আগস্ট ০১, ২০২০ ১৫:৩৮ Asia/Dhaka

পবিত্র ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব ও সর্বশেষ রাসুলের (সা) আদর্শ বিশ্বের মানবীয় সম্পর্ক ও আদর্শের জগতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। খোদায়ি এই ধর্মের সুবাদে বিশ্বে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, অমানবিকতা, বর্বরতা, স্বৈরতন্ত্র ও জুলুম-অনাচার অনেকাংশেই কমে আসে।

পবিত্র কুরআন মহানবীর (সা) চিরন্তন মোজেজা এবং মহানবীর জীবন ছিল কুরআনি আদর্শেরই বাস্তব দৃষ্টান্ত। মহানবীর জীবনাদর্শ মানুষকে দেখায় সব ধরনের সংকট, বিপর্যয় ও অচলাবস্থার মোকাবেলায় চিরন্তন সৌভাগ্যের রাজপথ। কথায় বলে ধর্মের ঢোল আপনিই বাজে। তাই শ্রেষ্ঠ ও খোদায়ি এই ধর্ম তথা ইসলাম তার আবির্ভাবের পর থেকেই ভিন্ন ধর্মের অনেক জ্ঞানী-গুণী ও পণ্ডিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ও এখনও করছে এবং এ ধারা অনাগত যুগগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। এসব বিষয়ে লেখা হয়েছে শত শত বই। ইসলামের সূচনা-লগ্ন থেকেই বহু গবেষক ও জীবনীকার মহানবীর (সা) জীবনের নানা দিক বিস্তারিত বর্ণনা ও ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরেছেন। ফলে মহামানব ও নবী-রাসুলদের মধ্যে মহানবীর (সা) আধ্যাত্মিক মর্যাদা এবং আদর্শিক ও সার্বিক প্রভাব যে সবচেয়ে বেশি তা যে কোনো বিবেকবান চিন্তাবিদের কাছেই স্পষ্ট। 

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই সর্বোচ্চ প্রশংসার অধিকারী হয়েছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)। তাঁকে গোটা বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহ। মহানবী (সা) সম্পর্কে সুরা নিসার ১১৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,  'আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশী গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুণা অসীম।'- আসলে সর্বকালের সেরা মহামানব এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হিসেবে মুহাম্মাদ (সা)’র উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি বোঝার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞ বা পশ্চিমা মনীষীর স্বীকৃতিরও দরকার নেই। যারা সত্য-সন্ধানী তাদের কাছে মহানবীর শ্রেষ্ঠত্ব এবং অতুলনীয় শ্রেষ্ঠ চারিত্রিক গুণগুলো স্পষ্ট হওয়ার মত অনেক কিছুই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত সহস্র বই-পুস্তকের প্রামাণ্য বর্ণনায়। ফলে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার ক্রমোন্নতির পাশাপাশি পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও মনীষীদের কাছেও মহানবী (সা) সম্পর্কে ভুল ধারণা ও মিথ্যা অভিযোগ বা অপবাদগুলোর অসারতা ক্রমেই বেশি মাত্রায় স্পষ্ট হয়েছে। 

ঊনবিংশ শতকে ইসলাম সম্পর্কে মুসলিম লেখকদের লেখা অনেক বইয়ের অনুবাদ ইউরোপীয় নানা ভাষায় প্রকাশ হওয়ার পর ইসলামের ইতিহাস ও মহানবী (সা) সম্পর্কে নানা বিকৃতি ও মিথ্যাচারের দূষণ, ভুল ধারণা ও আতঙ্ক বহুলাংশে দূর হয়েছে। ফলে পশ্চিমা শিক্ষিত সমাজের মধ্যে মহানবী (সা) ও ইসলামের প্রতি ভালবাসা দিনকে দিন বেড়েছে এবং এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মুসলিম জাতিগুলো ও প্রাচ্য সম্পর্কেও পশ্চিমাদের মন্দ ধারণাগুলো ক্রমেই সুধারণায় রূপ নিচ্ছে। অবশ্য এক্ষেত্রে পাশ্চাত্যের কোনো কোনো প্রাচ্যবিদের ভূমিকাও ব্যাপক অবদান রেখেছে। এই প্রাচ্যবিদদের লেখনী সম্পর্কেই আমরা আলোচনা করেছি এই ধারাবাহিকের গত কয়েক পর্বে। সত্য-সন্ধানী ও মোটামুটি নিরপেক্ষ এই ধারার প্রাচ্যবিদদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে খ্রিষ্টিয় উনিশ শতকে। তবে ইসলাম ও মহানবী সম্পর্কে এই শতকে বিদ্বেষী বক্তব্য উচ্চারণ ও উল্লেখ করা পুরোপুরি বন্ধও হয়নি। 

