ইরানের পণ্যসামগ্রী: স্টেম সেল থেরাপি
আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র পণ্য সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকেও আহরিত হয় বিভিন্ন সামগ্রী। ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়েও তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য।
গত আসরে আমরা বলেছিলাম ডেন্টাল ট্যুরিজমে পর্যটকরা সাশ্রয়ী অথচ উন্নতমানের দন্ত্য চিকিৎসার লক্ষ্যে ইরান সফর করে থাকেন। ইরানে বিশ্বমানের চিকিৎসাটা খুব স্বল্প খরচে পাবার কারণে দন্ত্য পর্যটকরা খুবই উৎসাহিত বোধ করেন। আজকাল সারা বিশ্বেই বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে দন্ত্যচিকিৎসা পর্যটনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচলিত।
এখন কথা হলো দন্ত্য চিকিৎসার জন্য আপনি কীভাবে আসবেন ইরানে। এটা অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন বৈ কি। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কিছু সংস্থা ও কোম্পানি কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ওয়েব সাইটেও আপনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। তারা আপনাকে মেডিক্যাল সেন্টার নির্বাচন করা, ডাক্তার নির্বাচন করা,হোটেল বুকিং দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব কাজেই সহযোগিতা করবে। এমনকি ডাক্তারের সিরিয়াল দেওয়াসহ উপযুক্ত ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়ার ব্যাপারেও সহযোগিতা করে থাকে। এরকম একটি ওয়েব অ্যাড্রেস হলো: medicaltourismusc.ir/en যাই হোক, আজ আমরা আলোচনা করবো ইরানে স্টেম সেল থেরাপি নিয়ে। বলা হয়ে থাকে ইরানের তেল বহির্ভুত জাতীয় আয়ের অন্যতম খাত হচ্ছে হেল্থ ট্যুরিজম। আর এই হেল্থ ট্যুরিজমের অন্যতম খাত হলো সেল থেরাপি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভুবনে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। সকল মানুষের জন্য উন্নত জীবন যাপনের ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি নি:সন্দেহে একটা সুখকর ঘটনা। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছে যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। অস্থিমজ্জা, হার্ট, লিভার এবং কিডনি প্রতিস্থাপন বা মানব ডিএনএ এবং জিন আবিষ্কার,প্রাণী প্রজনন এবং স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি এখন একেবারেই সাধারণ বিষয়। মেডিকেল গবেষণা কেন্দ্রগুলিতে এখন ড্রাগ থেরাপির চেয়ে মানব টিস্যু এবং অঙ্গ উত্পাদনের বিষয় নিয়েই বেশি আলোচনা করা হয়। স্টেম সেল বা মৌলিক কোষ সম্পর্কে আপনি নিশ্চয়ই শুনে থাকবেন। স্টেম সেল মানবদেহে সর্বপ্রকার কোষ উত্পাদন করতে সক্ষম। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সমস্ত দেহের টিস্যুতেই এক ধরণের স্টেম সেল বা মৌলিক কোষ রয়েছে।

এইসব মৌলিক কোষ টিস্যুর কোষে পরিণত হতে সক্ষম। এই কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্থ টিস্যুগুলোকে মেরামত করার কাজে লাগে। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যুতে প্রতিস্থাপিত হয়ে কোষের ত্রুটিগুলো মেরামত করে। এই দক্ষতার কারণেই তাদের বলা হয় "স্টেম সেল"। তবে মনে রাখতে হবে যে মানব দেহের সকল কোষই কিন্তু বিভক্ত হবার যোগ্য নয়। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এইসব কোষ বিভক্ত না হয়েই বেঁচে থাকে। রক্ত,ত্বক এবং পাচনতন্ত্রের মতো শরীরের কোনো কোনো টিস্যু দ্রুত পুনর্গঠন চক্র অতিক্রম করে এবং প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ত্বক এবং হজম কোষ উত্পাদন করে।
