জুলাই ০৮, ২০২০ ২০:০২ Asia/Dhaka

হেলথ ট্যুরিজমটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমরা চক্ষু চিকিৎসার প্রসঙ্গ টেনেছিলাম। ফারাবী চক্ষু হাসপাতালের কথা বলেছিলাম আমরা।

এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি চক্ষু চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে তার প্রায় সকল সেবাই দিয়ে থাকে সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী। 'নূর' চক্ষু হাসপাতাল, 'নেগাহ' স্পেশালাইজড আই হসপিটালের নামটিও উল্লেখ করা যেতে পারে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য অন্যতম প্রধান চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র এটি। ইরানের বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকরাও যত্নের সঙ্গে তাদের সেবা দিয়ে থাকেন এসব হাসপাতালে।উন্নত সেবা ও চিকিৎসার কারণেই মূলত চিকিৎসা ভ্রমণ নামে একটি ট্যুরিজম গড়ে উঠেছে। মেডিকেল ট্যুরিজম স্বাস্থ্য পর্যটনের একটি সমৃদ্ধ শাখা। বন্ধ্যত্বসহ সকল প্রকার চিকিৎসা এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।

স্বাস্থ্য পর্যটন পর্যটনেরই একটি শাখা। উন্নত স্বাস্থ্য সেবা নেয়াই এই পর্যটনের উদ্দেশ্য। এই সেবা মানসিক এবং কায়িক উভয় ক্ষেত্রেই নেয়া হয়। যেসব দেশ স্বাস্থ্য পর্যটনের ক্ষেত্রে সেবা দিতে চায় সেসব দেশের বিখ্যাত হাসপাতালগুলোতে অস্ত্রোপচারসহ যেসব স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় ওই দেশগুলোতে সেই সেবাগুলো নেয়ার জন্য সফরে যাওয়াই স্বাস্থ্য পর্যটন। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নেয়ার পাশাপাশি ওইসব দেশের দর্শনীয় স্থান ও নিদর্শনগুলো দেখতে যাওয়াও স্বাস্থ্য পর্যটনের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৯০ এর দশক থেকে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পর্যটনের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে।

এই বিকাশের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে উদার বাণিজ্যিকীকরণ, অর্থনীতিতে মুদ্রা মানের পরিবর্তন,চিকিৎসা সরঞ্জামের মানোন্নয়ন ও উন্নতকরণ, ইন্টারনেটের আবির্ভাব এবং তার বিস্তার, তথ্য প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি, জনসংখ্যার বয়োবৃদ্ধি এবং উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা বা স্বাস্থ্যসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি ইত্যাদি।বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ও সংস্কৃতিতেই বিশেষ করে প্রাচ্যের দেশগুলোতে পরিবার গঠনের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে সন্তান জন্ম দেওয়ার শক্তি সামর্থ্যকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ এবং মাতৃত্বকে তাদের পূর্ণতার একটি গুণ-বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয়।

বলছিলাম মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণ এবং মাতৃত্বকে তাদের পূর্ণতার একটি গুণ-বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয়। পক্ষান্তরে বন্ধ্যত্বকে জীবনের অপূর্ণতার অন্যতম কারণ মনে করা হয়। তাই যে বা যারা এই সমস্যায় ভোগে তাদের দেহ মন তথা সমগ্র জীবনের ওপর এই অপূর্ণতার মারাত্মক প্রভাব পড়ে। দু:খজনকভাবে বন্ধ্যা নারী কিংবা নপুংসক পুরুষের ওপর সামাজিক এবং পারিবারিক মারাত্মক চাপ পড়ে।  বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লিওএইচও'র গবেষণা অনুসারে বিশ্বব্যাপী  দম্পতিদের শতকরা আট থেকে বারো ভাগ তাদের জীবনব্যাপী কোনো না কোনোভাবে বন্ধ্যত্বের মুখোমুখি হয়ে থাকেন। তার মানে বিশ্বব্যাপী পাঁচ থেকে আট কোটি মানুষ এই বন্ধ্যাতে আক্রান্ত।                             

আজকাল,বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে এবং খুব দ্রুতই তার বিকাশও ঘটেছে। তারই সাথে বেড়ে গেছে স্বাস্থ্য পর্যটনেরও প্রতি আগ্রহের বিষয়টিও। কেননা বিশ্বের যেসব উন্নত দেশ এই বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা করে থাকে সেসব উন্নত দেশ ভ্রমণে বন্ধ্যা দম্পতিরা ব্যাপক আগ্রহ উদ্দীপনার সঙ্গে ছুটে যাচ্ছে। বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্যই তারা ওইসব দেশ ভ্রমণ করে এবং সেখানে চিকিৎসা নেয়। বন্ধ্যা দম্পতিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব উন্নত দেশ আমন্ত্রণ জানায় সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট মেডিকেল সেন্টারগুলো আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ সার্জারির প্রয়োজনীয় উপকরণেও সমৃদ্ধ। আর এসব উন্নত প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হবার আশায় তথা সযত্ন চিকিৎসা পেয়ে একটি সুস্থ বাচ্চার বাবা-মা হওয়ার আশায় উন্নত দেশগুলো সফর করছেন  নি:সন্তান দম্পতিরা।

নি:সন্তান দম্পতিদের আশার কথা বলছিলাম। আসলে বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ইরান যথেষ্ট উন্নত। বন্ধ্যত্বের চিকিৎসায় ইরানে রয়েছে দক্ষ চিকিৎসক,দক্ষ নার্স এবং মানসম্পন্ন পরীক্ষাগার। এইসব সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় ইরান এখন কেবল প্রাচ্যে কিংবা মধ্যপ্রাচ্যেই শুধু নয় বরং সমগ্র বিশ্বেই ব্যাপক সুনাম সুখ্যাতিময় একটি দেশে পরিণত হয়েছে। বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণায় ইরানের অবস্থান এখন মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম এবং বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ। বর্তমানে ইরানে পঞ্চাশটিরও বেশি বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রই স্থানীয় বন্ধ্যা রোগীদের তো বটেই আঞ্চলিক ও পশ্চিম এশিয় রোগীদেরকেও  এমনকি সারাবিশ্বের চিকিৎসা পর্যটকদেরও স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে,দক্ষিণ ইরানের বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে সারাবছর জুড়েই পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো যেমন বাহরাইন,কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ আরও বহু দেশের রোগীরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসে।  

ইরানে বাইরের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নেয়ার কথা বলছিলাম। ইয়াজদ প্রদেশটি ইরানের অন্যতম একটি প্রদেশ। বিশেষ করে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে এই প্রদেশে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার জন্য এখানকার কয়েকটি মেডিক্যাল সেন্টার ব্যাপক সুপরিচিত। এই প্রদেশে আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি গবেষণা ও চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার ক্ষেত্রেও রয়েছে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন সেবার নিশ্চয়তা। এইসব চিকিৎসাকেন্দ্রে অসামান্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চিকিৎসক রয়েছেন। এসবের পাশাপাশি চার মৌসুমি পরিবর্তন এবং পর্যটক আকর্ষণীয় নানা বৈচিত্র্যও রয়েছে এখানে। আবহাওয়াগত ভিন্নতার পাশাপাশি গরম এবং ঠাণ্ডা ঝরনাও রয়েছে উপভোগ করার মতো। ইয়াজদ প্রদেশের চিকিৎসা পর্যটন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে এইসব বৈশিষ্ট্য দারুণ সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।