পানিতে একটি লেবু চিপে মধু মিশিয়ে পান করুন, হজমে সহায়ক হবে। কোমল পানীয় মোটেও হজমে সহায়ক নয়।

আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে, শুধু তিনবেলা খাবার খেলেই চলবে না। এর ফাঁকে মধ্য সকালে অর্থাৎ সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ও বিকেলে হালকা নাশতা করা শরীরের জন্য জরুরি। চিকিত্সা বিজ্ঞানের মতে প্রতি তিন ঘণ্টা পরপর কিছু খেয়ে নেওয়া ভালো। কারণ খাবার খাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে হজম হয়ে যায়। এরপর পাকস্থলী খালি হয়ে যায় এবং গ্যাস জমতে শুরু করে। এ জন্য মধ্য সকাল ও বিকেলের নাশতা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এছাড়া প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা তৈরির সময় ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ ও খাদ্যাভ্যাসকে গুরুত্ব দিতে হবে।

আমরা সাধারণত খাদ্য নির্বাচনের সময় শরীরের প্রকৃত প্রয়োজনীয়তার চেয়ে  স্বাদ, রুচি ও পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এর ফলে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য, সুস্থতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে অনেক সময় অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আমাদেরকে খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের পছন্দের চেয়ে খাদ্যগুনের দিকে নজর দিতে হবে এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।