মে ২৮, ২০২০ ১৮:৩৭ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম গোলে গভজাভন নিয়ে। ইংরেজিতে যার দুটি নাম পাওয়া যায় - একটি ইসিয়াম অপরটি বোরেজ। এই ফুল নিয়ে আলোচনার সূত্র ধরে আমরা কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন নিয়েও কথা বলেছি।

যেসব দেশে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রাধান্য রয়েছে কিংবা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু নেই সেসব দেশে ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা পরিভাষার পরিবর্তে কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন বা সম্পূরক ও বিকল্প ওষুধ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী এখন জনগণের মাঝে এই কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন সংক্ষেপে সিএএম ব্যবহারের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে। সিএএম চিকিৎসার বেশ কিছু শাখা রয়েছে। যেমন হারবাল মেডিসিন, মেসেজ, আকুপাংচার, কাইরোপ্রাকটিক, ইয়োগা, আয়ুর্বেদ ইত্যাদি। কমপ্লিমেন্টারি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিনের এসব শাখা আঞ্চলিকভাবে মানে স্থানীয় জনগণ ও জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।

প্রাচীন সভ্য বিশ্বে চীন, মিশর, গ্রিস এবং ইরানের মতো ভূখণ্ডে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এগুলোকেই ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা পদ্ধতি বলা হয়। ইরানে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা ফার্সি ভাষায় 'তিব্বে সুন্নাতি' নামে পরিচিত। বিখ্যাত কিছু মনীষী এ ধরনের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখে গেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছে জোরজানি, রাজি, আবু রেয়হান বিরুনি এবং ইবনে সিনার মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ববর্গ। এসব মনীষীর অবদানে ইরানের চিকিৎসা ব্যবস্থার ইতিহাস বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। মেসেজের মাধ্যমে চিকিৎসা, কাপিং, ড্রাই কাপিং, লিস থেরাপি, ফাস্ড্ এবং হারবাল চিকিৎসা ইত্যাদি ইরানের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। ইরানে হাজার হাজার রকমের ওষুধি উদ্ভিদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েক শ একান্তই ইরানের নিজস্ব। এইসব উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে গুলে গভজাভন বা আরাগু একিয়াম।

 

একিয়াম প্রজাতির গভজাভন ফুলের ওষুধি গুণ অনেক বেশি। এগুলো আলবোর্জ পর্বতমালার পাদদেশ ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ইউরোপীয় ফার্মাসিস্ট এবং চিকিৎসকরা আগে মনে করতেন ইউরোপীয় গভজাভন আর ইরানি গভজাভন একই প্রজাতির উদ্ভিদ। কেননা বাহ্যিকভাবে দেখতে দুটি ফুলই একরকম। কিন্তু পার্থক্যটা গুণাবলিতে। ওষুধি গুণের দিক থেকে দুটি ফুলের মাঝে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। ইরানি গভজাভন ফুল নিজে নিজেই শুধুমাত্র আলবোর্জ পর্বতমালার পাহাড়ে জন্মে এবং বিকাশ লাভ করে। তবে আজকাল এর চাষও করা হয়। এই উদ্ভিদটির প্রায় সবকিছুই ওষুধের জন্য ব্যবহার করা হয়। ফুল, পাতা, কাণ্ড, শেকড় ইত্যাদি সবকিছুই বিচিত্র ওষুধে ব্যবহারযোগ্য। এ কারণে গুলে গভজাভন দেশের ভেতরে এবং বাইরে সবখানেই ভালো বাজার পেয়েছে। প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ টন গভজাভন ফুল ও উদ্ভিদ ইউরোপ, আমেরিকাসহ পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়।

এবারে সুসান চেলচেরাগ ফুল নিয়ে কথা বলা যাক। এই বৈজ্ঞানিক নাম হলো লিলিয়াম লেদেবৌরি। বিচিত্র প্রজাতির সুসানের অস্তিত্ব পাওয়া যায় ইরানে। এগুলোর সবই পেঁয়াজের মতো একটি উৎসমূল থেকে জন্মে। সুসান ফুল লাল, হলুদ,কমলা, সাদা, গোলাপি এবং বেগুনি রঙেরও হয়ে থাকে। এই ফুল নাকে শুঁকলে মাথাব্যথায় আরাম পাওয়া যায়। শীতকালীন শ্লেষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। জখমের ওপর এর পেঁয়াজের চামড়ার প্রলেপ দিলে জখম শুকিয়ে যায় এবং জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। ইরানের এই গভজাভন ফুলটিই একমাত্র ফুল যা জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুসান চেলচেরাগ নামের যে ফুলটিকে ক্রিস্যান্থেমাম লিলি বলে উল্লেখ করেছি আমরা এই ফুলটিও একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী একটি উদ্ভিদ। এই ফুলের অনন্য সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো রাতের বেলা ফুলটি ফ্লোরোসেন্টের মতো জ্বলে। ফুলটির রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। বিলুপ্তির আশঙ্কায় এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আরও একটি ওষুধি উদ্ভিদ নিয়ে কথা বলা বলবো আমরা। এই উদ্ভিদটি একেবারেই অনন্য সাধারণ। উদ্ভিদটির ফার্সি নাম গোলফার আর বৈজ্ঞানিক নাম হলো হেরাদিউম পার্সিকাম। এই ফুলটি শুধুমাত্র ইরানেই রোপণ করা হয়। এ কারণেই এই উদ্ভিদটি হেরাক্লিউম পার্সিকুম নামেও পরিচিত। যেসব উদ্ভিদের নাম পার্সিকুম শব্দ দিয়ে শেষ হয় সেগুলো ইরানের উদ্ভিদ। বসন্তে এই বনজ উদ্ভিদটি বনের মাঝে নিজে নিজেই অঙ্কুরিত হয়। ধনিয়া কিংবা পার্সলে জাতীয় উদ্ভিদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এটি। এই ফুল ছাতার মতো দেখতে। সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসের দিকে এই গোলফারের বিচি তোলার উপযুক্ত সময়। বিচিগুলো চ্যাপ্টা এবং পাতলা। সুন্দর গন্ধময়। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এগুলো খাবারেও ব্যবহার করা হয়। পেটের সমস্যায় গোলফারের ব্যবহারের প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। গোলফারের বিচি জীবাণু নাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বিশেষ করে পেট পরিষ্কারক হিসেবে পরিগণিত। এই মশলাটিকে খাবারে ব্যবহার করা হয় প্রিজারভেটিভ হিসেবে।         

গোলফারের উৎপাদনের পরিমাণ দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। এখনও চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদিত হচ্ছে না দেখে রপ্তানি করা হচ্ছে না। একইভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও সবজির পেঁয়াজ বা চারাও রপ্তানি করা হয় না। যেমন টিউলিপের পেঁয়াজ। বিশেষ করে অধোমুখী টিউলিপ বা ললেহ ভজোগুণ, রজনীগন্ধার মূল, বুনো রিভার্সের মূল, জষ্ঠি মধুর শেকড়সহ আরও বহু রকমের উদ্ভিদের চারা বা বীজ রয়েছে যেগুলো দেশের বাইরে রপ্তানি করার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এগুলোকে সংরক্ষণ করার ওপর ইরান সরকার ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। ইরানের জাতীয় জিনগত এবং জৈবিক সম্পদ সংরক্ষণ কেন্দ্র গুরুত্বের সঙ্গে এগুলো নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাবার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।