জুন ২৪, ২০২০ ১৮:৩৮ Asia/Dhaka

আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র পণ্য সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকেও আহরিত হয় বিভিন্ন সামগ্রী।

ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়েও তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা আলোচনা বলেছিলাম সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ঔষধি উদ্ভিদ নিয়ে ইরানে চলমান ব্যাপক কার্যক্রম নিয়ে। অন্তত তিন হাজার কোম্পানি এক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা জানিয়েছিলাম।

সরকারি পর্যায়ে যেসব কাজ হচ্ছে সেসবের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্ক প্রতিষ্ঠা করা, গবেষণামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এ সংক্রান্ত ফ্যাকাল্টি প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং গবেষণার অর্জনগুলোকে কাজে লাগানো ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা কথা বলবো ইরানের ঔষধ শিল্প নিয়ে। আপনারা জানেন যে ঔষধ উৎপাদন শিল্পে ইরান খুবই অগ্রসর। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইরানের অভ্যন্তরে যেসব উন্নত ওষুধ তৈরি হচ্ছে এখন তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ইরানের ওষুধ সামগ্রী তাই দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অচিরেই রপ্তানি হবে দেশের বাইরেও। আন্তর্জাতিক বাজারে এ ক্ষেত্রে ইরানের সম্ভাব্য উপস্থিতির ব্যাপারে ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা আশাবাদী।

মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবের দিক থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ মুনাফাজনক শিল্প। ২০১০ সালে ফরচুন ম্যাগাজিন একটি নিবন্ধে লিখেছে, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প উচ্চ মুনাফার দিক থেকে বিশ্বের বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প। সেইসঙ্গে বিনিয়োগের জন্যও উপযুক্ত একটি খাত হিসাবে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের কথা উল্লেখ করেছে। এই শিল্পে বিনিয়োগ সাধারণত ক্রমউন্নয়নশীল ও বিকাশমান ছিল। জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টিও অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এটা। এ ছাড়াও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের বিকাশের আরো কিছু কারণ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বার্ধক্য, দীর্ঘস্থায়ী রোগ,স্বাস্থ্য-বীমা সুবিধা প্রদান করা এবং কিছু দেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি,ওষুধ শিল্পে উদীয়মান বাজারগুলোর উন্নয়ন এবং এই শিল্পে স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ইত্যাদি।

এই বাজারে বিনিয়োগের আরেকটি সুবিধা হল বিশ্বের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতির হার রাতারাতি বৃদ্ধি না পাওয়া মানে অস্থিরতা দেখা না দেওয়া। মোটামুটি একটা ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করে এই ঔষধ শিল্পের বাজারে। অন্যান্য বাজারের তুলনায় ওষুধের শিল্পের বাজারে অর্থনৈতিক ওঠানামার পরিমাণ কম। তাই অন্যান্য অনেক শিল্পের মতো ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে ব্যবসায়িক ব্যাপক মুনাফা কিংবা মারাত্মক পতনের আশঙ্কাটা কম। ২০০৮ ও ২০০৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প শতকরা সাত ভাগের বেশি মুনাফা করেছে। বর্তমান বিশ্বে ওষুধ শিল্পে অর্থলগ্নির পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

তবে এ বিষয়টিও লক্ষ্য করা উচিত যে অন্যান্য অনেক শিল্পের তুলনায় এই শিল্পে ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি। এই শিল্পের অন্যতম প্রধান ব্যয়ের খাত হল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ গবেষণা ও উন্নয়ন খরচ। তবে গবেষণা ও উন্নয়ন খরচের পরও বিক্রয়ের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় অন্যান্য উচ্চ-প্রযুক্তির শিল্পের চেয়ে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পই বেশি লাভজনক। বিশ্বে ওষুধ শিল্প মানব জীবন ও স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এ কারণে এই শিল্পটি ক্রমবিকাশমান ও উন্নয়নশীল। সুতরাং ওষুধ শিল্পে যে অগ্রগতি এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী সবসময়ই ঘটতে থাকবে তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। মানব দেহের নতুন নতুন সমস্যা যতই দেখা দেবে ততই গবেষণা ও উদ্ভাবনীর মাত্রা বেড়ে যাবে। বিশ্বের বৃহত্তম ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর আয়ের বা ব্যবসায়িক মুনাফার একটা বিরাট অংশই গবেষণা এবং উন্নয়নের কাজে ব্যয় করা হয়।

বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যসামগ্রী বিক্রিলব্ধ অর্থের প্রায় চল্লিশ শতাংশ ব্যয় করে গবেষণা ও উন্নয়নসহ বিপণন এবং বাজারজাত করার পেছনে। এটাকে মূলত ব্যয় না বলে বিনিয়োগ করে বলাই শ্রেয়। যেসব ওষুধ এখন রোগীদের জন্য নিরাময়কারী,সেগুলো বহু বছর আগেই গবেষণা করে উৎপাদন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। একইভাবে ভবিষ্যতে রোগীদের জন্য যেসব ওষুধের প্রয়োজন হবে সেগুলোর জন্য অদূর ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে উত্পাদন করতে হবে। সুতরাং এই শিল্পে ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এবং কী ধরনের রোগ-ব্যাধির চ্যালেঞ্জ বা আশঙ্কা রয়েছে সেসব নিয়ে গবেষণা করে প্রত্যাশিত ওষুধ তৈরির চিন্তা করতে হয়। আর এ কাজটির জন্য যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন পড়ে।

গবেষণার কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন পড়ে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে যে কখনও কখনও একটি ওষুধ নিয়ে গবেষণা করে তা উৎপাদন ও বাজারজাত করতে 15 বছরের মতো সময় লেগে যায়। সেইসঙ্গে এক শ কোটি ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থও বিনিয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে।  সমগ্র বিশ্বে যত ওষুধ উৎপাদিত হয় তার বেশিরভাগই উৎপন্ন হয় উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপে। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে,বিশ্বের শতকরা সাইত্রিশ ভাগ ওষুধ উৎপাদিত হয় উত্তর আমেরিকায়। উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে এটাই সর্বোচ্চ। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে উৎপাদিত ওষুধের পরিমাণ শতকরা চার ভাগ। উৎপাদনের পরিমাণের দিক থেকে এই হার সর্বনিম্ন পর্যায়ের। এই পরিসংখ্যান পরিমাপ করা হয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পে টার্নওভার অর্থলগ্নির পরিমাণের হার বিবেচনা করে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।