ওয়াশিংটন আরভিং ছিলেন একজন মার্কিন গবেষক। ‘মুহাম্মাদের জীবনী ও তাঁর অনুসারী’ শীর্ষক একটি বই তিনি লিখেছিলেন ১৮৪৯ সালে। এ বইয়ে তিনি ইসলামের মহানবীর প্রকৃত তথা সত্য চেহারা পশ্চিমাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বইটি লেখার দশ বছর আগে তিনি একটি গল্পের সংকলন প্রকাশ করেন যেখানে মৌরিতানিয়ার উন্নততর সংস্কৃতির বিরুদ্ধে খ্রিস্টানরা বর্বর আচরণ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। 
ওয়াশিংটন আরভিং ৫২ টি বই অধ্যয়নের পর ‘মুহাম্মাদ ও খলিফাগণ’ শীর্ষক একটি বই লিখেছেন। এ বইয়ে তিনি খুব কার্যকর ভাষায় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ইউরোপ-আমেরিকার জনগণের কাছে অনেক বাস্তবতা তুলে ধরেন এবং ইসলাম ও মহানবী (সা) সম্পর্কে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারকদের অন্ধ-বিদ্বেষের বিপরীতে তিনি মহানবীর ধর্মের প্রশংসা করেন। 

মহানবীর দাওয়াতের মহৎ উদ্দেশ্য বা তাঁর আহ্বানের আন্তরিকতা সম্পর্কে নানা অপবাদ প্রসঙ্গে আরভিং লিখেছেন:  নবী মুহাম্মাদ যদি খ্যাতির আশায় ইসলামের দাওয়াত দিতেন তাহলে জেনে রাখা উচিত তিনি তো এমনিতেই তাঁর জন্মভূমিতে বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার জন্য নজিরবিহীন খ্যাতি অর্জন করেছিলেন এবং আরবদের সবচেয়ে খ্যাতিমান গোত্রে তথা কুরাইশ বংশে (বনি হাশেম কুরাইশের শিরোমণি) তাঁর জন্ম হয়েছিল! কেউ যদি ভাবে যে মুহাম্মাদ সুলতান বা রাজা হওয়ার প্রত্যাশী ছিলেন এবং শান-শওকত ও ক্ষমতার কাঙাল ছিলেন তাহলে তার জানা উচিত কাবা ঘরের সংরক্ষণ ও মক্কা শহরের নিয়ন্ত্রণ ছিল মুহাম্মাদের বংশগত বা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে-আসা উত্তরাধিকারগত অধিকার। মক্কার যে কেউ এই পরিবারের দিকে আশার দৃষ্টি নিয়ে তাকাত। মুহাম্মাদ খুব ভালভাবেই জানতেন যে কুরাইশদের অতীতের ধর্মকে অস্বীকার করার পর তাঁর কাছ থেকে সেইসব পুরনো ঐতিহ্যগত পারিবারিক সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নেয়া হবে এবং গোটা গোত্র হবে তাঁর শত্রু ও মক্কাবাসীরা তাঁর প্রতি হবে ক্ষুব্ধ-বিতৃষ্ণ! আর কাবা ঘরে এনে রাখা মূর্তিগুলোর যত পূজারী আছে তারা সবাই তাঁকে ঘৃণা করতে থাকবে! কিন্তু এসব জেনেও তিনি ছিলেন সত্যের দাওয়াত দেয়ার ব্যাপারে পরোয়াহীন... মক্কার সবাই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