জানুয়ারি ৩১, ২০২১ ২০:৩০ Asia/Dhaka

যেসব অমুসলিম মনীষী পবিত্র ইসলাম ধর্ম ও মহানবীর (সা) মহত্ত্ব নিয়ে প্রশংসাসূচক ও গবেষণাধর্মী বই লিখে খ্যাতি অর্জন করেছেন প্রখ্যাত জার্মান প্রাচ্যবিদ মিসেস অ্যান ম্যারি শিমেল তাঁদের একজন।

গত পর্বে আমরা মিসেস শিমেলের লেখা ‘মুহাম্মাদ(সা) মহান আল্লাহর প্রেরিতপুরুষ বা রাসুল’ শীর্ষক বইয়ের আলোকে মহানবী (সা) সম্পর্কে শিমেলের কিছু বক্তব্য ও মতামত তুলে ধরেছি। মহানবীর (সা) আচার-আচরণ যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ও শ্রেষ্ঠ আদর্শ তা দৃষ্টান্তসহ উল্লেখ করেছেন মিসেস শিমেল। আজও মহানবীর (সা) শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে তাঁর আরও কিছু বক্তব্য ও মন্তব্য তুলে ধরব। শিমেল লিখেছেন: মহানবী (সা) ছিলেন সুন্দরতম ও মহততম সব স্বভাব-চরিত্রের অধিকারী। তাঁর চেহারাও ছিল বেশ সৌম্য ও আকর্ষণীয়। মহানবীর (সা)বাহ্যিক সৌন্দর্য ছিল তাঁর ভেতরের সৌন্দর্যেরই প্রতিফলন বা আয়না। কারণ মহান আল্লাহ তাঁকে পরিপূর্ণ চারিত্রিক সৌন্দর্য ও যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বলা হয় যে রাতে মহানবী (সা) মহান আল্লাহর সাক্ষাতের উদ্দেশে তথা মেরাজ ভ্রমণে বের হন তাঁর মুখমণ্ডলের কয়েক ফোটা ঘাম পৃথিবীর মাটিতে এসে পড়ে এবং সেখানে এক সুগন্ধি ফুল গজিয়ে ওঠে। মহানবীর নির্মল অনুপম মানবীয় স্বভাব ও চারিত্রিক আকর্ষণ নিয়ে অনেক শিল্পকর্ম বা কবিতা, প্রশংসাগীতি, নাটক লিখেছেন কবি, সাহিত্যিক ও আরেফ বা খোদাপ্রেমের তত্ত্বজ্ঞানী-সাধকরা। এসব শিল্পকর্মে ফুটে উঠেছে মহানবীর জীবনের স্মরণীয় নানা বৈশিষ্ট্য ও দিক।  

প্রয়াত জার্মান প্রাচ্যবিদ মিসেস শিমেলের মতে পশ্চিমা পাঠকদের বেশিরভাগই মহানবী (সা) সম্পর্কে অবাস্তব ধারণা রাখেন। কিন্তু তারা যদি এটা দেখতে পেতেন যে বেশিরভাগ ঘটনার বর্ণনায় ও হাদিসে মহানবীর (সা) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাঁর নম্রতা ও দয়াশীলতা ফুটে উঠেছে তাহলে তারা স্তম্ভিত হতেন! দরিদ্র ও দুর্বলদের প্রতি মহানবীর (সা) মমত্ববোধের এবং তাঁর দয়ার বিষয়ে বহু সূত্রের নানা বর্ণনা দেখা যায়। মুহাম্মাদ (সা) ও তাঁর পরিবারের সাদামাটা জীবন-যাপনও তাঁর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ! তাঁর অতলান্ত দয়া সবাইকেই স্পর্শ করত। শিশুদের প্রতি মহানবীর (সা) ভালবাসার সুখ্যাতিও ছড়িয়ে পড়েছিল সবার মুখ। মহানবী (সা) পথে-ঘাটে শিশুদের দেখে তাঁদের সালাম দিতেন! তাঁদের সঙ্গে খেলতেন! মায়েদের প্রতি মহানবীর (সা) যে গভীর শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ পেত তাও ভুলে যাওয়ার মত কোনো বিষয় নয়।

