জুন ১৩, ২০২০ ১০:৪০ Asia/Dhaka

গত কয়েকটি আসরে আমরা পরোপকার নিয়ে আলোচনা করেছি। বলেছি পৃথিবীর সব মানুষেরই উপকার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো শ্রেণীবিন্যাস নেই। আমরা এও বলেছি পরোপকার করতে হবে নিঃস্বার্থভাবে, পরোপকার করে খোঁটা দেওয়া যাবে না।

যিনি উপকার করলেন তিনি এজন্য খোঁটা দেবেন না ঠিকই, কিন্তু যিনি উপকৃত হলেন তার কি কোনো দায়-দায়িত্ব আছে? সহযোগিতা ও উপকারের বিনিময়ে আমরা কী করতে পারি? এসব বিষয়েই আজকের আসরে আলোচনার চেষ্টা করব।

পৃথিবীর কোনো মানুষের পক্ষেই অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। অনেকে কেবল অর্থনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। পরোপকার বলতে কেবল দান-সদকাকেই বুঝে থাকেন। এ ধরণের দৃষ্টিভঙ্গী সঠিক নয়। প্রতিদিন যে খাবার খাই আমরা নিজে তা উৎপাদন করি না, এর পেছনে রয়েছে কৃষক ও শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রম। তাদের সহযোগিতায় আমরা টেবিলে বসে খাবার খেতে পারছি। আসলে প্রতিনিয়ত আমরা কারো না কারো কাছ থেকে উপকৃত হয়ে থাকি। কেউ আমাদের উপকার করেছে, সেই উপকার সম্পর্কে যে আমরা সচেতন তা ওই ব্যক্তিকে অবহিত করার এবং তাতে আনন্দ প্রকাশ করার একটি উপায় হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। যে কোনো ব্যক্তি যে কোনো সময় নিজ নিজ ভাষায় উপকারের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন। এ কৃতজ্ঞতা কথায় ও কর্মে উভয়ভাবে জানানো যেতে পারে। আমরা মুখে যেমন ধন্যবাদ বলি তেমনি কাজে-কর্মের মাধ্যমেও প্রতিদান দিতে পারি। ইসলাম ধর্মে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতারই অংশ। কারণ মানুষকে সব সময় মনে রাখতে হবে, আমাদের অস্তিত্বের পেছনে রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ।  সুখে-দুঃখে সব সময় আমাদের অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। যারা অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক, তারা যেমন অসহায় ও অসচ্ছলদের সহযোগিতা করে থাকেন, ঠিক এর উল্টো অসহায়দের সহযোগিতা ছাড়াও ধনীরা একটি দিন পার করতে পারে না। সহযোগিতা বা উপকার যেমনই হোক সুযোগ পেলেই তা করা উচিত। বিশেষকরে যিনি উপকার করেছেন তার পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ হলে অথবা তার কোনো উপকার করার সুযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই তা কাজে লাগানো উচিত। এমনকি কেউ যদি আপনার সঙ্গে কোনো ভালো আচরণ করে তাহলে আপনার উচিত ভালো আচরণকারীর প্রশংসা করা। তার জন্য আল্লাহর কাছে উত্তম পুরস্কার চাওয়া। এটা কৃতজ্ঞতারই অংশ। কারো কাছ থেকে কোনো ভালো আচরণ পাওয়ার পর তাই আন্তরিকতাপূর্ণ এই ছোট দোয়াও অনেক বড় কৃতজ্ঞতা। এছাড়াও আরও অনেক উপায়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়। কৃতজ্ঞতা কখনো প্রকাশ পায় কোনো উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে, কখনোবা কোনো উপকার করার মধ্য দিয়ে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সব সময় আমাদেরকে কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করতে হবে। এমন যেন না হয় আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি  তা ভুলেই গেলাম, উল্টো তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়। এছাড়া শয়তানের প্ররোচনায় তখন খুলে যেতে পারে খোঁটা দেয়ার দুয়ার। এ আশঙ্কা যদি বাস্তবে রূপ নেয় তাহলেতো পারস্পরিক যতটুকু সহযোগিতা আগে করা হয়েছিল সবটুকুই নিষ্ফল হয়ে যাবে। যখনই তার কোনো উপকার করার সুযোগ পাওয়া যায়, তা ছোট হোক আর বড় হোক, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। এতে পারস্পরিক সহযোগিতার বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে। ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক সুসংহত হবে। তাই কেউ উপহার দিলে সম্ভব হলে তাকেও উপহার দিতে হবে। তবে তা যেন নিজেকে ঋণগ্রস্ত মনে করে এ ঋণ থেকে উদ্ধারের নিয়তে না হয় বরং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে যতটুকু সম্ভব আপনিও তাকে উপহার দিন। তা যদি হয় তাহলে কার উপহার ছোট, কারটা বড়- তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যাথা থাকবে না। আবার সামর্থ্য না থাকলেও কিংবা কষ্ট করে হলেও উপহার আমাকে দিতেই হবে- এ চিন্তাও থাকবে না।

উপহার আদানপ্রদানে যদি স্বতঃস্ফূর্ততা না থাকে, তাহলে এতে যে মনের কষ্ট আরও বেড়ে যায়- তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। যিনি উপহার দিচ্ছেন কিংবা সহযোগিতা করছেন তাকেও এমন চিন্তা করলে চলবে না যে, উপকৃত ব্যক্তি এক সময় তাকেও একই ধরণের অথবা এর চেয়ে বেশি উপহার দেবে। ইসলাম ধর্মমতে, কাউকে কিছু দেয়া, সহযোগিতা করা, সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, উপকারীর কৃতজ্ঞতা স্বীকার, সম্ভব হলে তার উপকার করা বা উপহার দেওয়া- সবটাই হতে হবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই। একজন মুমিন এজন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া আর কিছুই প্রত্যাশা করে না। আল্লাহর সন্তুষ্টিই তার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। একজন মানুষ জন্ম থেকে বড় ও শিক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ পরিক্রমায় মা-বাবা, আত্মীয় স্বজনসহ যাদের কাছ থেকে সেবা-যত্ন তথা উপকার গ্রহণ করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা তার দায়িত্ব। যে ব্যক্তি এ দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেও সফল হন। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।