মৌলিক কোষ নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। মানব দেহের সকল কোষেই কিছু সাধারণ উপাদান বা অংশ থাকে,যেমন কোষকেন্দ্র, কোষপঙ্ক বা সাইটোপ্লাজম এবং কোষঝিল্লি বা কোষপ্রাচীর। কিছু কিছু ব্যতিক্রমধর্মী কোষের ক্ষেত্রে কোনও কোনও অংশ অনুপস্থিত থাকতে পারে, যেমন লোহিত রক্তকণিকা কোষে কোষকেন্দ্র থাকে না। মানুষের দেহ কয়েক শ রকমের কোষ নিয়ে গঠিত। যেমন স্নায়ু কোষ,রক্তকণিকা কোষ,ত্বকের কোষ বা যকৃৎ কোষ। আদর্শ কোষ বলতে এমন একটি প্রতীকী ও কাল্পনিক কোষকে বোঝায় যাতে অধিকাংশ কোষে প্রাপ্ত সমস্ত উপাদানগুলি বিদ্যমান থাকে। একটি আদর্শ প্রাণীকোষে চারটি উপাদান থাকে। যেমন কোষকেন্দ্র,কোষঝিল্লি বা কোষপর্দা,মাইটোকন্ড্রিয়া এবং কোষপঙ্ক। অন্যদিকে একটি আদর্শ উদ্ভিদকোষের উপাদান হল কোষকেন্দ্র,কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লি বা কোষপর্দা, কোষগহ্বর, কোষপঙ্ক, মাইটোকন্ড্রিয়া ও হরিৎ কণিকা।
কোষ যেই সজীব,প্রাণবাহী মাতৃপদার্থ নিয়ে গঠিত হয় তাকে প্রাণপঙ্ক প্রোটোপ্লাজম বলে। এটি খানিকটা পিচ্ছিল থকথকে পদার্থের মত অর্থাৎ কঠিন ও তরলের মাঝামাঝি কিছু। প্রাণপঙ্ককে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-কোষকেন্দ্র এবং কোষপঙ্ক। কোষপর্দার ভেতরে এবং কোষকেন্দ্রের বাইরে অবস্থিত প্রাণপঙ্ক অংশটিকে কোষপঙ্ক সাইটোপ্লাজম বলা হয়। কোষপঙ্কের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের জটিল অতিক্ষুদ্র সব কাঠামো থাকে যেগুলো সাধারণ আলোকীয় আণুবীক্ষণিক যন্ত্রে ধরা পড়ে না। তবে বৈদ্যুতিক আণুবীক্ষণিক যন্ত্রে এগুলির খুঁটিনাটি বড় আকারে দেখতে পাওয়া যায়। এই অতিক্ষুদ্র কাঠামোগুলিকে কোষীয় অঙ্গাণু বলে।
কোষীয় অঙ্গাণু নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। কোষের সবচেয়ে বড় অঙ্গাণুটিকে কোষকেন্দ্র নিউক্লিয়াস বলে। স্বল্পসংখ্যক কিছু ব্যতিক্রমী কোষ বাদে সমস্ত কোষে কোষকেন্দ্র থাকে। যেসব কোষে কোষকেন্দ্র থাকে না,সেগুলি সাধারণত মৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ উদ্ভিদের জাইলেম কলার কোষসমূহ। এগুলি বেশিদিন বাঁচে না যেমন লোহিত রক্তকণিকা। কোষকেন্দ্র কোষের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে। কোষকেন্দ্রের ভেতরে ডিএনএ নামক রাসায়নিক পদার্থের অণু নিয়ে গঠিত সুতার মত দেখতে কিছু উপাদান থাকে,যাদেরকে বর্ণসূত্র বা বংশসূত্র বলে অভিহিত করা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় ক্রোমোজোম। স্টেম সেলগুলোকে সমস্ত কোষের মা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা রক্ত,হৃৎপিণ্ড,স্নায়ু এবং ত্বকের কোষের মতো বিভিন্ন কোষের মধ্যে নিজে নিজে পুনর্জাগরণ ঘটনা এবং কখনও কখনও আলাদা করারও ক্ষমতা রাখে।
কিছু শারীরবৃত্তীয় বা ল্যাবরেটরির বৈশিষ্ট্যে কারণে এগুলো হৃৎপিণ্ডের পেশী কোষ বা অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উত্পাদনকারী কোষে পরিণত হয়ে যেতে পারে। যাই হোক, আমাদের হাতে আজ আর সময় নেই।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।