ডিসেম্বর ০১, ২০২০ ১৮:০০ Asia/Dhaka

গত পর্বে আমরা কেরমান জামে মসজিদ এবং এর সদর দরজাসহ মসজিদের বিচিত্র কারুকাজের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি।

মসজিদটির সদর দরজা এখন কেরমানের মহামূল্যবান স্থাপত্য কর্মের অন্যতম নিদর্শন। বিশেষ ধরণের উজ্জ্বল টাইলসের কারুকাজ আর নিপুন খোদাইকর্ম এখন ইতিহাসের সম্পদ। অন্যদিকে মসজিদের মেহরাবটিও দেখার মতো। মর্মর পাথরের উপরে কোরানের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি, আর তার পাশে টাইলসের উজ্জ্বল চোখ ঝলসানো সুন্দর সব কারুকাজের সঙ্গেও পরিচয় করানোর চেষ্টা করেছি। সবশেষে আপনাদের কথা দিয়েছিলাম যে আজকের আসরে কেরমান প্রদেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাতব পণ্য তামা শিল্পের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।  

বিশ্বের বড় বড় তামার খনিগুলোর একটি এই কেরমান প্রদেশেই অবস্থিত। এই খনি থেকে যে পরিমাণ তামা উত্তোলন করা হয়, তা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। আর তামা রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে ইরান। ফলে ইরানের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে কেরমানের এই তামার মজুদের গুরুত্ব অপরিসীম। দক্ষিণ-পূর্ব ইরানের অন্যতম প্রদেশ কেরমান। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই প্রদেশটির গুরুত্ব অপরিসীম। কেবল কেরমান প্রদেশেরই নয়, বরং গোটা ইরানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ প্রদেশের ভুমিকা যথেষ্ট গুরুত্ববহ। এর কারণ হলো বিশ্বের বড় বড় তামার খনিগুলোর একটি এই প্রদেশেই অবস্থিত।

এই খনি থেকে যে পরিমাণ তামা উত্তোলন করা হয়, তা দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানী করা হয়। আর তামা রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে ইরান। ফলে ইরানের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্যে এই তামার মজুদের গুরুত্ব অপরিসীম। তামা এমন একটি ধাতব পদার্থ যার মধ্য দিয়ে তাপ এবং বিদ্যুত পরিবাহিত হয়। তামাকে গলিয়ে যেকোন ধরণের আকৃতি বা ডিজাইন করা যায় সহজেই। তামা দৃঢ়, তবে ভঙ্গুর নয়। এইসব গুনের জন্যে তামার বিচিত্র ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন বৈদ্যুতিক ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী তৈরী, ভোগ্যপন্য তৈরী, গাড়ী, বাড়ী এবং পরিবহন শিল্পে তামার ব্যাপক ব্যবহার হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব ইরান থেকে উত্তর-পশ্চিম ইরান এবং আজারবাইজানের উপকন্ঠে এই তামার খনি রয়েছে।

তামার খনি নিয়ে কথা হচ্ছিলো আমাদের। খনিজ তামার প্রায় সব ধরনের তামাই ইরানে রয়েছে। কেরমানের তামার খনিটি কেরমান থেকে ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের জাগ্রোস পর্বতমালার কেন্দ্রে অবস্থিত। এই খনিতে ১২২ কোটি ত্রিশ লাখ টন তামার মওজুদ রয়েছে। এই মজুদ থেকে শতকরা ৬৯ ভাগ খাঁটি তামা উত্তোলন করা যাবে বলে অনুমান করা হয়। কেরমান প্রদেশের এই অর্থকরী খনিজ সম্পদ তামার গুরুত্ব উপলদ্ধি করে, ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর তামা শিল্পের প্রতি ব্যাপক মনযোগ দেয়া হয়েছে। ইরানী গবেষকরা দক্ষতার সাথে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে তামা উৎপাদনের কারখানা চালু করেছে।

তামা উৎপাদন কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন পাথর এবং খনিজ মাটি থেকে প্রায় ১ লাখ টন তামা, কিঞ্চিত পরিমাণ স্বর্ণ, রূপা ও সালফার পাওয়া যায়। দেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মেটানোর পর এই সব ধাতুর উদ্ধৃত অংশ বিদেশে রপ্তানী করা হয়। এই বাড়তি অংশের পরিমান মোট উৎপাদিত ধাতুগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ। ফলে প্রতি বছর ইরান এই তামা শিল্প রপ্তানী খাত থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। এতোক্ষণ কেরমান শহরের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগে সেখানকার অর্থকরী খনিজ সম্পদ তামা এবং তামা উৎপাদনের কারখানা সম্পর্কে কথা বললাম। কেরমানের আরেকটি প্রসিদ্ধ ও দর্শনীয় স্থানের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার ইচেছ ছিলো।

কেরমানের আরেকটি প্রসিদ্ধ ও দর্শনীয় স্থানের কথা বলছিলাম। এই স্থানটি হলো  বাম নগরী। আপনারা জানেন নিশ্চয়ই যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানে ভয়াবহ ভূমিকম্প এই ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এলাকাটিকে ধবংসস্তুপে পরিণত করেছে। এই বাম নগরী ইতিহাসের বহু চড়াই-উৎরাই বুকে লালন করে সমতল মাটির লালিমায় পুনরায় নিজের অস্তিত্ব ঘোষণা করছে। কেননা ইরান সরকার ঐতিহাসিক এই নগরীকে পুনরায় আগের ডিজাইনে নির্মাণ করছে। নগরটির কাজ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা কাজ হয়ে গেছে তবে এখনও বাকি আছে। আশা করা হচ্ছে অচিরেই আবারও মুখরিত হয়ে উঠবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায়।

এই বাম শহরটি আরেকটি কারণে সমগ্র বিশ্বে সুপরিচিত। সেটি হলো খুরমা খেজুর। বামে যে খুরমা উৎপন্ন হয় সেটি খুবই সুস্বাদু। এখানকার খুরমা তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। সেই সুবাদেই বামের পরিচিতি বিশ্বময়। তো বাম শহর আবারও তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে-এই প্রত্যাশা সকল কৌতূহলী পরিব্রাজকের। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ০১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