মে ৩০, ২০২০ ১৯:৩৩ Asia/Dhaka

বন্ধুরা! সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র পণ্য সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকেও আহরিত হয় বিভিন্ন সামগ্রী।

ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়েও তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম গোলে গভজাভন এবং গোলফার নিয়ে। গোলফার হেরাক্লিউম পার্সিকুম নামেও পরিচিত। যেসব উদ্ভিদের নাম পার্সিকুম শব্দ দিয়ে শেষ হয় সেগুলো ইরানের উদ্ভিদ। বসন্তে এই বনজ উদ্ভিদটি বনের মাঝে নিজে নিজেই অঙ্কুরিত হয়। ধনিয়া কিংবা পার্সলে জাতীয় উদ্ভিদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এটি। এই ফুল ছাতার মতো দেখতে। সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসের দিকে এই গোলফারের বিচি তোলার উপযুক্ত সময়। বিচিগুলো চ্যাপ্টা এবং পাতলা। সুন্দর গন্ধময়। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এগুলো খাবারেও ব্যবহার করা হয়। পেটের সমস্যায় গোলফারের ব্যবহারের প্রচলন প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। গোলফারের বিচি জীবাণু নাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয় বিশেষ করে পেট পরিষ্কারক হিসেবে পরিগণিত। এই মশলাটিকে খাবারে ব্যবহার করা হয় প্রিজারভেটিভ হিসেবে। আসলে সৃষ্টির অপার রহস্যে ভরা মানবদেহ। এই দেহের ভেতরে কতো যে জটিল ব্যাপার স্যাপার রয়েছে তা পুরোপুরি আবিষ্কার করেছে কেউ-এমন দাবি আজ পর্যন্ত কারো পক্ষেই করা সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে এই দেহের বিচিত্র সমস্যা সমাধানে পৃথিবীব্যাপী বিভিন্নরকমের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

মানব দেহের জটিল রহস্য উন্মোচন করা সহজ কাজ না হলেও রোগ-ব্যাধিতে কিন্তু মানুষের চেষ্টা প্রচেষ্টার কমতি ছিল না-এখনও নেই। ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় চিকিৎসা বিজ্ঞান বিভিন্ন পন্থায় এগিয়েছে। মিশরের ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা ব্যবস্থা, চীন, ভারত,গ্রিস ও ইরানের ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি ওই সময়ের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছে। এমনকি এই আধুনিক কালে প্রাচীন সেই চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই মানুষের রোগ-ব্যাধি চিকিৎসায় পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইরানের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ চিকিৎসা ব্যবস্থা। ইরানের প্রাচীন ও মেধাবী চিকিৎসকগণ প্রচুর বইও লিখে গেছেন। তাঁদের লেখা অন্তত চৌদ্দ হাজার কপি বই রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করে চিকিৎসকরা হাজার হাজার রোগীকে প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। সেইসব প্রেসক্রিপশন যে খুবই উপযোগী এবং যথার্থ ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী পর আজও  তা প্রমাণিত সত্য। সে কারণে প্রাচীন সেইসব প্রেসক্রিপশন আজও অনুসৃত হচ্ছে।

ইরানের সেইসব প্রাচীন এবং বিখ্যাত,মেধাবী ক'জন চিকিৎসা বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করা যেতে পারে যাদের কাছে চিকিৎসা বিজ্ঞান আজও  ঋণী হয়ে আছে। ইরানের রাজি, আহওয়াজি, আবু আলি সিনা এবং জোরজানির মতো চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কথা এ প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসবে। কেননা চিকিৎসা বিষয়ে তাঁদের লেখা বই ছয় শতাব্দী পর্যন্ত পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আকর গ্রন্থ হিসেবে গৃহীত ছিল। ইরানের চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়টির প্রতিও বিশেষভাবে নজর দেওয়া অর্থাৎ রোগীকে সামগ্রিক সুস্থতার দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা। সুতরাং চিকিৎসা হতো ওষুধের পাশাপাশি আধ্যাত্মিকভাবেও। এই বিবেচনায় চিকিৎসকগণ প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা দিয়েছেন যাতে কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়।

ইরানের ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ওষুধ এবং জিকির-দুটোই সমানভাবে রোগের চিকিৎসায় কার্যকর। দুটোই পরস্পরের জন্য পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। ইরানের হেকিম বা চিকিৎসকগণ মনে করেন যে আল্লাহ সর্বপ্রকার রোগ-ব্যাধির উপশমের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রকৃতির মাঝে রেখে দিয়েছেন। সুতরাং উদ্ভিদের মাঝে রয়ে গেছে প্রচুর ওষুধি উপাদান, উপকরণ। বরং বলা ভালো মানব দেহের সুস্থতায় মানে রোগ-ব্যাধিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ঔষধি উদ্ভিদ। বিশ্বের বুকে ঔষধি উদ্ভিদের দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি দেশ হলো ইরান। ইরানে রয়েছে আট হাজারের বেশি প্রজাতির ওষুধি উদ্ভিদ। এগুলোর মাঝে এক চতুর্থাংশেরও বেশি হলো প্রসাধনী সামগ্রী, মশলা এবং সুগন্ধি জাতীয়। অন্তত সতেরো শ' প্রকারের বেশি উদ্ভিদ ইরানের একান্তই স্থানীয়। উদ্ভিদের এই সমৃদ্ধি ইরানের অর্থনীতির তেল বহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত।

ইরানে এখন সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ঔষধি উদ্ভিদ নিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। অন্তত তিন হাজার কোম্পানি এক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ভিদ উৎপাদন, উদ্ভিদ সনাক্তকরণ, চাষ, ঔষধি উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বের করা, সেগুলোকে সংরক্ষণ করা, প্যাকিং, নির্যাস তৈরি, রঙ তৈরি এবং সেগুলোকে বাজারে ক্রেতা সাধারণের জন্য পাঠানো ইত্যাদি বিচিত্র কাজে এইসব কোম্পানি তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। এগুলো হলো বেসরকারি পর্যায়ের কোম্পানিগুলোর কাজ। সরকারি পর্যায়ে যেসব কাজ হচ্ছে সেসবের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা, গবেষণামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এ সংক্রান্ত ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং গবেষণার অর্জনগুলোকে কাজে লাগানো ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

সরকারি যেসব কার্যক্রমের কথা বললাম আমরা বিশেষ করে গবেষণামূলক তৎপরতার ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে জ্ঞানভিত্তিক বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো। তারা বাজার পরিস্থিতি এবং মানুষের চাহিদার দিকটি বিবেচনা করে প্রোডাক্টগুলোকে ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করে পরিবেশন করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এককথায় ঔষধি উদ্ভিদ সংক্রান্ত পণ্যগুলোর বাণিজ্যিকিকরণের ক্ষেত্রে দূরদর্শী পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। এভাবে জ্ঞানভিত্তিক বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে ইরানের ঔষধি উদ্ভিদ থেকে তৈরি পণ্য সামগ্রিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানোর পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপকভাবে রপ্তানি করছে। এইসব পণ্য বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামসহ আরও বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।