জুন ০৭, ২০২০ ১৮:৪৯ Asia/Dhaka

আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র পণ্য সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকেও আহরিত হয় বিভিন্ন সামগ্রী।

ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়েও তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা আলোচনা বলেছিলাম যে, ইরানে এখন সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ঔষধি উদ্ভিদ নিয়ে ব্যাপক কার্যক্রম চলছে। অন্তত তিন হাজার কোম্পানি এক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

উদ্ভিদ উৎপাদন, উদ্ভিদ সনাক্তকরণ, চাষ, ঔষধি উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বের করা, সেগুলোকে সংরক্ষণ করা, প্যাকিং, নির্যাস তৈরি, রঙ তৈরি এবং সেগুলোকে বাজারে ক্রেতা সাধারণের জন্য পাঠানো ইত্যাদি বিচিত্র কাজে এইসব কোম্পানি তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। এককথায় ঔষধি উদ্ভিদ সংক্রান্ত পণ্যগুলোর বাণিজ্যিকিকরণের ক্ষেত্রে দূরদর্শী পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। এভাবে জ্ঞানভিত্তিক বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকে ইরানের ঔষধি উদ্ভিদ থেকে তৈরি পণ্য সামগ্রিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছানোর পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপকভাবে রপ্তানি করছে। এইসব পণ্য বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ভিয়েতনামসহ আরও বহু দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে যেসব কাজ হচ্ছে সেসবের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা, গবেষণামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এ সংক্রান্ত ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং গবেষণার অর্জনগুলোকে কাজে লাগানো ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

ইরানের খাদ্য পণ্য এবং ঔষধি উদ্ভিদ রপ্তানীকারকদের ইউনিয়ন রয়েছে। এই ইউনিয়ন এমন একটি সংগঠন যে কিনা ইরানি ভেষজ পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সেগুলোকে রপ্তানি করার ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকে। সংগঠনটির ওয়েব অ্যাড্রেস হলো: www.ihsta.ir ইরানের খনিজ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এই সংগঠন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এই সংগঠনটি গড়ে উঠেছিল ঔষধি উদ্ভিদের উন্নয়ন ও রপ্তানিসহ কৃষি খাতের সার্বিক উন্নতি ও অগ্রগতির লক্ষ্যে। আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির স্বার্থে ঔষধি উদ্ভিদের গুণমান বৃদ্ধি তথা স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখার বিষয়টিও সংগঠনটির কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঔষধি উদ্ভিদ রপ্তানীকারক ইউনিয়নের রয়েছে অন্তত আড়াই শ সদস্য। "গিয়হনে সাবজে জেন্দেগি" নামক কোম্পানিটিও এই ইউনয়নের সদস্য। এই কোম্পানির ওয়েব অ্যাড্রেস হলো: www.greenplantsoflife.com  কোম্পানিটি ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরানের ঔষধি উদ্ভিদ রপ্তানিকারকদের মধ্যে যারা শীর্ষে রয়েছে তাদের তালিকাভুক্ত হয়েছে। গিয়হনে সাবজে জেন্দেগি বা গ্রিন প্ল্যান্টস অব লাইফ কোম্পানি বিশ্বের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিচিত্র ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, মাউথ ওয়াশ, ক্রিম, জেলসহ আরও বহু রকমের হারবাল পণ্য উৎপাদন করে। হাইড্রোলিক গ্রিন হাউজ কিংবা কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে উদ্ভিদ উৎপাদন করা এবং সেগুলোকে বিশেষজ্ঞ গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ প্রফেসরদের সহযোগিতায় ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এ কোম্পানির সকল পণ্যের যথাযোগ্য মান নিশ্চিত করা হয়।  

আরও কয়েকটি নামকরা হার্বাল ঔষধ কোম্পানির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে যেগুলো এখন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। অসেহ ইয়াসুজ, বরিজে অসন্স, ইরান দরুক, বু আলি দরু, দরু দারমন সালাফসেগন, দরু সজিয়ে গোলে দরু এবং মেহরে গিয়হ ইত্যাদি কোম্পানি বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছে দেশে এবং বিদেশে। মেহরে গিয়হ কোম্পানিটি বিচিত্র উদ্ভিদকে টনিক বা চায়ে পরিণত করে সরবরাহ করে থাকে। একটু ব্যাখ্যা দিলে সহজ হবে ব্যাপারটা। যে-কোনো দুর্লভ উদ্ভিদকে কোম্পানিটি এমনভাবে বাজারে সরবরাহ করে যে সেগুলোকে গরম পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো খেতে হয়। ফার্সিতে এভাবে খাওয়ার পদ্ধতিকে বলে দামনুশ। কোনোরকম প্রিজারভেটিভ কিংবা ফ্লেভার ব্যবহার করে না কোম্পানিটি। যার ফলে মূল উদ্ভিদের অরিজিনাল স্বাদ পাওয়া যায়। টি-ব্যাগের মতো করেও পরিবেশন করা হয় এসব উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক স্বাদ বজায় রাখার জন্য ওই টি-ব্যাগে স্ট্যাপলার পিন কিংবা স্কস্টেপ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয় না। যা যা ব্যবহার করা হয় সবই প্রাকৃতিক উপাদান।

বোঝাই যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ শিল্প ইরানের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছে। এই শিল্পের ভিত্তিমূল ইরানের একান্তই নিজস্ব পরিসরে স্থাপিত। ইরানের জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলো এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরেই এ ধরনের শক্তি সামর্থ্য থাকার কারণে ঔষধি উদ্ভিদ শিল্পে ব্যাপক বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগের পথ ধরেই ইরানের জাতীয় অর্থনীতিও হয়েছে ব্যাপক সমৃদ্ধ। স্বাভাবিকভাবেই ঔষধি উদ্ভিদ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহলের তৎপরতা বেড়ে গেছে এবং তারা আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঔষধি উদ্ভিদ শিল্পকে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে সমৃদ্ধ করে তুলতে গুণগত মান আরও উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতিকে এক হিসেবে চিরায়ত চিকিৎসা পদ্ধতি বলা যেতে পারে। যেহেতু প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই চিরায়ত স্বাস্থ্যসেবা পদ্ধতির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে সেজন্য এই মূলধারার চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ভেষজ উপাদান উপকরণের চাষবাস চালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে ইরান ব্যাপক অগ্রসর ভূমিকা পালন করছে। মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যও অর্জন করেছে ইরান। বিদেশে ভেষজ ঔষধের চাহিদা তৈরি হয়েছে। কারণ বিশ্বব্যাপী ভেষজ চিকিৎসার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। সুতরাং চিরায়ত এই চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ভেষজ ঔষধের মান উন্নয়নে নিবিড় গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ইরান এগিয়ে যাচ্ছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।