পার্থিব বা দুনিয়াবী বিষয়গুলোর সঙ্গে পরকালীন বিষয়গুলোর সমন্বয় করার ক্ষেত্রে মহানবীর যোগ্যতা প্রসঙ্গে মিসেস শিমেল লিখেছেন: মহানবীর জীবনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তিনি ধর্ম ও সরকারের মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। মুসলমানরা মনে করেন খোদায়ি বাণী প্রচারের জন্য মহানবীর কাছে পার্থিব নানা মাধ্যম থাকাটাও ছিল জরুরি যাতে তিনি মানুষকে সৌভাগ্যের পথ দেখাতে পারেন। মহানবীর এই বৈশিষ্ট্য তাঁর উচ্চ মর্যাদা ও তাঁর রিসালাতের বাস্তবতাকে বাড়িয়ে দেয়। মহানবীর এই সুন্নাতের প্রেরণা নিয়ে মুসলমানরা পশ্চিমা লিবারেল বা কথিত উদারতাবাদীদের বিপরীতে ধর্ম ও রাজনীতিকে পরস্পর থেকে আলাদা কিছু বলে মনে করে না। সামগ্রিকভাবে এটা বলা যায় যে নবী-রাসুলদের ধারার সমাপ্তকারী মহানবী (সা) জিহাদে ও শান্তিতে, সফরে ও সফরের বাইরে স্বাভাবিক সময়ে, ধর্মীয় ও পার্থিব ক্ষেত্রে এবং জীবনের সব ক্ষেত্রেই ও সব কাজে মানবতা বা মনুষ্যত্ব আর আধ্যাত্মিকতার পরিপূর্ণতম আদর্শ। তিনি যা যা করেছেন তার সবই চিরন্তন বা স্থায়ী আদর্শ হিসেবে টিকে আছে। 

মহানবী (সা) সমাজ-জীবন, ব্যক্তি-জীবন এবং জীবনের অন্য সব ক্ষেত্রে দিয়ে গেছেন সভ্যতার সর্বোত্তম নীতি ও আদর্শ। স্বাধীনতা, বৈষম্যহীনতা, ন্যায়বিচার, মানবীয় মর্যাদা ও নৈতিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উন্নয়ন ছিল তাঁর সূচিত মহাবিপ্লবের কয়েকটি মূল অক্ষ। মদিনায় তাঁর নেতৃত্বাধীন দশ বছরের শাসনামল ইতিহাসের সবচেয়ে স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়। মহানবীর প্রবর্তিত ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থা কেবল বিশেষ কোনো যুগ বা স্থানের জন্য আদর্শ ব্যবস্থা নয়, বরং তা চিরকালের জন্য ও সব অঞ্চল বা স্থানের জন্য ধর্মীয় শাসন-ব্যবস্থার বা ধর্মীয় কর্তৃত্বের আদর্শ। মানুষ যদি পূর্ণতা ও সৌভাগ্যের রাজপথ পেতে চায় তাহলে মহানবীর বিপ্লব ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকেই অনুসরণ করতে হবে যে বিপ্লব ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা তথা নয়া সভ্যতা গড়ে উঠেছে শ্রেষ্ঠ ও উজ্জ্বলতম ধর্ম অনুসরণের মাধ্যমে। মহানবীর আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলোও স্পষ্ট, সুদৃঢ় ও মানবজাতির কাছে তিনি সেসব তুলে ধরেছিলেন। আর এ জন্যই মহানবীকে চেনা ও জানার জন্য গবেষকদের মধ্যে দেখা গেছে এত বেশি প্রচেষ্টা ও এত বেশি লেখালেখি।

বিশ্বনবী (সা)’র জীবন ও জীবনাদর্শ সূর্যের মতই এত স্পষ্ট, প্রজ্জ্বোল, মহাসত্য ও দেদীপ্যমান যে  তার জন্য কারো কোনো স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতির দরকার হয় না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহই তাঁকে সর্বোত্তম সব সার্টিফিকেট দিয়ে রেখেছেন। যেমন, সুরা আহযাবে বলা হয়েছে:

হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি। এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।

জার্মান প্রাচ্যবিদ অধ্যাপক মিসেস অ্যান ম্যারি শিমেল মহানবীর মাহাত্ত্ব্য তুলে ধরতে গিয়ে কেবল নানা উদ্ধৃতি ও শোনা-কথার ওপর নির্ভর করেননি, বরং ঐতিহাসিক নানা বাস্তবতা ও পবিত্র কুরআনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মহানবীর ব্যক্তিত্বকে বোঝার চেষ্টা করেছেন। ফলে মহানবীর উচ্চতর নানা আকর্ষণ ও আধ্যাত্মিক দ্যুতি তার কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তাই তিনি মহানবী সম্পর্কে পাশ্চাত্যের বিশেষ মহলের বিদ্বেষ ও অবমাননাকে অযৌক্তিক ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